আজ থেকে সাড়ে সাত হাজার বছর আগেও ঠিক এমনটাই ছিল এই ‘স্বর্গের স্নানঘর’। আবিষ্কারক-গবেষকরা এ নামেই ডাকছেন সদ্য আবিষ্কৃত অস্ট্রেলিয়ার ব্লু লেক বা নীল হ্রদকে।
স্ফটিকের মতো ঝকঝকে একেবারে কাকচক্ষু স্বচ্ছ পানির এই প্রাকৃতিক আধার, যাকে আজও কোনোভাবেই স্পর্শ করেনি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব। নয়নাভিরাম, মনোমুগ্ধকর আর সহস্র বছরের সুপ্রাচীন আজও তেমনি আছে যেমনটি ছিল হাজার বছর আগে।
সম্প্রতি দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার দুর্গম অঞ্চলে নীল হ্রদটির খোঁজ পেয়েছেন অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।
বর্তমান পৃথিবীর প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর জলবায়ু পরিবর্তনে হ্রদ, নদী-নালায় নানা প্রভাব পড়েছে। বদলে গেছে জীববৈচিত্র্য, পানি আর পরিবেশ। কিন্তু কল্পনাতীতভাবে এমন একটি হ্রদের খোঁজ পেয়েছেন গবেষকেরা যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো প্রভাব বা মানবসৃষ্ট কোনো বিপর্যয় আজও ঘটেনি। গবেষকেদের দাবি, আজ থেকে সাড়ে সাত হাজার বছর আগে এই নীল হ্রদের পানি যে রাসায়নিক অবস্থায় ছিল আজও ঠিক সে অবস্থাতেই রয়েছে। এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে হাফিংটন পোস্ট।
অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যামেরন বার এ হ্রদ সম্পর্কে মন্তব্যে জানিয়েছেন, ‘এ যেন ঈশ্বরের বাথট্যাব। ব্লু লেকের পানি অসাধারণ সুন্দর’।
বার ও তাঁর গবষেক দলের দাবি, দক্ষিণ কুইন্সল্যান্ডের স্টার্ডব্রোক আইল্যান্ডের অন্যতম বৃহত্তর এ হ্রদটির পানি এতই স্বচ্ছ যে, ৩০ ফুট নীচে কি আছে তাও দেখা সম্ভব।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে গবেষক বার এ হ্রদ সম্পর্কে জানিয়েছেন, ব্লু লেক এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রেখেছে। সাড়ে সাত হাজার বছর ধরে একই অবস্থায় রয়ে গেছে এ হ্রদের স্বচ্ছ পানি।
ফ্রেশওয়াটার বায়োলজি সাময়িকীতে গবেষক বার ব্লু লেক নিয়ে তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, অস্ট্রেলিয়ায় স্বচ্ছ পানির হ্রদের ক্ষেত্রে পরিবেশের বিপর্যয় থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র নিদর্শন এটা।
গবেষকেরা ব্লু লেক অঞ্চলের ১১৭ বছরের তথ্য ও উপাত্ত ও পানির গুণগত মান, জীবাশ্ম, শৈবাল প্রভৃতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে গত চার দশকে এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি হ্রদ শুকিয়ে গেছে। তবে এ হ্রদটির পানিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
কারণ হচ্ছে, এ হ্রদের পানি নিকটস্থ খাল দিয়ে নিয়মিত সরে যায় এবং ঝর্ণা থেকে নতুন পানি আসতে থাকে। নিয়মিত পানি পরিবর্তিত হওয়ায় এ হ্রদ অতি বাষ্পীভবন ও অতিরিক্ত লবণাক্ততার কবলমুক্ত থেকে গেছে।
গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, এ হ্রদটির পানির রসায়ন এতটাই নির্মল যে কোনো পর্যটকের সামান্য সান স্ক্রিনের রাসায়নিকও এ পানিতে পরিবর্তন আনতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।