অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ভেঙে পড়েছে নগরীর নালা-নর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। পুরান কিংবা নতুন ঢাকা সব এলাকার বাসিন্দাদেরই এ কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বনানী, গুলশান ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকায় এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে নালা-নর্দমা ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে তুলনামূলক কম উন্নত এলাকাগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নতুন ঘর-বাড়ি।
কিন্তু ঢাকা ওয়াসা-সিটি করপোরেশন সে অনুপাতে নাগরিকদের স্যুয়ারেজ লাইন ও নালা-নর্দমার সুবিধা দিতে পারছে না। এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, জলাবদ্ধতার কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, ঘটছে মশার বংশবৃদ্ধি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর তথ্যে, ঢাকা শহরের গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনাসহ অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের ৬০ শতাংশ মাত্র সরাতে পারে সিটি করপোরেশন। বাকি ৪০ শতাংশ জনবল স্বল্পতাসহ নানাবিধ কারণে সরাতে অক্ষম। আর এ ময়লাগুলো পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী ড্রেন ও নালা-নর্দমায় পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।
অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে শহরের রাস্তাঘাট। এতে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। গত ৩ এপ্রিল রাতে বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। এর কারণ ড্রেন ও নালা-নর্দমাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে ময়লা জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, তাদের এলাকার ড্রেন ও নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না।
এ কারণে যেমন উৎকট দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়। অন্যদিকে মশার উৎপাতও সহ্য করতে হয়। মিরপুর কালশী রোডের সড়কগুলোরও বেহাল দশা। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার কারণে নালা-নর্দমা আটকে যায়। আর ময়লা পানি প্রধান সড়কে উঠে এলাকাবাসীর ভোগান্তির সৃষ্টি করে।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, শেষ কবে তারা সিটি করপোরেশনের লোকদের ময়লা পরিষ্কার করতে দেখেছেন তা মনে নেই। অধিকাংশ নর্দমাগুলো ঢাকনাবিহীন অবস্থায় থাকে। সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, প্রতিবছর নালা-নর্দমা পরিষ্কারের নামে ময়লা তুলে তা পাশেই ফেলে রাখে। এতে ময়লা আবারও আগের জায়গায় পড়ে যায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উত্তরা মডেল টাউনের অবস্থা আরও শোচনীয়।
এখানের প্রধান সমস্যার একটি হচ্ছে স্যুয়ারেজ সমস্যা। পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থাও যাচ্ছেতাই। এলাকাবাসী জানান, ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। বর্জ্য অপসারণ ও ড্রেন পরিষ্কারের জন্য উত্তরা কল্যাণ সমিতির ৪ নম্বর সেক্টরে ১৫ জন কর্মী ও ডিসিসি কর্তৃক নিয়োজিত ক্লিনাররা পরিষ্কার কাজে ব্যস্ত থাকার পরও এলাকাবাসী কোনো সুফল পাচ্ছে না। উত্তরার কভার্ড ড্রেনের পরিবর্তে আনকভার্ড ড্রেন ব্যবহার করায় এ সমস্যা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মহাসচিব ড. আবদুল মতিন বলেন, নগরীর কোথাও পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। সারফেজ ড্রেনেজ সিস্টেমের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের অন্যদিকে আন্ডার গ্রাউন্ড ও স্যুয়ারেজ লাইনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। কিন্তু উভয় প্রতিষ্ঠানই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তিনি এ জন্য সরকারকে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির তাগিদ দেন। এদিকে নগরীর নালা-নর্দমা ও ড্রেন পরিষ্কারে অনিয়মের ক্ষেত্রে জনবল স্বল্পতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন সিটি করপোরেশন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, যে এলাকার ড্রেনে ময়লার ওজন বেশি সে এলাকার ময়লা পরিষ্কারে ঠিকাদাররা তত বেশি আগ্রহী। কারণ ওজন বেশি হলেই ঠিকাদাররা টাকা বেশি পাবেন। সাধারণত সিটি করপোরেশনের প্রতিটি জোনে ড্রেন পরিষ্কারের জন্য ২০ থেকে ২৫ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকেন। কিন্তু এ সংখ্যক কর্মী দিয়ে বিশাল এলাকার ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার করা কঠিন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)-এর প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা বলেন, প্রধান সমস্যা হচ্ছে অপ্রতুল জনবল।
স্বল্প পরিমাণ জনবল দিয়ে এত সংখ্যক ড্রেন ও নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা অসম্ভব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।