আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারত চেয়েছে ২২টি বাংলাদেশ দেবে ৪টি

ভারতের ২২টি বর্ডার হাট স্থাপন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ৪টির অনুমোদন দিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সায়দাবাদ-নলিকাটা, একই জেলার রিংকুতে এবং ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার ভূইয়াপাড়া-শিববাড়ী এই ৪টি স্থানে বর্ডার হাট স্থাপন হবে।সীমান্ত এলাকায় এসব বর্ডার হাট স্থাপন হলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা তৈরি পোশাক, মেলামাইন ক্রোকারিজ, ফলের জুস ও টয়লেট্রিজ জাতীয় শিল্প পণ্য ছাড়াও আরও ১২ ধরনের কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্ডার হাট সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি অনুসারে উভয় দেশের সীমান্তে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে স্থাপিত হবে এই হাটগুলো। নিজ নিজ দেশের স্থানীয় মুদ্রায় সীমান্ত হাটে বাণিজ্য করতে পারবে উভয় দেশ। বর্ডার হাট পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য উভয় দেশের বাণিজ্যিক প্রতিনিধি ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অংশগ্রহণে একটি কমিটি থাকবে। কমিটি প্রতি ২ মাস পরপর বৈঠকে বসে হাটের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করবে। বর্ডার হাট স্থাপনের বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, এর ফলে দুই দেশের সীমান্ত এলাকার লোকজন তাদের পণ্য সহজে বেচা-কেনা করতে পারবে। এছাড়া সীমান্ত এলাকার ইনফরমাল বাণিজ্য (চোরাচালান) অনেকাংশে কমে আসবে। গত বছরের মে মাসে দুই দেশের সীমান্তে ২২টি বর্ডার হাট স্থাপনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় ভারত। দেশটির হাইকমিশন যে ২২ বর্ডার হাটের তালিকা দিয়েছে এর সবগুলো পয়েন্ট ছিল বাংলাদেশ ও মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত এলাকায়। প্রস্তাবিত পয়েন্টগুলো হচ্ছে : মহেন্দরগঞ্জ-নান্দিপুর, পুরাখাসিয়া, ডালু-কিলাপাড়া, ঘাসুয়াপাড়া, বাতাবার-কাপসিপাড়া, শিববাড়ী, বাঘমারা, মাহাদেব-মহেশখোলা, নালিকাতা-ঘুমাঘাট, বারসোরা-রিংতুয়া, শেল্লা-ভোলাগঞ্জ, পাঞ্জিবাজার-টুকা, হাট থাংসি-টুকা, থিমসাই-নয়াবাজার, লিংখেত, ডাউকি, মুক্তাপুর, হারাই ও দোনা। ভারতের তালিকা পেয়ে সংশ্লিষ্ট সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি এবং জেলা প্রশাসকদের মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে জেলা প্রশাসক ও বিজিবির মতামত পর্যালোচনা করে ওই চারটি স্থানে বর্ডার হাট স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত অন্য হাটগুলোর মধ্যে কয়েকটি হাট দুর্গম এলাকায় হওয়ায় এবং যোগাযোগ সমস্যা ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় লাভজনক না হওয়ায় প্রস্তাব বিবেচনা করেনি সরকার। বিশেষ করে মিজোরাম সীমান্তে চারটি হাট স্থাপনের প্রস্তাবের ব্যাপারে বিজিবি ও জেলা প্রশাসনের মতামতে বলা হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জনবসতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশ মিজোরাম সীমান্তের কোনো স্থানে বর্ডার হাট স্থাপনের সুযোগ নেই। ময়মনসিংহের গোবড়াকুড়া এবং ভারতের গাছুয়াপাড়া সীমান্তে বর্ডার হাট স্থাপনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা কালে দেখা যায়, ওই স্থানে একটি এলসি স্টেশন চলমান রয়েছে। এনবিআর প্রতিনিধি এলসি স্টেশন সংলগ্ন স্থানে বর্ডার হাট না দেওয়ার সুপারিশ করেন। শেরপুর জেলার শ্রীবর্দ্দীর খাড়ামোড়ার পুরাখাসিয়া সীমান্তে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনবসতি কম থাকায় প্রস্তাবিত বর্ডার হাট বিবেচনা করা হয়নি। লালমনিরহাট জেলার মোগলহাট সীমান্তে হাট স্থাপনের জন্য চিহ্নিত এলাকাটি ধরলা নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়নি। এছাড়া ঝাউরানী-কালিরহাট এবং বড়খাতা-বুড়িমারী বিওপি সীমান্তে বর্ডার হাট স্থাপনের প্রস্তাব কূটনৈতিক চ্যানেলে না আসায় বিবেচনা করেনি সরকার। এ দুটি সীমান্তে বিএসএফ বিজিবির মাধ্যমে হাট স্থাপনের প্রস্তাব পাঠায়। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত 'মোড অব অপারেশন অব বর্ডার হাট' অনুযায়ী এ ধরনের প্রস্তাব আসতে হয় কূটনৈতিক চ্যানেলে।

প্রসঙ্গত, দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দিলি্লতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর বর্ডার হাট স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ ও ভারত। ওই সমঝোতা চুক্তির আওতায় ২০১১ সালের ১৮ জুলাই কুড়িগ্রাম সীমান্তের বালিয়াবাড়িতে ১ম এবং ২০১২ সালের ১ মে সুনামগঞ্জের ডলারোতে ২য় বর্ডার হাট চালু হয়। এছাড়া ত্রিপুরা সীমান্তে আরও ৪টি বর্ডার হাট স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে এবং ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নেত্রকোনার বিভিন্ন পয়েন্টে আরও ৫টি বর্ডার হাট স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.