------
এক.
জায়গাটা বেশ নীরব। কোন কোলাহল নেই। দু'একটা ঝরাপাতার মর্মর শব্দ আর রং বদলানো গিরগিটি ছুটে চলার শব্দ ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। চারপাশটা বেশ পরিপাটি। মাঝে মাঝে বাগানের সরু পথ ধরে টুংটাং বেল বাজিয়ে চলে যায় সাইকেল আরোহীরা।
বাগানের যে পাশে বাংলোটা, ঠিক তার পশ্চিম পাশেই একটি কৃত্রিম ঝর্ণাধারা। বাগানের মালী, বাংলোর পরিচারক ছাড়া তেমন লোকজন নেই। এই বড্ড দুপুর বেলায় বাংলোর দরোজায় ক্রিংক্রিং শব্দ।
হকার। খবরের কাগজের হকার দারোগ আলী।
সাইকেলের ঘন্টা বাজান এমনি করেই। উনি সাইকেলকে বাই-সাইকেল বলতে নারাজ। বাঙালি হয়ে উঠার চেষ্টা করছেন। বেশি স্বাচ্ছন্দের শব্দ তার কাছে 'দ্বি-চক্রযান'।
শহর থেকে এই বাংলো আঠারো কিলোর পথ।
এই বাংলোতে খবরের কাগজ পৌঁছোয় ঠিক মধ্য দুপুরে। কোনোদিন বিকেলে। ইতোমধ্যে দেশে ঘটে যায় কতশত ঘটনা। মিটিং, মিছিল, খুন, অপহরণ, সংবর্ধনা, নারী নির্যাতন, টেন্ডারবাজি আরো কতকিছু! নতুন নতুন খবরের জন্ম হয়। ছাপাখানার প্লেটগুলো ভরে ওঠে নতুন খবরের শিরোনামে।
দারোগ আলীই এ বাংলোতে নিয়মিত খবরের কাগজ পৌছান। বয়স তার ষাটের কাছাকাছি। সকাল থেকে খবরের কাগজ বিলি করেন-আর সবশেষ খবরের কাগজটি পৌঁছায় এই বাংলোতে।
দুই.
বাংলোর অদূরে বেশ ক'টি পুরাতন সেগুন গাছ। যুগ যুগান্তরের ইতিহাসের নীরব স্বাক্ষী।
গাছের দুটো মোটা শিকড় চলে গেছে বাগানের সরু পথ বরাবর। এ জায়গাটায় আসলে সাইকেল আরোহীদের একটু জোড়ে ব্রেক কষতেই হয়।
ওপাশে সারি সারি মেহগিনি। দেবদারু গাছগুলো কেটে ফেলেছে বেশ কয়েক বছর আগে। প্রচন্ড ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল এখানকার অনেক গাছ।
দেবদারু যুগল গুলো তখন হারিয়ে গেছে। সে জায়গা দখল করেছে যুগল যুগল বকুলের গাছ।
বকুলতলা থেকে মিনিট পাঁচ এগুলে চোখ পড়ে অনেকগুলো প্রাচীন সমাধি। সমাধি ফলক গুলোর এফিটাফ মুছে গেছে। সন তারিখ কোনকিছুই ভালো বুঝা যায়না।
জরাজীর্ন ফলকে শ্যাওলার আস্তরন। এখানে আসলে এক নির্জন অনুভূতি জাগানিয়া পরিবেশ স্মরন করিয়ে দেয় জীবনের বর্ণিল বারতার শেষ অনুক্ষণ এখানেই।
একটি সমাধি ফলকের এফিটাফের কিছু লেখা সহজেই পড়া যায়। কিছু অক্ষর খসে পড়ে গেলেও পড়তে অসুবিধে হয়না। এটা বুঝাও যাচ্ছে এ লেখাগুলোর বয়স অনেক কম এ সমাধি ফলকের চেয়ে।
মূল লেখাগুলো ইংরেজিতে।
এফিটাফ
১০/১০/১৭৯৪
শুধুই শ্যামল ঘাস
এ পুত:কবরে রচিয়াছে
এক দৈন্যের ইতিহাস।
'তোমার কীর্তি মনে পড়ে বারংবার
শিয়রে নাই শিলালিপি
পরিচয় জানাবার। '
বাকী অংশ আগামীকাল
(চলবে.....)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।