প্রাচীন নাম ব্রহ্মদেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র মিয়ানমার। মিয়ানমার নামটি এসেছে ম্রনমা নাম থেকে। রাজধানী ইয়াঙ্গুন। বার্মার গণতান্ত্রিক সরকারের উৎখাতের পর সেখানকার সামরিক সরকার বার্মার নতুন নামকরণ করে "মায়ানমার"।
মিয়ানমারের মোট আয়তন ৬৭৬,৫৫২ বর্গকিলোমিটার। মায়ানমারের পশ্চিমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ এবং ভারতের মিজোরাম, উত্তর-পশ্চিমে ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুর অবস্থিত। মিয়ানমার বাংলাদেশের এতো কাছের প্রতিবেশী হলেও বাংলাদেশ তাকে নিয়ে মাথা ঘামায়নি। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তা চোরাচালানের মধ্যেই স্থির ছিল ও বর্তমানেও আছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী বহুলভাবে টেকনাফে এবং বিচ্ছিন্নভাবে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রাপ্য।
মিয়ানমারের লুঙ্গি, স্যান্ডেল, ফ্লাস্ক এবং অন্যান্য দ্রব্য দামে সস্তা ও টেকসই হওয়ার কারণে এ দেশে বেশ স্থায়িত্ব পেয়েছে, সঙ্গে জনপ্রিয়তাও।
১৩ শতকের দিকে মায়ানমারে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন রাজ্য সৃস্টি হয়। এদরে মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: আভা, আরাকান, হানথাবতী প্রভৃতি। ১৮শ শতকে ব্রিটিশরা বার্মা দখল করে নেয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৬২ সালে দেশটিতে প্রথম সামরিক সরকার ক্ষমতায় অসীন হয়। বর্তমানে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অনুপ কুমার চাকমা। নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন(পুর্বের নাম আরাকান)রাজ্যের একটি জেলা শহরের নাম মংডু। পাঁচ লক্ষাধিক জনসংখ্যার মধ্যে ৭৫% মুসলিম, বাকিরা বৌদ্ধ ধর্মামবলী মগ জাতির বসবাস। মংডু প্রকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি নাহলেও শাল-শেগুন-চন্দন গাছের অত্যন্ত সুন্দর বাগান ঘেড়া শহর, অত্যন্য আকর্ষনীয় স্থান।
মিয়ানমারের মানুষ মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। হাজার হাজার বুদ্ধ মূর্তির দেশ। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পাহাড়াঞ্চলে চাকমাসহ অনেক সংখ্যালঘু জাতির আদিবাস এ মিয়ানমার।
মূল্যবান সেগুন ও বিষুবীয় গাছপালায় ভরা বন মায়ানমারের শতকরা ৪৯ ভাগের বেশি এলাকা জুড়ে রয়েছে। বর্মী ভাষা মিয়ানমারের সরকারী ভাষা।
বর্মী ভাষাতে মিয়ানমারের প্রায় ৬০% লোক কথা বলেন। এছাড়াও মিয়ানমারে স্থানীয় আরও প্রায় ১০০টি ভাষা প্রচলিত।
বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কের ফাটল ধরে ২০০৮ সালের নভেম্বরে| এ সময় মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধজাহাজের প্রহরায় বিতর্কিত সমুদ্রসীমায় তেল অনুসন্ধানের কাজ চালায় বিদেশি সংস্থা। বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরও বিতর্কের সমাধান হয়নি। মিয়ানমারের দাবি ছিল, বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমা বাংলাদেশের জন্য নির্দিষ্ট হয়নি এবং বাংলাদেশ যে অঞ্চল দাবি করছে, মূলত তা বিতর্কিত সমুদ্র অঞ্চল।
পরে বাংলাদেশ দুটি নেভি জাহাজ পাঠানোর পর মিয়ানমার যুদ্ধজাহাজ নিজেদের অঞ্চলে চলে যায়। সম্ভবত আলোচ্য সময়ে চীনের হস্তক্ষেপে মিয়ানমার পশ্চাৎপসরণ করে। এ ঘটনার পর ভারতের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের দাবিকৃত সমুদ্রসীমা বিতর্কিত বলে দাবি করা হয়। বাংলাদেশ দুদেশের সঙ্গে আলোচনা করার পরও মিয়ানমার ও ভারত নিজেদের দাবি থেকে সরে আসেনি।
মিয়ানমার কৃষিপ্রধান দেশ।
দেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি লোক কৃষিকাজ করে। দেশটির উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে পাহাড় আর পাহাড়। দেশটির গড় তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মিয়ানমারে প্রায় ৫০ বছর ধরে সামরিক শাসন চলে। ২০০১ সালে প্রথম বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে।
১৯৮৯ সালে দেশটির জান্তা সরকার ‘বার্মা’ নামটি পরিবর্তন করে সরকারিভাবে ‘মিয়ানমার’ নামকরণ করে। পিউ নামের উপজাতিরা ১ম শতকে বার্মা এলাকাতে দক্ষিণ দিকের ইরবতী ভ্যালি দিয়ে প্রবেশ করে। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে পিউদের আগমন ঘটে। মিয়ানমারের অভ্যন্তর ভাগে কেন্দ্রীয় নিুভূমিগুলো মূলত সরু ও দীর্ঘ। সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের নাম ভিক্টোরিয়া।
১৮২৮ সালে বার্মা ইংরেজদের শাসনে চলে যায়। তবে ১৯৩৭ সালে বার্মা স্বায়ত্তশাসন লাভের পর বৌদ্ধদের পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক রূপ নেয় এবং তারা প্রায় ৩০ লাখ মুসলিম হত্যা করে।
চীন হলো মহাযান বৌদ্ধধর্মের মাধ্যমে প্রভাবিত। কিন্তু মিয়ানমার হলো থেরাবাদী বা হীনযান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ধর্মের দিক থেকে একটি পুরনো হিসাব অনুসারে মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশ হলেন থেরাবাদী বৌদ্ধ।
পাঁচ শতাংশ হলেন প্রেতাত্মার পূজারি (Animists), চার শতাংশ হলেন মুসলমান, চার শতাংশ হিন্দু আর তিন শতাংশ হলেন খ্রিষ্টান। মিয়ানমারে যে কেবল ধর্ম নিয়ে বিরোধ আছে, তা নয় ; ভাষাগত জাতিসত্তা নিয়েও আছে বিশেষ বিরোধ। মিয়ানমারে কখনো ইসলাম প্রচার হয়নি, যেমন হতে পেরেছে ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের সাথে লাগোয়া দেশ মালয়েশিয়ায়। মিয়ানমারের মুসলমানেরা হলো ব্রিটিশ শাসনামলে ভারত থেকে যাওয়া। মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর ভয়াবহ হামলার কথা নিয়ে প্রচ্ছদ কাহিনী লেখা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক Time পত্রিকায় (১ জুলাই ২০১৩ সংখ্যায়)।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কোনো নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকি সব ধরনের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। আমাদের স্বার্থেই মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা প্রয়োজন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তা বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়ে নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।