আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলেত: পাখির চোখে দেখা- তিন

২৭ ফেব্রু,'১৩ ইং প্লেনে চেপে বসেছি , ছাড়ার আর নাম নেই, বাংলাদেশ বিমান , তাই যাত্রীর তালিকার প্রায় দুই চার সাদা চামড়া ছাড়া আর শতভাগই বাঙালি। দেরি করার কারণ শুনলাম, প্লেন নাকি ওভারলোডেড। কি আশ্চর্য কথা! ওঠানোর সময় কি মেপে ওঠানো হয়নি? যা হোক, তেমন কিছু করার নেই দেখে আগত্যা ডায়রী খুলে বসলাম। পাশের সহযাত্রী দুই বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা দেখলাম বেশ সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকালেন। তাকাবারই কথা , এর আগে নিশ্চয়ই কাউকে এহেন দেখেননি।

অল্পক্ষণেই অবশ্যি একজন পবিত্র কোরআন পাঠে মগ্ন হলেন, অন্যজন হেডফোন কানে গুজলেন। আর আমি মন দিলাম লেখায়। শেষের দিন গুলো যেন ঝড়ের মতই পার হয়ে গিয়েছে। যারা ভবিষ্যতে বিদেশে যাবেন তাদের জন্য ফ্রি পরামর্শ , যত আগে থেকে পারেন, প্রস্তুতি নেয়া শুরু করবেন, নইলে আমার মতই অবস্থা হবে। আমার সময় এমনিতেই কম ছিল, ব্লগার রাজীব হত্যা ও তার পরবর্তী সময়ের উত্তপ্ত সময়ে খুব কম দিনই মার্কেট খোলা পেয়েছি, আফটার অল, বাণিজ্যের চেয়ে জীবনের মূল্যই বেশি।

সুতরাং, প্রয়োজনিয় জিনিস গুলো কিনতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছি। বিরাট লিস্টি মিলিয়ে কেনাকাটার সময় অতি প্রয়োজনীয় কিছু কি বাদ গেল কিনা সে দুশ্চিন্তা তো ছিলই। এখন , সে সব কিছু পেছনে ফেলে যখন প্লেনে চেপে বসেছি তখন মিশ্র অনূভূতির দোলা মনে। পরিবার থেকে দূরে যাবার বেদনা আর স্বপ্ন পূরণের আনন্দ। জীবনের প্রথম প্নেনভ্রমন, তার উত্তেজনা, আর কোন এক হাজার মাইল দূবের এক পরভূমে জীবন,' কে জানে কেমন হবে , কি হবে', টাইপের এক অনূভূতি কাজ করছে।

এরই মধ্যে আমাদের আকাশযানের শুভ যাত্রারম্ভ হল। বিজ্ঞানের এই বিশাল আবিহ্কার মানুষজনের মনে আজ আর কোন বিধ্ময় জাগায় না, কিন্তু আমি এক মূহূর্তের জন্য হলেও না ভেবে পারলাম না, কি বিশাল কল্পনাশক্তি, প্রতিভা আর শ্রমই না আছে এর পেছনে। অল্প কিছু সময়েই মাটির পৃথিবী স্রেফ কতগুলো জ্যামিতিক সবুজ আর ধুসর বর্ণের চতূর্ভুজ আর রেখার সমন্বয়ে পরিণত হলো। তার ও পরে সাদা মেঘের রাজ্য। নিচের সবুজ থেকে এই নীল- সাদাও কম সুন্দর নয়।

উপরে সোনালি আলো পড়ে আপার্থিব সৌন্দর্য্যে ঝলমল করছে। ফেবুতে দেখা একটা লাইন মনে পড়লো, 'পৃথিবীতে সবচাইতে দামী জিনিসগুলো দাম দি্যে কিনতে হয় না,ওগুলো পাওয়া যায় নিঃখরচায়। ' সূদীর্ঘ যাত্রা পথে সামনের স্ক্রিনে গান শোনা , মুভির টুকরা টাকরা দর্শন, বিমানের গতিপথের নানা তথ্য দেখা শেষ করে আর কত সময় কাটানো যায়! পাশের দুই ভদ্রমহিলার সাথে আলাপ জুড়লাম। প্লেন প্রায় গন্তব্যে চলে এসেছে, বের হল তাদের লাল পাসপোর্ট। বাঙালি হলে কি হবে , এখানে আমার মত দু চারজন বাদে বাদবাকি সবারই তাই -ই।

শেষের দেকে পাশের ভদ্রমহিলা পরামর্শ দিলেন শেষ পরিবেশনের বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো ব্যাগে করে সঙ্গে নিয়ে নিতে, আর কোন খাবার নাকি দেয়া হবে না। অবাক হলাম। আর মাত্র কিছুকক্ষণের মাঝেই যেখানে নেমেই যাচ্ছি , সেখানে এইসব বয়ে নিয়ে কি হবে? বাঙালিই তো, যতই লাল পাসপোর্ট আর চোস্ত ইংরেজিই তার হোক না কেন, এই মানসিক দৈন্য তার ঘুচবে কবে? লম্বা যাত্রার শেষ হল অবশেষে। লন্ডনের পক্ষে অস্বাভাবিক রৌদ্রকরোজ্জ্বল এক দিন স্বাগত জানাল আমাকে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.