তীব্র দাবদাহের কারণে কয়েক দিন ধরে অধিক হারে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণী-পেশার মানুষ। ঢাকার মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে গ্রীষ্মকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ জন ভর্তি হচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন এখানে ভর্তি হচ্ছেন পাঁচ শতাধিক রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছে, অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতার কারণে ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি সংকট, পচনশীল খাবার ও রাস্তার অস্বাস্থ্যকর খাদ্য-পানীয় গ্রহণের কারণেও মানুষ ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
জানা যায়, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। তবে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না বলে আশ্বস্ত করেছে আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ। আইসিডিডিআরবির ভর্তি বিভাগ থেকে গতকাল পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে এ হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল সাড়ে পাঁচ শরও অধিক। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ৪৩৭ জন।
মঙ্গলবার এ সংখ্যা ছিল ৪৩৮। বর্তমানে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন। বাড়ানো হয়েছে বেডের সংখ্যা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালে আলাদা তাঁবু বসানো হয়েছে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে ইমারজেন্সি, শিশু, মহিলা, পুরুষ ওয়ার্ড এবং শর্ট ও লং স্টে ইউনিটের সব বেডই এদিন পরিপূর্ণ দেখা যায়।
সেখানে শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী এবং বয়স্ক সব শ্রেণীর রোগীই ভর্তি হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত আইসিডিডিআরবিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কোনো রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগই ডায়রিয়ার সঙ্গে বমি হওয়ায় এখানে ভর্তি হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবির চিকিৎসক ড. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, গরমকালে মানুষ বেশি পানি পান করে। আর এ সময় বিশুদ্ধ পানি পান না করার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তা ছাড়া গরমে খাবার শীঘ্রই নষ্ট হয়ে যায়। এর বাইরে রাস্তার খোলা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের কারণেও অনেকে বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া হচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কের কিছু নেই। বিশেষজ্ঞরা জানান, এ সময় রাস্তায় বিক্রি হওয়া আখের রস, লেবুর শরবত ইত্যাদি পানীয় পান করায় ডায়রিয়া বেশি হয়। কারণ এসব পানিতে ব্যবহৃত অপরিষ্কার বরফ যা মাছের আড়তে ব্যবহৃত হয় পরে তা শরবতে ব্যবহার করা হয়।
তা ছাড়া শরবতে ব্যবহৃত পানিও বিশুদ্ধ নয় বলে জানা যায়। রাস্তার খোলা খাবার বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের শরবত ও পানীয় না খাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। সেই সঙ্গে রান্না করা খাবার দ্রুত খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। আইসিডিডিআরবি কর্র্তৃপক্ষ জানায়, মার্চে এ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৫৫৮। আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম।
বাকি এক-তৃতীয়াংশ রোগী বয়স্ক। দরিদ্র রোগীদের অনেকের রেফ্রিজারেটর না থাকায় তাদের রান্না করা খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে পড়ছে। আর এ খাবার খেয়ে তারা সহজেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে শর্ট টাইম ও লং টাইম এ দুই পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিয়ে অনেক রোগীকে রিলিজ দেওয়া হচ্ছে।
প্রয়োজনে কাউকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক নয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।