আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে পর্যটনের নামে প্রতারনা

ইউরোপের ভূস্বর্গ সুইজারল্যান্ড। ভারতের কাশ্মীর। আর বাংলাদেশের ভূস্বর্গ সিলেট। শুধু অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের লীলাভূমিও সিলেট। উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলিম বহু তাপসের পবিত্র পদধূলির পূণ্যাগারও এই সিলেট।

যেমনি আছে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল ( রহ : ) ও হযরত শাহপরান ( রহ : ) -এর পবিত্র পদচরন। তেমনি আছে শ্রীচৈতন্যের মন্দির ও শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান। ধর্মীয় সহাবস্থানের অনন্য ভূমিও সিলেট। ভারতের ভূস্বর্গ কাশ্মিরের সৌন্দর্যের কারনে এর রাজধানীর নাম রাখা হয়েছে শ্রীনগর। অনুরুপভাবে প্রাকৃ্তিক সৌন্দর্য ও সম্পদের লীলাভূমি সিলেট ‘শ্রীভুমি’ নামে দেশের গন্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।

ধনীর দুলালীর খাবার প্লেটে থাকে উপাদেয় খাবারের চতুর্ভূজ। তার উচ্ছিষ্টেই হয় অভুক্ত চাকরের পানাহার। বিশাল ভারত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিশালতায় পরিপূর্ণ। উচ্ছিষ্ট হিসেবে বাংলা মায়ের ভাগ্যে যেটুকুই জুটেছে সেটুকুই আজকের বাংলা ভাষী সৌন্দর্য পিপাসুদের আত্মার খোরাক। সমতল বাংলার পশ্চিমের লোকেরা মনের ক্ষুধায় ছুটে যায় দার্জেলিং।

দূর থেকে হিমালয় চূড়া দেখে নয়ন জুড়ায়। পূর্ব বঙ্গের লোকেদের সেই সাধ জাগতেই আসে পাসপোর্ট ভিসার ঝামেলা। তৈরী হয় সময় সুযোগের মাঝে বিস্তর ফ্যারাক। যদি আপন কোলে তাকাই আক্ষেপ ঘুচে যায় সিলেট,পার্বত্য চট্রগ্রাম,সুন্দরবন, কক্সবাজারের বেলা ভূমি দেখে। সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত পাথারিয়া পাহাড়, যার পূর্ব নাম "আদম আইল"।

এলাকাটি হাজার বছর আগে গভীর অরণ্য দ্বারা পূর্ণ ছিলো যেখানে "পাথরি" নামক নাগা জনগোষ্ঠির একটি উপশাখার অধিবাসীরা বসবাস করত। কালক্রমে বসবাসকারী এই জনগোষ্ঠীর নামের সাথে মিল থেকেই নাম হয় 'পাথারিয়া'। পাহাড়টি প্রায় ২৪ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত এবং বাংলাদেশের সাথে ভারতের পূর্ব দিকের সীমান্তবর্তী খাসিয়া-জয়ন্তীয়া উচ্চভূমির একটি বর্ধিত অংশ যার অপর অংশ ভারতের আসামে বিস্তৃত। পাথারিয়া পাহাড়ের উপর থেকে পতিত পানিতেই সৃষ্টি হয়েছে আজকের মনোহর মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। ভ্রমনকারী সৌন্দর্য পিপাসু মানুষেরা ছুটে যায় এই পাহাড় ও জলপ্রপাতের দূর্বার আকর্ষনে।

পাঠ্যপস্তুক,পেপার পত্রিকা,গল্প প্রবন্ধ,গণমাধ্যম,বন্ধুমহল,মায়ের মুখে শুনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শিশু,কিশোর,আবাল বৃদ্ধ বনিতায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা মুখরিত থাকে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। ঘাটের টাকা,দীর্ঘ পথ,মূল্যবান সময় ব্যয় করে কেবল সরকারের অব্যবস্থাপনার কাছে প্রতারিত হয়ে ফিরে আসতে হয় ব্যথিত মনে। প্রথমেই আসি পথের কথায়। যে যে প্রান্ত থেকেই আসেন না কেন হোঁচটের প্রথম ধাক্কাই কাঁঠালতলী মাধবকুন্ড সড়ক। কাঁঠালতলী থেকে মাধবকুন্ড ইকোপাকের গেট পর্যন্ত পথের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার।

রাস্তাটি গ্রামের পাড়া-মহল্লার রাস্তার ন্যায় চওড়া। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বা কিশোর শ্রেণীর বহৎ অংশ একত্রিত হয়ে বাস ভাড়া করে মাধব কুন্ড জলপ্রপাত দেখতে আসে। বাস এই রোডে ঢুকলে সরু রোড ও ডানে-বাম-উপরের গাছপালার ডালের চাপাচাপিতে এগুতে হয় আস্তে ধীরে। পিছন থেকে বা সামনে থেকে আগত সামান্য একটা সিএনজিকে সাইড দিতে পাশের প্রশস্ত সীমানা খুঁজতে হয়। কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত কৌশলে লিখে রেখেছে “বড়গাড়ী চলাচল নিষেধ”।

এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ঢুকছে গাড়ীগুলি। কেননা রাস্তার দূরত্ব কম করে হলেও ৮ কিলোমিটার। মাধবকুন্ড ইকোর্পাকের গেটের অনতি দূরে দর্শনার্থীদের বয়ে আনা গাড়ী রাস্তাটি কাঁচা নয়,পিচ ঢালা পাকা। কোথাও কোথাও এ নমুনা বৃদ্ধ বয়সের দাঁত শূন্য মুখের মত। রবি ঠাকুর তার অসুস্থ নায়িকার সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে নেয়ার কথা বলেছেন।

আর এখানে মনের নায়িকার সাধ মেটাতে রাস্তার বৈপরিত্যে উৎসাহ উবে বাস্প হয়ে উড়ে যায়। রাস্তার সবচেয়ে ভাল অংশটুকু মাধবকুন্ড জলপ্রপাত আপন সৌন্দর্যে নিজেই মহিমান্বিত। গেট থেকে জলপ্রপাতের দূরত্ব দশ মিনিটের হাঁটা পথ। কর্তৃপক্ষ এই হাটা পথটিকে এস এস রেলিং ও টাইলসে্ মুড়িয়ে সৌন্দর্যতা আরও বাড়িয়ে তুলেছেন। হাতের বামেই পড়বে শ্রী শ্রী মাধবেশ্বর মহাদেবের মন্দির ইকোপার্কের ভেতরে পাহাড়ের ঢালে একটি ক্ষুদ্র জনবসতি অজানাকে জানার আগ্রহ মানুষের বরাবরই দূর্বার।

মাধব কুন্ডে গেলে সেই আগ্রহে শিকল পরিয়ে রাখতে হবে। যে সৌন্দর্য দেখতে এতদূর আসা তার শিখরটা আপনাকে দেখতে দিবে না কর্তৃপক্ষ। কেউ যাতে উপরে উঠতে না পারে সে জন্য আছে পুলিশ। পাহাড়ের উপরে উঠার রাস্তাগুলো অধিকাংশই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে উপরে উঠে প্রকৃতির যে দৃশ্য দেখলাম তা বোঝাতে পারব না।

সত্যিই অপরুপ। কিন্তু যতক্ষণ সময় বলছি বেরসিক পুলিশ সে সময়টুকুও দিল না। হাতের ক্যামেরা কেড়ে নিল। সযত্নে নীচে নামিয়েও আনল। কিন্তু শত অনুনয়েও ছবি তুলতে দিল না।

ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দৃশ্যগুলো শেয়ার করতে পারলাম না। তাদের ভাষ্য উপরে উঠতে গিয়ে বা ওখান থেকে পড়ে অনেকেই মারা যায়। তথ্যটি মিথ্যা নয়। কুন্ডের উপর থেকে পড়ে বা গোসল করতে নেমে পানির ঘূর্নিতে অথবা অন্য অনেক কারণে গত তিন বছরে মাধবকুন্ডে বেড়াতে এসে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। –তথ্য সিলেট সংবাদ জুন ০৯, ২০১২ এর হিসাব পর্যন্ত।

ছবি-সিলেট সংবাদ জুন ০৯, ২০১২ হিমছড়িতে দেখেছি উঁচু পাহাড়ে উঠার জন্য সিঁড়ি করে দেয়া হয়েছে। ইন্টারনেটের বদৌলতে পৃথিবীর অনেক দেশের পাহাড়েও এ ব্যবস্থা দেখেছি। অথচ মাধবকুন্ডে নিরাপত্তার ধূয়া তুলে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। ভারতসহ অপরাপর দেশে পাহাড় থেকে পাহাড়ে ছুটে চলার জন্য আর উপর থেকে সৌন্দর্য্য দেখার জন্য ক্যাবল কার বা গন্ডোলা রাইডের ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশের পাহাড়গুলিতে সেটির ব্যবস্থা করে পর্যটনকে আরও উপভোগ্য করা যায়।

হিমছড়ি পাহাড়ে উঠার সিঁড়ি-www.pbase.comcandebatimage হিমছড়ি পাহাড়ে উঠার ট্রেইলও আছে-www.pbase.comcandebatimage আরেকটি প্রতারণা রাত্রীযাপনে। মানসম্পন্ন কোন আবাসিক হোটেল এখানে নেই। জলপ্রপাত,পাহাড় ছাড়াও এখানে রয়েছে সুন্দর সুন্দর চা বাগান। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের নাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বময়। দিন চলে গেছে, প্রকৃতির কাছে থেকে এখানে রাত্রীযাপন করবেন সে উপায় নেই।

একটি মাত্র হোটেল চোখে পড়ল(হোটেল গ্রীণ ভ্যালী ফোন-০১৮২৭৯০৪৪৯৯,০১৭১৫২৫০৩২৩)। কিন্তু সন্ধ্যার নিরবতায় নিরাপত্তায় আপনতেই বিদ্রোহী হয়ে উঠবেন। নির্মাণাধীন জেলা পরিষদ ডাক বাংলা এখনও আপন পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। মাধবকুন্ডে নির্মাণাধীন জেলা পরিষদ ডাক বাংলা বিল্ডিং ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.