আগের পর্ব -
Click This Link
ইশকুলের ডাক
মামাবাড়ীর রসের হাড়ি ফেলে ফিরে এলাম ইশকুলের ডাকে। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে গ্রীষ্মের ছুটির পর। ট্রেনে চেপে ফিরলাম বাড়ী। তখন যদিও ডিজেল ইঞ্জিন চলে এসেছিলো তারপরও মাঝে মাঝে কয়লার ইঞ্জিন দেয়া হতো। আমার অভ্যাস ছিলো জানালা দিয়ে মাথা বের করে সব কিছু দেখার চেষ্টা করা।
ফলে প্রায়ই চোখে ধূলাবালি ঢুকতো। সমস্যা তৈরী হতো কয়লার ইঞ্জিন দিলে। ধোঁয়া বেশী, কয়লার গুঁড়া, ধূলাবালির উৎপাত বেড়ে যেতো। সেবার ফেরার পথে নোয়াখালী অংশে লোকাল ট্রেনে কয়লার ইঞ্জিন দেয়া হলো। ফলে মাথা বের করা বন্ধ হয়ে গেলো।
ভ্রমনের শেষাংশটা আমার জন্য বড়োই নিরানন্দময় হয়ে গেলো। জানালা দিয়ে মাথা বের না করে ট্রেনে যাওয়া সম্ভব ? আমার কাছে সেটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। এখনো।
অঙ্কাতঙ্ক !
মায়ের পাখার ডাঁটের মার খেয়ে বাংলা বর্ণমালা শেখা হয়ে গেলো এক সন্ধ্যায় ! ( বর্ণনা আগেই দিয়েছি) কিন্তু অঙ্কের কি গতি ? ক্লাস ওয়ান টু'তে আমাদের কালে শুধু ছিলো বাংলা আর অঙ্ক। নোয়া স্যার বাংলা পড়াতেন।
সেটা বেশ মজা পেতাম। ( নোয়া স্যারের কথা আছে অখ্যাত আমার বিখ্যাত শিক্ষকেরা সিরিজের ২য় পর্বে) সোলেমান স্যার আমাদের অঙ্ক করাতেন। কি কারণে যেনো বুঝতে পারতাম না। শুরু হলো অঙ্ক ভীতি। ভীতি বললে পুরো বোঝা যায় না, রীতিমতো অঙ্কাতঙ্ক ! অঙ্ক না পারলে সোলেমান স্যার আবার মারতেন।
ফলে আতঙ্কটা আরো বেড়ে গেলো। সোলেমান স্যারের অঙ্ক ক্লাসের ভয়ে শুরু হলো স্কুল পালানো।
পাট ক্ষেতে ক্লাস !
স্কুলে যাবার পথে পাট ক্ষেত ছিলো আমাদের। বেশ লম্বা লম্বা পাট গাছ। বাড়ী থেকে স্কুলের নাম করে বের হয়ে আস্তে করে ঢুকে যেতাম পাট ক্ষেতে।
প্রথম দু'এক দিন সমস্যা হলো না। সমস্যা হলো যেদিন আমার চাচাতো ভাইকে আমার সাথে দেয়া হলো। সে কিছুতেই পাট ক্ষেতে ঢুকতে রাজী না। প্রথম দিন কোন মতে রাজী হলো। পরের দিন সে রাজী হলো না।
পরে তার সাথে চুক্তি হলো তাকে আমি চকলেট খাবার পয়সা দেবো তার বিনিময়ে সে আমার পাট ক্ষেতে ক্লাস করার বিষয়টি চেপে যাবে। এভাবে চললো দু'তিন দিন। ভেজাল লাগালেন হেড স্যার। আব্বাকে বাজারে পেয়ে বললেন, আপনার ছেলে স্কুলে আসছে না কেন ? আব্বাতো আকাশ থেকে পড়লেন। বাড়ী এসে চেপে ধরলেন আমাকে।
সাথে চাপ দেয়া হলো সেই চাচাতো ভাইকে। সে আমার দেয়া চকলেট খাবার বিষয়টি বেমালুম ভুলে গিয়ে গড়গড় করে সব বলে দিলো। আব্বা মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন। আম্মা সেটা করলেন না। আবার খেলাম পাখার ডাঁটের মার।
চিৎকার শুনে দৌড়ে এলেন দাদী। আব্বা আম্মা দু'জনকেই বকা দিলেন। বললেন, সে কেন স্কুল পালালো তার কারণ কি জিজ্ঞেস করেছো ? দু'জনেই নিরুত্তর। তখন দাদীই আমার কাছে কারণ জানতে চাইলে জানালাম অঙ্ক ভীতি এবং সোলেমান স্যারের মারের কথা। তখন দাদী আব্বাকে বললেন হেড স্যারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে।
আব্বা রাতেই হেড স্যারের সাথে কথা বললেন।
পর দিন স্কুলে গেলাম। নোয়া স্যার বললেন, স্কুলে আসো নি কেনো ? আমি চুপ করে রইলাম। স্যার বললেন, আর যেন স্কুল কামাই না করি। কিন্তু পরের ক্লাসে সোলেমান স্যার ঠিকই মার দিলেন।
বাড়ী ফিরে আম্মাকে জানালাম বিষয়টা। রাতে আবার আব্বা দেখা করলেন হেড স্যারের সাথে।
পর দিন থেকে হেড স্যার নিজে এলেন অঙ্ক ক্লাসে। এমনিতে হেড স্যার প্রচণ্ড রাগী হলেও ক্লাসে পড়াতেন দারুন। অঙ্ক না বোঝার জন্য কখনো রাগ করেননি কারো সাথে।
ধৈর্য ধরে বারবার বুঝিয়েছেন। ফলে কেটে গেলো আমার অঙ্ক ভীতি। সাথে স্কুল ভীতিও। বাকী জীবনে আর কখনো ক্লাস ফাঁকি দিইনি। বিশ্ববিদ্যালয়েও আমার হাজিরা ছিলো শতভাগ।
সব স্যারের প্রিয় ছাত্র হবার পেছনে এই শতভাগ হাজিরার একটা ভূমিকা অবশ্যই ছিলো। ফলে বিশ বছর পরেও স্যারদের সাথে দেখা হবার পর স্যাররা নাম ধরে ডেকে আমাকে অবাক করে দিয়েছেন।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।