জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসিকে রাজনৈতিক উল্লেখ করা তা ঠেকানোর জন্য মুসলিম বিশ্বকে চাপ দিতে বলছে পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জামায়াত প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের পর বিবৃতি দিয়েছেন সেদেশের জামায়াতের আমির। বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো বিক্ষোভও প্রদর্শন হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এ বিষয়ে তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় আরও ১৩ জনের সঙ্গে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার দিন বিকালেই প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তান জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল। পরে রাতে পাকিস্তান জামায়াতের আমির সৈয়দ মুনায়ার হাসান একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের 'একটি মিথ্যা মামলা' দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় প্রথমে নিজামীর নাম না থাকলেও পরে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিজামীর বিরুদ্ধে দেওয়া আদালতের রায় এরই মধ্যে বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তান সরকার এবং অন্য সব মুসলিম শাসকের প্রতি এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সৈয়দ মুনায়ার হাসান। বলেছেন, কোনো 'সুস্থ-স্বাভাবিক' ব্যক্তি মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ আনতে পারেন না। জামায়াত নেতাদের বিচার করার পিছনে ভারতের 'হাত' রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দমনপীড়ন বন্ধে চাপ দিতে বলেছেন।
নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ : ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রী ভবনে বৃহস্পতিবার পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর ডেপুটি আমির খুরশিদ আহমাদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের ফাঁসি ও অন্যান্য দণ্ডাদেশ প্রদানের বিভিন্ন দিক পাকিস্তান সরকার খতিয়ে দেখবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খাজা সাদ রফিক উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের দি নিউজ পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বৈঠকে জামায়াত নেতারা প্রধানমন্ত্রীর নওয়াজের হাতে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের করা ১৯৭৪ সালের একটি চুক্তির নথি হস্তান্তর করেন। যাতে তিন দেশ ১৯৭১ সালের যুদ্ধের কদর্য দিক ভুলে যেতে ও ক্ষমা করে দিতে রাজি বলে উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে, তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি অনুসারে যুদ্ধের কোনো ঘটনায় কোনো আইনি বা শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জামায়াত নেতাদের আশ্বস্ত করে জানান, পাকিস্তান এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিচারের ঘটনায় উদ্বেগ এবং এ ঘটনায় বিশ্বের কারও বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত হবে না বলে মত প্রকাশ করেছে।
করাচিতে বিক্ষোভ : পাকিস্তানের গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে পাকিস্তানের জামায়াত নেতা-কর্মীরা করাচিতে বিক্ষোভ করেছে। করাচি জামায়াতের আমির হাফিজ নাইমুর রেহমান বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, 'পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য যারা নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন তাদেরই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।' সমাবেশে করাচি জামায়াতের নায়েবে আমির নাসরুল্লাহ শাজি 'পাকিস্তানের প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের জন্য' জামায়াত নেতা-কর্মীদের 'রক্ষায়' এগিয়ে আসতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।