আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাধবকুন্ড আর চঞ্চল ভাইয়ের আত্মার আত্মকাহিনী - শেষ পর্ব



নীরবতা ভেঙ্গে অনীতা বলে,“অসিত, আমার মনে হয় তুমি আমার অবস্থানটা বুঝতে পেরেছো। অযথা আর এটা নিয়ে না ভেবে তুমি নুতন করে পছন্দের কাউকে খুঁজে নাও। তোমার কি নন্দিতার কথা মনে আছে? আমরা হলে একসাথে থাকতাম। তুমি বেশ ভালো করেই ওকে চেনো। জানো, ও না তোমাকে অনেক পছন্দ করত, আর আমি যতটুকু জানি, এখনও করে।

বেচারী সাহস করে কখনোই তোমাকে বলতে পারেনি। আমি তোমাকে ওর বাসার ঠিকানা দিচ্ছি, এবার যেয়ে ওর সাথে দেখা কর। ” অনীতার ভালোবাসায় অন্ধ অসিতের বুকে এসব কথা যেন শেলের মতো বেঁধে। সে ভেবেই পায় না, কেন তাকে এভাবে ফেরাতে চায় অনীতা, তাও আবার নন্দিতার কথা বলে। মনটা পুরোই দমে যায় তার।

তারপর মন শক্ত করে ভাবে, শেষবারের মতো অনীতার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবে সে, পরদিন সকালে। অনীতার মনের কথা যে কি, আরো কি লুকিয়ে আছে সেখানে, পুরোপুরি জানতে চায় সে। তার দৃঢ় বিশ্বাস, অন্য কাউকে ভালোবাসে অনীতা। এভাবেই চিন্তার সুতোয় জাল বুনতে বুনতে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে একসময় ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় সে। রাতটা খুব একটা ভালো যায় না অসিতের।

নানান দুঃস্বপ্নের ভীড়ে বার বার ভোরের স্বপ্নের কথাটাই ঘুরে ফিরে মনের মাঝে এসে তাকে বিচলিত করে তোলে। স্বপ্নে সে দেখতে পায়, এক বিশাল আগুনের কুন্ড জ্বলছে, যেন বিশাল যজ্ঞ করছেন কোন এক নাম-না-জানা মুনি। কিন্ত্ত সে দেখে, অনীতা সে আগুনের কুন্ডে লাফিয়ে পড়ছে, আর বলছে,“তোমাকে বিয়ে না করে তোমার মনে অনেক কষ্ট দিচ্ছি, আর আমার দায়িত্বকেও এড়িয়ে যেতে পারছি না, আমার মরণই ভালো। অসিইইইইইইত...”স্বপ্নে অনীতার আর্ত চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। উঠে হাতে মুখে পানির ঝাপটা দেয় সে, কিন্ত্ত তাতেও অস্বস্তি যাচ্ছে না দেখে ছড়ার পানিতে গোসল সেরে নেয়।

তারপর আনমনে হাটতে হাটতে গ্রামের সীমানা ছাড়িয়ে মাধবকুন্ডের কোল ঘেঁষা পাহাড় বেয়ে ওপরে উঠে যায়। ঘুরে ফিরে তার শুধুই মনে পড়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা। অনীতার কথা। কতবার বন্ধুরা বলেছে, “এতোই যদি পছন্দ করিস, তবে বলছিস না কেন ওকে!” কিন্ত্ত অসিত তখন কেবল পড়াশোনাতেই মন ডুবিয়ে রেখেছিল, অন্য কোন কিছুর দিকে মন দেবার অবসর তখন তার ছিল না। কিভাবে বুঝিয়ে বললে যে অনীতা রাজি হবে! সে চিন্তার মহাসাগরেই হাবুডুবু খায় তার মন।

ভাবতে ভাবতে কখন যে সে ঠিক জলপ্রপাতের ওপরে পৌঁছে যায়, টেরই পায় না। ঐ তো অনীতা! ঐ তো আসছে তার অনীতা! পৃথিবীর কোন কিছুই তাকে তার অনীতার কাছ থেকে আর দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। প্রয়োজনে সেই থেকে যাবে তার অনীতার কাছে, ব্যাংক-সংসার-মা-বাবা সব কিছু পেছনে ফেলে। পাহাড়ের ওপর থেকে নীচে সশব্দে পানির আছড়ে পড়ায় আর কোন কিছুই কানে আসে না অসিতের। নীচ থেকে অনীতা চিৎকার করে বলে,“আর এগিয়ে যেয়ো না অসিত, তোমার সামনে দেখো।

তুমি নীচে পড়ে যাবে! অসিইইইইত!” কিন্ত্ত তখন আর সামনে দেখে না অসিত। তার মন জুড়ে তখন শুধুই অনীতা, অনীতার কথা, অনীতার হাসি। নীচে পানির আছড়ে পড়ার শব্দ, আর বাষ্পের ধোঁয়াটে উপস্থিতি যেন এক স্বর্গীয় আবহ তৈরী করে তার মনে। আর এর মাঝে সেখানে অনীতাকে দেখে কোন দেবী বলে ভুল হয় তার। কোনভাবেই আর হারানো যাবে না অনীতাকে।

এগিয়ে যায় সে, অনীতাকে একটু ছোঁবে বলে। কিন্ত্ত পাহাড়ের ওপর দলিয়ে থাকা কাদার ওপর পা দেয় অসিত, আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিছলে যায় তার পা। পাহাড়ের ওপর থেকে নীচে পড়তে পড়তে শুধু শুনতে পায় অনীতার আর্ত চিৎকার,“অসিইইইইইইইইইত...”অসিতের নিথর শরীর পানি থেকে উঠিয়ে আনা হয়। ডাক্তার, হাসপাতাল – কোথাও কেউ তার নিঃষ্প্রাণ দেহে প্রাণের সঞ্ছার করতে পারে না। এ পর্যন্ত বলে চঞ্ছল ভাই চুপ করে থাকেন।

তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,“আমি যখন প্রথম এখানে এলাম, তখন থেকেই দেখছি অসিত বরণ পাল বলে এক লোকের পিন্ডদানের জায়গা রয়েছে মাধবকুন্ড ঝর্ণার উল্টো দিকে। আর প্রতি সন্ধ্যায় দেখতাম এক বুড়ি এসে এ পিন্ডদানের জায়গায় মোমবাতি জ্বালাতো। ” আমি এগিয়ে গেলাম অসিতের কবরের দিকে। যদিও বা তার শরীরের কোন অংশ সেখানে নেই, তবু তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নুয়ে এলো। সেদিন সন্ধ্যায় আমরা নুতন করে মোমের আলোয় আলোকিত করেছিলাম তার ভালোবাসার অধিষ্ঠান।

আর অনীতার কথা...না, তার কথা আর জানা হয়নি চঞ্ছল ভাইয়ের কাছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.