আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। কিস্তি-৩১
হলের গল্পে ফিরি। সেকেন্ড ইয়ার শেষের দিকে আমাকে তিন তলায় উঠিয়ে দিলো ছাত্রদল নেতারা। তারেক ভাই ৩১৪ নম্বর রুমে আমার জন্য একটা সিট ফাঁকা করলেন।
আমার লেপ তোষক নেয়া হলো। গিয়ে দেখি মাসুদ ভাইকে হটিয়ে আমার জন্য জায়গা করা হযেছে্ । ওই রুমে ছাত্রদলের আরো ক'জন থাকতেন। কর্মী, নেতা না। তারা আমাকে ওঠানোর বিরোধীতা করেছিলেন, কিন্তু তা শোনা হয়নি।
তাই তাদের মন খারাপ। এই মন খারাপের মধ্যে আমার একটু খারাপ লাগছিলো উঠতে। কিন্তু রুমের সব সদস্য আমাকে উঠতে বললেন, নইলে তাদের সমস্যা হবে। তাই আমি একান্ত নিরুপায় হয়ে উঠলাম। সকালে আমার বেডিং পত্র ১১৭ থেকে ৩১৪ নম্বর রুমে গেলেও আমি উঠেছি রাতে।
সবার সাথে আলাপ হলো।
আমি এ রুমে অসুবিধা নয়, সুবিধা হতে পারি সেটি বোঝানোর চেষ্টা করলাম। দরজার পাশের সিটটি আমার জন্য বরাদ্দ হলো। এতে আমার আপত্তি নেই।
এখানে বলে রাখি ২০০০ সালেই হলে আকমার সিট হয়ছিল।
সে সময় ছাত্রলীগের আধিপত্য। আমার জন্য ৩১৬ নম্বর রুম বরাদ্দ করা হলো। সেটা করেছেন চামবাজ নীল দলের সদস্য বায়তুল্লাহ কাদেরী। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কোন রুমে উঠতে চাই। আমি যেহেতু নতুন এবং নিয়ম মাফিক হলে উঠার জন্য আবেদন করেছি তাই এ সব ঝামেলা সম্পর্কে জানতাম না।
আমরা অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে বায়তুল্লাহ কাদেরী ওরফে চামবাজ কাদেরী বলল, ওকে ৩১৬ নম্বর রুমে এলট দেন। অন্য শিক্ষকরা তাই করলেন। পরে জানলাম ওই রুম আর্মস ক্যাডারদের দখলে। ওরা সেখানে রাতভর হল পাহারা দেয়। বাধ্য হয়ে আমার হলে নিয়ম মাফিক ওঠা হয়নি।
পরে ছাত্রলীগ নেতাদের মারফত হলে উঠে নেমে পড়ার গল্প আগেই বলেছি।
মিস্টার কাদেরী বাংলার টিচার। সব সরকারের আমলের সুবিধাভোগি। হাউস টিউটর হলেও ছাত্রদের কল্যাণে এ জ্ঞান পাপীকে পাওয়া যায় না।
হলের ৩১৪ নম্বর রুমের একটি বেডে আমি সিঙ্গেল থাকছি।
আমার ৩১৪ নম্বর রুমে ওঠাটাকে অনেকে অনেক ভাবে দেখেছেন। কিন্তু মাস খানেকের মধ্যে পুরো ব্লকের সবাইকে জয় করে নিয়েছিলাম। একই ব্লকে আমরা তিন সাংবাদিক- আমি ছাড়াও যাকারিয়া এবং সুজন মেহেদী (এখন ইনডিপেনডেন্ট টিভিতে) থাকতাম। তাছাড়া আরো অনেকে ছিলেন। সুজনের রুমে থাকতে শরীফ ভাই।
ডিবেটর। যাকারিয়ার রুমে গাঙ্গুলি জাহিদ (বর্তমানে জার্মান প্রবাসী) এদের সবার সাথেই আমার ভালো সম্পর্ক। ব্লক জুড়েই আমরা হৈ হুল্লোড় করি, আনন্দ করি।
ভালেই কাটছিল হল লাইফ। তবে হলের খাবার নিয়ে সমস্যা হতো।
ক্যান্টিনের খাবার খেতে খেতে অসহ্য হয়ে উঠছিলাম। সন্ত্রাসী ছাত্রদল নেতারা হল ত্যাগের পর মেধাবীদের একাংশ নতুন কমিটির অপেক্ষায়। কমিটি গঠনের পর আমি হলের ছাত্র হিসাবে সাধারণ ছাত্রদের সমস্যার দিকে কমিটির নজর দিতে বললাম। যদিও কাজটি আমার নয়। খাবারের মানোন্নয়নের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিছিলাম।
সেটি নেপথ্যে থেকে। সামনে ছিল হল ছাত্রদলের সভাপতি আকরাম, সেক্রেটারি নাজমুল ও সাংগঠনিক সোহেল। সবাই মিলে বসে আমরা হলের ক্যান্টিনের খাবারের মানোন্নয়ন এবং মেসের খাবার আরো ভালো করার উদ্যোগ নিলাম। সে সময় হলের খাবারের সুনাম ছিল। মাঝে মধ্যে যে সমস্যা হতো না তা কিন্তু নয়।
তবে তুলনামূলক বঙ্গবন্ধু হলের খাবার ভালো ছিল। ফাও খাওয়াটা বাকিতে রূপান্তর হলওে তা উল্লেখ করার মত না। বঙ্গবন্ধু হলের ভাগ্যটা ভালো বলতে হবে। এখানে ছাত্রলীগের আমলে আজিম ভাই থাকতেন। অত্যন্ত সৎ ও সজ্জন মানুষ।
তার সময়ও হলের খাবারের মান ভালো রাখার চেষ্টা ছিল। হল মেসের জন্য সে সময় তিনি একটি ফ্রিজেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। আজিম ভাই সে সময়কার ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গড়পড়তা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে বেমানান আজিম ভাই রাজনীতিতে অনেক দিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এখনো ততটা সক্রিয় নন, লুটপাটে তিনি কোনো ধারে কাছে নেই।
আমার দেখা সৎ রাজনীতিকদের একজন আজিম ভাই। আমি তাকে তাই সম্মান করি। একজন বড় ভাই হিসাবে তাকে আমার সব সময় ভালো লাগে, দেখা হলেই ছুটে যাই। উনিও আসেন। ভালো লাগে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।