আমি জানি আপনি ভালো । কিন্তু আমি আপনার মত ভালো না ! কেন জানি মনে হয় আমি কারো যোগ্য না - একটা ছোট্ট গল্প পড়ে দেখেন হয়তো ভালো লাগতে পারে । আপনার মনকে স্পর্শ করতে পারে । গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক । হয়তো বাস্তবার সাথে মিল থাকতে পারে তার জন্য আর আমার ভুলের জন্য ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।
অপ্রাপ্তি -
অলক অনেক চঞ্চল ছেলে না হলেও তার কিছু ভালো লাগা আছে , প্রতিটা মানুষের যেমন নিজের একটা পৃথিবী থাকে , অলকেরও তেমন একটা পৃথিবী আছে । সে ভালোবাসে খোলা আকাশ দেখতে , আকাশের বুকে ভেসে যাওয়া মেঘ গুলো অনেক আনন্দ দেয় অলক কে । গীটার আর প্রিয় কিছু গান , বন্ধুদের সাথে আড্ডা , আর মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়ানো তার শখ । থাকে না মানুষের অদ্ভুত কিছু ভালো লাগা , অনেকটা সে রকমই । মাঝে মাঝে আপন মনে গান করে অলক বন্ধুদের সাথে নিয়ে ।
সেদিন ও খোলা আকাশ দেখছিল একা একা হঠাৎ এই বন্ধুদের মধ্যে লিয়ন এর ফোন , ওপাশ থেকে ভেসে আসল একটা কথা চলে আয় । মানে তাদের পরিচিত সেই আড্ডার স্থানে ,
অলক ও আড্ডা দিতে অনেক পছন্দ করে তাই দেরি না করে সেও চলে যায় । সব বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে থাকে তার মাঝে শিপু বলে উঠে চল না ঢাকার বাহিরে যাই , ঘুরে আসি কোথাও থেকে আর ভার্সিটিও তো বন্ধ । অলক বলল যাওয়া যায় কিন্তু যাবো কথায় আগে সেটা তো বল । মুহিন বলল চল আবার কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি , হয়তো ভালো লাগবে ।
সবাই মুহিন এর কথাটা মেনে নেয় তাদের সিদ্ধান্ত হয় তারা কক্সবাজারই যাবে । চলে যায় সব বন্ধুরা মিলে , কিছু আনন্দ একটু ভিন্ন রকম মজা জীবনে এই আর কি । তবে রাতের সমুদ্র অলক কে অনেক কাছে টানে , মানে রাতের সমুদ্র অলকের কাছে অনেক প্রিয় । তাই হয়তো সে রাতেও সমুদ্রের যায় প্রিয় গীটার টা কে হাতে নিয়ে । আপন মনে পরিচিত কিছু গানের লাইন গাইতে থাকে ।
সমুদ্রের গর্জনের সাথে মিশে যাচ্ছিল অলকের গানের কথা গুলো ।
কিছু ক্ষণ পর অলক অনুভব করলো কেউ একজন তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে । মুখ ফিরিয়ে দেখে অচেনা একজন , এক অপরিচিত মুখ ।
অলক কিছু বলার আগেই ঐ মেয়েটা বলে ফেলল আপনি তো অনেক সুন্দর গান করেন । অলক রীতিমত বিধ্বস্ত , চেনা নেই জানা নেই কেউ একজন
তাকে এমন করে প্রশংসা করছে ।
যাই হোক অলকের সেই চিরচেনা উত্তর
গান তাও আবার ভালো বলছেন । হাসালেন আমাকে । খুব বেশী সময় নেয় নি দুজনে পরিচিত হতে । কারণ ভালো বন্ধু হওয়ার জন্য যেই টুকু লাগে হয়তো তারা দুজনে মধ্যে তা ছিল তাই অনেক তা সময় তাদের লাগে নি । আমি গোধূলি ঢাকা থেকে এসেছি বাবা মার সাথে , বলতে পারেন জোর করে আমিই নিয়ে এসেছি ।
