আইনের শাসন আমাদের এই ভূখণ্ডে কখনো যেমন ছিল না, এখনো নেই। মাৎস্যন্যায়ের ঐতিহ্যবাহী এ ভূখণ্ডে সব পাল্টালেও পাল্টায়নি দুর্বৃত্তদের দাপট। মানব সভ্যতার উৎকর্ষতার এই যুগেও দুর্বৃত্তায়নের প্রভাব নানা ক্ষেত্রে অনুভূত। প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকার কারণে বাড়ছে প্রতারকদের দৌরাত্দ্য। প্রতিপক্ষকে জব্দ করার জন্য ভুয়া ওয়ারেন্ট ও জাল মেডিকেল সার্টিফিকেটকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পড়ে শত শত মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রেফতারের ভয়ে। এমনকি কোনো দোষ না করেও জেল খাটার ঘটনাও কম নয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি 'চিকিৎসা সনদ'র ওপর ভিত্তি করে জয়দেবপুরের নয়াপাড়ামনিপুরের বাসিন্দা মেজবাহ উদ্দিন শরীফের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয় রাজধানীর রূপনগর থানায়। পুলিশ গ্রেফতার করে শরীফকে। দেখা যায়, মামলার মূল ভিত্তি 'চিকিৎসা সনদ'ই ছিল ভুয়া। যার নামে ওই সনদ দেওয়া হয়েছে ওই নামে কোনো মেডিকেল অফিসার ঢামেকে নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, সনদটি ভুয়া। মেজবাহ উদ্দিন শরীফ জামিনে ছাড়া পেলেও তার জীবন তছনছ হয়ে গেছে। গ্রেফতারির কারণে তিনি অংশ নিতে পারেননি সহকারী জজ পদের নিয়োগ পরীক্ষায়। সম্প্রতি কাফরুল থানার পুলিশ বরিশাল জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৪ এর গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয় দক্ষিণ ইব্রাহিমপুরের একটি বাসায়। তারা আসামির বৃদ্ধ পিতার কাছে তার চার ছেলের খোঁজ জানতে চায়। তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করে। এক ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করেও নিয়ে যায়। বাকি তিন ছেলে গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। পরে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয় বরিশালে এই নামের কোনো ট্রাইব্যুনালই নেই। দেশের বিভিন্ন থানায় ভুয়া ডাক্তারি সার্টিফিকেটের বদৌলতে একের পর এক মামলা হচ্ছে। ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় গ্রেফতার হচ্ছে নিরীহ মানুষ। বিনা অপরাধে বছরের পর বছর জেল খাটার ঘটনাও ঘটছে। নামের মিল থাকায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বদলে আরেকজনকে গ্রেফতার করে সাজাভোগে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটেছে এই 'সব সম্ভবের' দেশে। থানা পুলিশের যোগসাজশেই অপরাধী চক্রের সদস্যরা একের পর এক অপরাধ করে চললেও কোনো প্রতিকার নেই। আইনি ব্যবস্থা, মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে কার্যত নির্বিকার। এর চেয়ে লজ্জার আর কিইবা থাকতে পারে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।