আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীর কাছে সকল রোহিঙ্গা হস্তান্তরের দাবি

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ার দুইটি আশ্রিত ক্যাম্পের প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় থাকা শরণার্থী ব্যতিত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্ গাকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করার দাবি উঠেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকৃত মিয়ানমার নাগরিকদের বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বরত সীমান্তরক্ষীদল বিজিবি আটক করে সে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে বটে ওসব রোহিঙ্গারা ফের অনুপ্রবেশ করছে এদেশে। অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর কারণে মিয়ানমার নাগরিকরা পুনরায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করছে দেশের সীমান্ত অঞ্চলের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে। সোমবার দুইদিনের সরকারী সফরে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানানোর পর স্থানীয়ভাবে এ দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠছে।

মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে উজ্জীবিত স্থানীয় জনসাধারণ।

অভিজ্ঞমহল বলেন, মিয়ানমারের মতো আমাদের দেশে কাঁটাতারের ঘেরা নেই। অরক্ষিত সীমান্তের যে কোন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। সীমান্তরক্ষী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখে ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমার নাগরিকরা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মিশে যাচ্ছে তারা স্থানীয় লোকদের সঙ্গে।

কতিপয় সুবিধাভোগী জনপ্রতিনিধি একাধিক মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় ইতোপূর্বে কৌশলে ভোটার তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করতেও সক্ষম হয়েছে ওইসব মিয়ানমার নাগরিকরা। দেশে বিভিন্ন সময় আটক হওয়া এবং পরবর্তীতে ফেরত পাঠানো রোহিঙ্গাদের ফের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তরক্ষীদল বিজিবি আটক রোহিঙ্গাদের এক পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠালেও অন্য পয়েন্ট দিয়ে পুনরায় অনুপ্রবেশ করে মিশে যাচ্ছে এদেশের গ্রামগঞ্জে ও লোকালয়ে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন সিনের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফেরত নিতে অনুরোধ জানান। সচেতন মহলের মতে, বর্তমানে অবৈধভাবে বসবাসকারী মিয়ানমার নাগরিকদের খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।

কেননা মৌলবাদী চক্র ও জঙ্গীগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয়দের মতো বাড়ি-ঘর তৈরি করে বসবাস করে চলছে। তাঁদের মতে ফেরত পাঠানোর পরিবর্তে আনুষ্ঠানিকভাবে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে নাগরিক হস্তান্তর প্রক্রিয়াটা চালু করা দরকার। কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা শেষে এটি চালু হলে সেই দেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অনেকটা হ্রাস পাবে।
প্রসঙ্গত কিছুদিন আগে রোহিঙ্গা দরদী একটি রাজনৈতিকদল ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর উস্কানি এবং আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ আরএসওর আর্থিক সহযোগিতায় সরকারের ওপর ওই চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ দাবির বিরুদ্ধে তখন কক্সবাজারে মানববন্ধন, র‌্যালি করেছে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে ২৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। তবে শিবিরের বাইরে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় কমপক্ষে ৪ লাখসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ অবৈধ রোহিঙ্গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বাংলাদেশ এমনিতে জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ। তার ওপর লাখ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা সইতে হচ্ছে নীরবে।

মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন মহলের মতে, রোহিঙ্গারা বর্বর, নিষ্ঠুর, অসভ্য, চরিত্রহীন জাতি। আমাদের দেশে আশ্রিত হয়েও তারা আমাদের আনসার, পুলিশ ও স্থানীয় জনগণকে হত্যা ও আহত করছে অহরহ। তারা এখানে অবস্থান করে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের পক্ষে গোয়েন্দাবৃত্তি করে থাকে। মাদকদ্রব্য ও অস্ত্রসহ অবৈধ জিনিষপত্র চোরাচালানে জড়িত ওসব রোহিঙ্গারা ডাকাতি, খুন, রাহাজানিসহ যাবতীয় অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে সর্বদা। তারা আমাদের দেশের আবহমান সংস্কৃতিকে নিত্য কলুষিত করছে।


সম্প্রতি সৃষ্ট রোহিঙ্গা-রাখাইন জাতিগত দাঙ্গাকে পুঁজি করে জামায়াত-শিবির ও স্বার্থান্বেষী মহল আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল। ওসময় কক্সবাজার জেলা সদরসহ সীমান্ত এলাকার জনগণ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রশাসনের সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান, প্রতিদিন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ ছাড়াও সীমান্ত এলাকায় বিজিবি, কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। শরণার্থী ক্যাম্পের চারপার্শ্বে সীমানা প্রাচীর না থাকায় বিভিন্ন এলাকায় তারা অপরাধ সংঘটিত করে অনায়াসে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে বসবাস করছে। এছাড়া ২টি রেজিস্ট্রাট ক্যাম্পে ও দুটি বস্তিতে অবস্থানরত প্রায় দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বিনা বাধায় ক্যাম্প-বস্তি থেকে বের হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সেচ্ছায় যাতায়াত ও সুযোগ বুঝে দেশের গোপন তথ্য পাচার করছে দেশ-বিদেশে থাকা জঙ্গীদের এবং মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীসহ বহির্বিশ্বে। মৌলবাদী চক্র ও জঙ্গীগোষ্ঠীর সহযোগিতায় রোহিঙ্গারা অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করে থাকে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল, ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ-কম্পিউটার এবং শক্তিশালী ওয়াকিটকি।

অনেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব, দুবাই, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, লন্ডনসহ ইউরোপ আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশী পরিচয়ে অপরাধ সংঘটিত করে ক্ষুণœœ করছে এ দেশের ভাবমূর্তি। যার কারণে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে বলে অভিমত প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। কিছুদিন পূর্বে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অভিযান চালিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু কিছু মোবাইল ফোন উদ্ধার করলেও পরবর্তীতে ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার চাপের মুখে অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। রোহিঙ্গা দরদী মৌলবাদী চক্রের সহযোগিতায় রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।


আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন অনুসারে কোন রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প থেকে বের হলে ইনচার্জের লিখিত অনুমতির প্রযোজন হয়। কিন্তু ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ওই নিয়ম মানছে না মোটেও। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে কক্সবাজার, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম ও নানুপুর এলাকায় গিয়ে জঙ্গী নেতাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করে চলছে। রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে এদেশে বসবাস ও বাংলাদেশী বলে দাবি করে জাতীয় সনদ সংগ্রহ এবং আলিশান দালানে বসে এদেশের খেয়ে তারা দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রসহ মৌলবাদী চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন নাশকতা মূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর ভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রোহিঙ্গা বসতি।

ইতোমধ্যে ৪ হাজার একর বনভূমির বৃক্ষ নিধন করে ফেলেছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা মৌলবাদী সমর্থিত একাধিক রাজনৈতিকদলের এবং আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের (এআরই) ক্যাডারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা, নাশকতা ও খুন-খারাবি করে চলছে। গোয়েন্দাসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে ধরা পড়েছে অনেকে। সর্বশেষ গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে রামু বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও বড়ুয়াপল্লীতে হামলা চালিয়েছে রোহিঙ্গা জঙ্গীরা।

যা পরবর্তীতে সরকারীভাবে গঠিত টিমের তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়ে উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার ও বান্দরবানে স্থাপিত মাদ্রাসা, বিভিন্ন পাহাড়ে ট্রেনিং সেন্টার ও সংগঠন পরিচালনার অর্থ যোগান দিতে তারা বিভিন্ন রাষ্ট্রের অনুদান সংগ্রহ করে থাকে। জঙ্গী তৎপরতা চালানোর লক্ষ্যে আয়ের উৎসের জন্য বিদেশে জঙ্গীগোষ্ঠীর শীর্ষ নেতারা তাদের সংগঠন ছাড়াও কক্সবাজার-বান্দরবানে প্রতিষ্ঠিত রোহিঙ্গা মৌলভী দ্বারা পরিচালিত কয়েকটি মাদ্রাসার নামেও অর্থ সংগ্রহ করে। কতিপয় জঙ্গীদের অর্থের বিনিময়ে কক্সবাজার ও বান্দরবানের ক্ষমতাসীন দলের গুটিকয়েক নেতা সহযোগিতা দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। রিয়াদে থাকা জঙ্গী নেতাদের তৎপরতায় সৌদিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে রোহিঙ্গাগোষ্ঠী জন্য সাহায্য নিয়ে আসা বহুজঙ্গী নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে রোহিঙ্গা দরদী মৌলবাদী রাজনৈতিক দল।

বিদেশ থেকে আসা ওই টাকা বিলি-বণ্টন করা হয়ে থাকে কক্সবাজার শহরের বসবাসকারী দুইজন জঙ্গীর মাধ্যমে। জঙ্গীদের নতুন সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের এবং জামায়াতে আরাকানের নেতা হাফেজ জাবের, আবু ছালেহ, আবু আবদুলাহ ছিদ্দিকী, রাশেদ, আবু কাদের, ইয়াহিয়া, মোহাম্মদ সায়েদ, রুহুল আমিন, মনসুর ও আবদুল রশিদসহ অনেকে ভুয়া ঠিকানায় বাংলাদেশের জাতীয় সনদ নিয়ে কক্সবাজারে গোপনে বসবাস এবং ট্রেনিং সেন্টারে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্রটি আভাস দিয়েছে। কক্সবাজার জেলার সচেতন মহলের মতে, শীঘ্রই ওদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানোর দাবি উঠেছে সচেতন মহল থেকে। সুত্র
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.