কারণ আমার সমুদ্র অনেক ভালো লাগে । আচ্ছা আমি অলক আমি ঢাকা থাকি , বন্ধুদের সাথে এসেছি আর আপনার সাথে একটা মিল আছে আমিও সমুদ্র দেখতে অনেক ভালোবাসি । আর রাতের সমুদ্র আমাকে কাছে টানে ।
যাই হোক কিছু ক্ষণ কথা বলতে বলতে সমুদ্রের জলে পা ভিজিয়ে হাঁটতে থাকে দুজনেই । হয়তো এই অল্প সময়েই অনেক কিছু যেনে নেয় দুজন দুজনের কাছ থেকে ।
কিছুক্ষণ পর যেন তাদের আনন্দে ভাঁটা পরে যায় গোধূলির একটা ফোনে , মা ফোন করেছে । কিরে অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে তো এখনও কোথায় রে মা চলে আয় । কি আর করা গোধূলি চলে যায় , কিন্তু যাওয়ার আগে শুধু জিজ্ঞেস করে কাল কি আমাদের দেখা হবে ? কারণ আমরা কাল রাতে চলে যাবো । অলক কিছু না ভেবেই বলে দেয় কেন নয় আমি বিকালে থাকবো ঠিক এখানে ।
পরদিন বিকালে চলে আসে গোধূলি কিন্তু ততক্ষণে অলক এসে পৌছয় নি ।
যাই হোক একটু পর অলক এসে দেখে গোধূলি কাল রঙের শাড়ি পরে যেন অলকের আসার অপেক্ষায়ই আছে । অলকের চোখে কালো শাড়িতে গোধূলি কে অপরূপা দেখাছিল । হয়তো পৃথিবীর চোখে না লাগলেও অলক এর চোখে লেগেছিল । কিছুক্ষণ এক সাথে কথা বলতে বলতে গোধূলি বলে আমাদের কি আর দেখা হবে বা কথা হবে না ? প্রতিউত্তরে অলক আপনিই চাইলেই হবে আমি তো কয়েকদিন পরই ফিরছি দেখা হবে না কেন ? আর কথা যেই মাধ্যম হয় মানে আপনার নাম্বার চাইলে দিতে পারেন আমি ফোন দিবো । এই কথাটা যেন গোধূলির মনে ঘুর পাক খাচ্ছিল এতটা সময় ।
দুজন দুজনের নাম্বার রাখে ।
গোধূলি চলে আসে ঢাকায় ।
কয়েক দিন পর অলকও চলে আসে । হঠাৎ করে এক রাতে অলকের ফোনে ফোন আসে সেই নাম্বার থেকে , আপনি তো মনে হয় ভুলেই গেছেন আমাকে । না ভুলিনি আসলে আজ ভাবছিলাম আপনাকে ফোন দিবো যাই হোক আপনিই দিলেন ।
এর পর থেকে প্রায় রাতেই দুজন কথা বলত । মাঝে মাঝে দেখাও করতো তারা । অলক প্রতিবার দেখা করার সময় গোধূলির জন্য কিছু রজনীগন্ধা নিয়ে যেতো কারণ গোধূলির প্রিয় ফুল । আছতে আছতে তাদের বন্ধুত্ব আপনি থেকে তুমি ।
বেশ কিছু দিন এমন ভাবে যাওয়ার পর গোধূলি একদিন বলে ফেলল আমি হয়তো আর বেশী দিন দেশে থাকবো না ।
হ্যাঁ মা বাবা চায় আমি ডাক্তার হবো , বলতে পরও এটা আমারও ইচ্ছা তাই ক্যানেডাতে চলে যাচ্ছি । দেখতে দেখতে যেন সময় শেষ হয়ে গেলো । সব কিছুর পর গোধূলি অলকের চোখে কিছু না বলা কথা খোঁজে পায় । হয়তো এটা গোধূলির ভালো লাগাও হতে পারে । চলে যাওয়ার আগের দিন সারাদিন তারা এক সাথে বেড়িয়েছে অলকও অনেক টা বোঝতে পেরেছে গোধূলির চোখের ভাষা ।
কিন্তু দুজনই চুপ । শুধু গোধূলি বলেছিল অলকের হাতটা ধরে , আমি যেদিন দেশে ফিরে আসবো সেদিন তোমার জন্য সবচেয়ে বড় একটা সারপ্রাইজ দিবো , যা আজ বলতে পারিনি , দিতে পারিনি । অলক বোঝে যায় গোধূলির না বলা কথাটা , কিন্তু সেও বলে দেয় আমিও সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবো ।
অলক কেমন জানি একা হয়ে যায় গোধূলির চলে যাওয়াতে , প্রিয় বন্ধুরা যেন কেমন তার কাছে অচেনা লাগে । আড্ডা , গান কিছুতেই যেন ওর মন নেই ।
