চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! প্রকৃতির অনুপম সৃষ্টি মাধবতীর্থ ‘মাধবকুন্ড’। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া পাহাড়ের মাধব বন বিটে অবস্থিত মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। প্রায় ২শ’ ফুট উঁচু থেকে পাহাড়ের গা বেয়ে অবিরাম গড়িয়ে পড়া নয়নাভিরাম জলরাশি পর্যটকদের মুগ্ধ করে। প্রতিদিন দেশী-বিদেশী হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে জলপ্রপাত। জানা গেছে, অপরূপ সৌন্দর্য মন্ডিত মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে পাথরের উপর বসে ঝর্না দেখা, ছবি তোলা ও গোসল করাই পর্যটকদের পছন্দ।
আর গোসল করতে নেমে সতর্কবাণী না মানা ও অসচেতনতার কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। সতর্কবাণী না মানায় মাধবকুন্ডে গত দু’যুগে ৩৩ জন পর্যটকের প্রাণহানি ঘটেছে। মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২শ’ ফুট উঁচু চূড়ায় উঠতে গিয়ে অনেকেই পা ফসকে নীচে পড়ে যায়। তখনই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আবার কেউ কেউ জলপ্রপাতে সাঁতার কাটতে ও গোসল করতে নেমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিপজ্জনক এলাকায় ঢুকার পরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ গত ৮ জুন মাধবকুন্ড জলপ্রপাত দর্শনে আসা ৮ জন শিক্ষার্থী সকাল ১১ টার দিকে সাঁতার কাটতে নামে। পর্যটন পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৩ জন ছাত্র বিপজ্জনক এলাকায় প্রবেশ করে। সাথে সাথে স্রোতের তোড়ে পানির নীচে তলিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নিহত ছাত্ররা হলো মিরপুর কমার্স কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র আশিকুর রহমান (১৯), মিরপুর-২ বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র শাহরিয়ার আহমদ (১৬), মিরপুর বায়তুল আমান মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণীর ছাত্র মুন্না (১৫)। নিহতরা কেউই সাঁতার জানত না বলে জানায় সহপাঠীরা।
গত ১২ মার্চ রুমানা বেগম (১৮) নামের এক তরুণীর মৃত্যু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় এছাড়া এ যাবত ২৯ জন পর্যটক মারা গেছেন মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে। এই জলপ্রপাতকে ঘিরে ২০০১ সালে মাধবকুন্ড ইকোপার্ক ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার। আর আজ অবধি ইকো পার্কের পূর্ণতা পায়নি পর্যটন স্পট মাধবকুন্ড। মাধবকুন্ডের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে এসে রাস্তা ভাঙাচোরা ও সরু থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথ চলতে হয় পর্যটকদের।
রাস্তা প্রশস্ত ও সংস্কারের দাবিতে মাধবকুন্ড রাস্তা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে স্থানীয়রা বেশ কয়েকবার মানববন্ধন পালন করে। এতে কাজ হয়নি আজও। বড়লেখা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন ও দিপংকর জানান, পর্যটকরা মাধবকুন্ডে এসে বিধি নিষেধ ও সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড মানতে চায় না। আনন্দ কতে গিয়ে তারা বিপদের কথা ভুলে সাতার না জেনেও অনেকে পানিতে নেমে পড়েন। আবার খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে গিয়েও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
তারা বলেন, আমরা আর মাধবকুন্ডে লাশ দেখতে চাই না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। মাধব বন বিটের রেঞ্জ কর্মকর্তা হেলার উদ্দিন জানান, মাধবকুন্ড ইকোপার্ক এলাকায় বন বিভাগের সতর্ক বাণী সাইন বোর্ড আছে। পর্যটকরা সেই সতর্ক বাণী মানছেন না। ফলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়েছে। শিগগীর বিপজ্জনক এলাকা চিহ্নিত করে নেট দিয়ে পৃথক করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু চাই না। বিপজ্জনক স্থান চিহ্নিত করে নেট দিয়ে পৃথক করার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন। বেশ কিছু বয়া ও লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
লাইফ জ্যাকেট পরে নিরাপদ এলাকায় পর্যটকগন যাতে চলাফেরা করতে পারে । কারণ শুধু জল প্রপাত দেখলেই হবে না, তার পানির ছোঁয়াও অনেকে নিতে চায় ।
৮ জুনের ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।