আগের পর্ব -
Click This Link
মামাবাড়ীর স্থান বদল !
আমার নানার বাড়ী বদলের একটা অভ্যাস ছিলো। পূর্বপুরুষের ভিটা ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়ার সুলতান পুরেই। বৃটিশ আমলে তখনকার জেলা শহর আগরতলায় চলে গিয়েছিলেন। (এক সময় কুমিল্লা জেলার নাম ছিলো পশ্চিম ত্রিপুরা) ১৯৫০ এর দশকে চলে আবার আসেন পূর্ব পুরুষের ভিটায়। ১৯৭০ সালের কোন এক সময় (ঠিকভাবে আম্মাও বলতে পারেন না।
আমি তো তখন নেহায়েতই শিশু) তিনি চলে গেলেন তখনকার সিলেট এখনকার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। চা বাগানের ভেতর গহীন এলাকায় পাহাড় কিনে করলেন আনারস বাগান। সাথে কাঁঠাল, কলা আর লেবু। নিজের বাগান আর অন্যের বাগান থেকে কেনা আনারস আর লেবু সাপ্লাই দিতেন নাবিস্কো বিস্কুট কোম্পানীতে। তখন কেউ কেমিক্যাল দিয়ে এখনকার মতো ফ্লেবার দিতো না।
আসল ফলই দিতো। পাইনআপেল বিস্কুটে আনারস ব্যবহার করা হতো। লজেন্সে ব্যবহৃত হতো লেবু। বিস্কুটেও। যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাড়ীও নিয়ে গেলেন সেই গহীন পাহাড়ে।
ফলে সুলতান পুরের সাথে আমার সম্পর্ক চুকে গেলো চিরকালের মতো। সেখানে আমার মায়ের চাচাতো ফুফাতো ভাই বোনদের কেউ কেউ আছে।
শেষ পর্যন্ত নানা নানীর কবরও হয়েছে শ্রীমঙ্গলের সেই গহীন পাহাড়ে। অথচ আমার এক মামা চলে এসেছেন শ্রীমঙ্গল শহরে আরেক জন ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া শহরে। নানা নানী আক্ষরিক অর্থেই জোড়া বেঁধে রয়ে গেলেন সেখানে।
নতুন পথে মামাবাড়ী গমন
ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়ার বদলে শ্রীমঙ্গল যাবার জন্য পথে একটু বদল হলো। লোকাল ট্রেনে নোয়াখালী (মাইজদী কোর্ট/ বর্ষায় হরিনারায়নপুর। কারণ আমাদের নৌকাঘাটটি ছিলো ওখানে। ) থেকে লাকসাম জংশন পর্যন্ত। লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী উল্কায় আখাউড়া।
আখাউড়া থেকে সিলেটগামী উল্কা এক্সপ্রেসে শ্রীমঙ্গল। অর্থাৎ দুই বার ট্রেন বদল। আমরা মূলত ভ্রমন করতাম সেকেণ্ড ক্লাসে। মাঝে মাঝে ঠেকায় পড়লে ক্লাস ওঠা নামা দুটোই করতো। ফলে সিটের সমস্যা ছিলো।
আগে আসিলে আগে জায়গা, পরে আসিলে দণ্ডায়মান। নোয়াখালী থেকে সীট পেতাম। লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত বেশীরভাগ যেতে হতো দাঁড়িয়ে। তবে এ ৪৫ মাইল পথ বেশীরভাগ সময় উল্কা এক্সপ্রেস দেড় থেকে পৌনে দু ঘন্টায় পাড়ি দিতো। উল্কা যদি লেট না করতো আখাউড়ার উল্কায় সিট পেতাম।
দেরী হলে দাঁড়িয়েই যেতে হতো। খুব বেশী হলে আম্মার জন্য সীট মিলতো। অনেক সময় পুরুষ যাত্রীরা উঠে দাঁড়িয়ে মহিলাদের সীট ছেড়ে দিতো।
আখাউড়া পর্যন্ত তো আমার আগের চেনা। নতুন পথে যেতে যেতে নতুন দৃশ্য, নতুন নামের স্টেশন- আজমপুর, মেরাশানী, মুকুন্দপুর, হরষপুর ইত্যাদি।
সে সময় নোয়াখালী থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত সব রেল স্টেশনের নাম বলতে পারতাম ধারাবাহিকভাবে। আখাউড়া থেকে ছাড়ার পর ছোট ছোট টিলা আর ঝোপঝাড় ছিলো। শায়েস্তাগঞ্জ পার হবার পর রশীদপুর থেকে ছাড়ার পর সাতগাঁও হয়ে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ছিলো ঘন বন। দিনের বেলাতেই ট্রেনের ভেতরটা আঁধার হয়ে যেতো। লাউয়াছড়া হয়ে শমসেরনগর, ভানুগাছ পর্যন্ত ছিলো সেই ঘন বনের ব্যাপ্তি।
এ অংশটুকুতে বনের চিহ্ণ কিছু থাকলেও রশীদপুর, সাতগাঁও এলাকায় তার কোন চিহ্ণই এখন আর নেই। অথচ সেই বুনো পথটাই ছিলো আমাদের রেল ভ্রমনের বাড়তি আনন্দের উৎস।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।