তবুও সময় কারো জন্যে থেমে থাকে না ।
দেখতে দেখতে চলে যায় ২ বছর আধুনিক এই যুগে অনেক দূরে থেকেও যেন তারা অনেক কাছে মানে বিজ্ঞানের মাধমে ।
কিছু দিন পর যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি গোধূলি ছুটি পেয়েছে দেশে আসবে ।
অলকের এই আনমনা ভাব যেন এক কথাতেই কেটে যায় ।
কিছু নতুন স্বপ্ন জন্মনেয় আবার তার মাঝে ।
প্রাণ ফিরে পায় সে আবার
সে যেন আগের অলক হয়ে গেছে । বন্ধুদের কে সব কিছু খুলে বলে । বন্ধুরাও অনেক খুশী তার এই প্রাপ্তিতে । অনেক হাঁসি ঠাট্টা বন্ধুদের মাঝে ।
কাল আসছে গোধূলি দেশে , কথা হবে , না বলা হাজারো কথা ।
অলকের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তিটা হবে গোধূলির দেয়া সারপ্রাইজ , যা তার জীবন কে বদলে দিবে । গোধূলি এসেছে দেশে । ফোনে কথা হয় তাদের কাল তারা দেখা করবে । অলকের প্রশ্ন আমার সারপ্রাইজ টাকি কাল কে পাবো ? গোধূলি হ্যাঁ কাল পাবে অপেক্ষা করো ।
পরদিন বিকালে তারা দেখা করার কথা , তাই অলক একটু আগেই চলে যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পরে , প্রতিদিনের মত আজও সে গোধূলির জন্য এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা নিতে যায় , কিন্তু আজ যে ফুল গুলো আর দেয়া হবে না , সে কি জানতো ।
ফুল গুলো হাতে নিয়ে রাস্তা পার হবার সময় এক ঘাতক গাড়ি শেষ করে দিয়ে যায় তার সব আশা , আকাঙ্ক্ষা কে । রক্তাক্ত শরীর আর নিজের রক্ত দিয়ে যেন লাল হয়ে যায় রজনীগন্ধার প্রতিটি ফুল । কিছু অপরিচিত মানুষের সহায়তায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতাল , কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে অলক হারিয়েছে তার শেষ নিঃশ্বাস টুকু ।
অলক যে চলে গেছে না ফেরার দেশে । যেখান থেকে কেউ ফিরে আসে না ।
এদিকে গোধূলির অপেক্ষা অলক আসে না । কিছুক্ষণ পর একটা ফোন , কিন্তু তখনও গোধূলি জানে না তার অলক আর নেই । সে চলে যায় হাসপাতালে ,কিন্তু কি দেখল পরে আছে নিথর দেহটা সাদা কাফনে মুড়ানো । অলকের পরিচিত মুখ গুলোর কান্না আর বন্ধুদের চিৎকার গোধূলিকে বাকরোধ করে দেয় । সে যে চিৎকার করে কাঁদতেও পারছে না ।
বলতে পারছে না তার না বলা কথা গুলো । না বলা কথা গুলোই যেন আশ্রু হয়ে বয়ে পরছে । গোধূলির হাজারো স্বপ্ন যেন বাস্তবতায় রূপ দেয়ার আগেই নিমিষেই যেন চিরতরে হারিয়ে গেছে । । হয়তো গোধূলি তার প্রাপ্তিতে আজ নির্বাক ।
কিন্তু বাস্তবতা সব কিছুকে হার মানায় ।
ভাইয়া এবং আপুরা সবাই একটু সচেতন হয়ে রাস্তায় চলা চল করুন । আপনার একটু অসাবধানতা আপনার প্রিয়জনদের জন্য সাড়া জীবনের কান্না । যদি আমার গল্পটা আপনাদের ভালো লেগে থাকে ঐ টুকুই আমার সার্থকতা ধন্যবাদ সবাই কে ।
" ইমরান নীল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।