প্রথমে নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ এবং পরে পুনর্নির্বাচনের জন্য বার বার আহ্বান জানালেও এখন সরকারের ১০০ দিনের পরিকল্পনা জানতে উৎসুক বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের সঙ্গে একের পর এক সাক্ষাতে এ বিষয়ে আগ্রহের কথা তুলে ধরছেন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা। সেই সঙ্গে সংলাপ আয়োজনের সম্ভাবনা কতটুকু, তাও বুঝতে চাইছেন তারা। সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সরকারের প্রথম ১০০ দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, কানাডার হিদার ক্রুডেন এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ উলকক। এদের প্রত্যেকেই গত এক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এসব দেশের পক্ষ থেকে হতাশাও প্রকাশ করা হয়। হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন ও গ্রেগ উলকক বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকে পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চান। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন উইলিয়াম হানা ও রবার্ট গিবসন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। হিদার ক্রুডেন এর আগে মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ দিন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রবার্ট গিবসন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পঙ্কজ শরণ। তিনি রবিবার বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পঙ্কজ শরণ গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পরে হাইকমিশনার জানিয়েছেন, দুই দেশের সরকারের মধ্যে চলমান সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সাক্ষাতে হিদার ক্রুডেন স্পষ্টভাবেই সরকারের ১০০ দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে সরকারের অবস্থানের বিষয়েও তিনি প্রশ্ন করেন। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচনের পর হতাশা প্রকাশ করে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা আরেকবার ব্যাখ্যা করেন হাইকমিশনার। তিনি এ ছাড়া সরকারের মন্ত্রীদের সংলাপ ও নির্বাচন বিষয়ে বক্তব্যের বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শাহরিয়ার আলম হাইকমিশনারকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যই 'চূড়ান্ত' বলে জানান। সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে বলা হয়, ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোই বাস্তবায়ন হবে আগে। প্রায় একই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে গ্রেগ উলককের সঙ্গে। উভয় বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়েও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকেও প্রায় অভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছেন কূটনীতিকরা। সূত্রমতে, দুই নেত্রীর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে চাইছেন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ ইতিবাচক একটি পরিস্থিতি দেখতে পেয়েছেন তারা। জানতে চাইলে ইউরোপের একটি দেশের মধ্য সারির এক কূটনীতিক বলেন, 'বিএনপির সংঘাত ও জামায়াত থেকে দূরে থাকা এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে ঢাকায় সমাবেশ করতে দেওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আবার উভয় নেত্রীর বক্তব্য থেকেও সংলাপের বিষয়টি উচ্চারিত হয়েছে। এ জন্য সংলাপের একটি পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে বলে আশাবাদী কূটনীতিকরা।' সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, এটি একটি রুটিন কাজ। নতুন সরকারের কাছে পরিকল্পনা জানতে চাওয়া কূটনীতিকদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় আসায় এ সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জগুলোও ভিন্ন। তাই এ বিষয়ে বাড়তি আগ্রহও আছে বলে জানান পশ্চিমা এই কূটনীতিক।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।