ট্রেনে ভোররাতে অসিত পৌঁছে কুলাউড়া স্টেশনে। অনীতা আগেই চিঠির উত্তরে জানিয়ে দিয়েছিলো স্টেশনে তার জন্য লোক থাকবে। তার সাথে বাসে-রিক্সায় অসিত মাধবকুন্ড চলে আসে। পাহাড়ের কোল ঘেসে ছোট্ট, ছিমছাম একটি খাসিয়া পুঞ্জি। বিকেলের আলোয় পাহাড়ের গাছগুলোকে এক একটি বাহারী নক্সার মত মনে হয় অসিতের কাছে।
আর পুঞ্জির এক তরুণী যেন তার নাটাই হাতে দাঁড়িয়ে আছে, আর ইচ্ছেমতো তাদের হাওয়ায় ভাসিয়ে চলেছে। হাসিমুখে অনীতাকে হাত নাড়তে দেখলো অসিত। সেও হাত নেড়ে সায় দিল তার ডাকে।
অনেক কথা জমে আছে দু’জনের মনে। কিন্ত্ত অসিতের কথা যেন আর ফুরায় না।
রাতে খাওয়ার সময় কেমন আছে অনীতা, তার গ্রাম এর কাজকর্ম কেমন চলছে, কিভাবে নিজের দায়-দায়িত্ব পালন করে চলেছে, কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা, আরো কত কি জানতে চায় সে! অনীতা সরল হাসি হেসে জানিয়ে দেয় তার কাজের কথা, কিভাবে তার মা’র কাছ থেকে সে দায়িত্ব বুঝে নিলো, তার কথা। সেই সাথে জানিয়ে দেয়, কাজের সাথে বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছে সে, কোন সমস্যা হচ্ছে না তার। তবু যেন অসিতের মন ভরে না। সে জানায় তার কাজের কথা, তার মা-বাবার কথা। সেই সাথে মা যে তার বিয়ে নিয়ে ভাবছেন, সেটাও ছোট্ট করে জানিয়ে দেয় সে।
অনীতা খুব আগ্রহ নিয়ে তার কথা শোনে। বলে, মা-বাবার কথা মতো ভালো দেখে একটি মেয়েকে যেন বিয়ে করে অসিত। অসিত বলে,”কেন, তুমি কি ভালো মেয়ে নও ?” উত্তরে মুচকি হাসে অনীতা, কোন কথা বলে না। একরাশ সংশয় মনে নিয়ে অসিত বিছানায় গা এলিয়ে দেয়...অনীতা তাকে ভালোবাসে তো ?
পরদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে অসিত খোঁজ করে অনীতার। জানতে পারে, জরুরী কাজে সিলেট গেছে সে।
ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হবে তার। চোখে-মুখে একরাশ হতাশা নিয়ে সকালের নাস্তা খেতে বসে। এত কি জরুরী কাজ পড়লো, যে না জানিয়ে হঠাৎ সিলেট যেতে হল অনীতাকে ? অনেক ভেবেও কোন সদুত্তর পায় না। বেলা বাড়তে থাকে, সেই সাথে বাড়ে অসিতের মনের উত্তাপ। বিকেলের আলোয় ঝরনার পানি দেখতে দেখতে সব দ্বিধা-দ্বন্দ ঝেড়ে ফেলে সিদ্ধান্ত নেয়, তার মনের কথা জানাবে অনীতাকে।
দূর থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি জানিয়ে দেয় রাত শুরুর কথা। অনীতা ফিরে আসে। হাত-মুখ ধুয়ে খবর নেয়, অসিত ঠিক মত খাওয়া-দাওয়া করেছে কিনা, তার শরীর ঠিক আছে কিনা। অসিত কিছু বলে না, শুধু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কি যেন দেখতে পায় তার চোখে, কাছে এগিয়ে আসে অনীতা।
অস্ফুট স্বরে অসিত জানায়,“আমি তোমাকে ভালোবাসি, অনীতা। ”
“তা আমি জানি। একজন বন্ধু তো আরেক জন বন্ধুকে ভালোবাসবেই। আমি তোমার খুব ভালো একজন বন্ধু, অসিত। আমিও তোমাকে ভালোবাসি, একজন বন্ধুর মতই।
এর চেয়ে বেশী কিছু না। ” জানায় অনীতা।
“কিন্ত্ত আমি যে তার চেয়েও অনেক বেশী কিছু চাই!”
“তা দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই, অসিত!” মাথা নীচু করে চলে যেতে চায় অনীতা। তার হাত ধরে ফেলে অসিত চিৎকার করে ওঠে,“কিন্ত্ত কেন ?”
“খাবে এসো, তারপর এ নিয়ে কথা হবে। ” ঠান্ডা গলায় উত্তর দেয় অনীতা।
তার বলার ভঙ্গিতে এমন কিছু থাকে, যা এড়াতে পারে না অসিত। (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।