আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মামাবাড়ী, ইশকুল ! ...১



Click This Link নীলজল শৈশব নামে ৭ পর্বে ঘোর শৈশবের কিছু ফিরিস্তি পেশ করেছিলাম প্রায় দেড় বছর আগে। (উপরে লিঙ্কু দিলাম) তখনই পরিকল্পনা ছিলো তার পরের অংশও সবার সাথে শেয়ার করবো। এটা সেই কথারাখার জন্যই শুরু করলাম। হাতিয়া থেকে ফিরে নোয়াখালীতে গ্রামের বাড়ীতে থাকতে শুরু করি। আব্বা চাকরী করতেন রামগতি( উত্তর হাতিয়া বলা হতো তখন)।

বাড়ীতে আমাদের আলাদা ঘর তখনো হয়নি। উঠলাম বড়ো জ্যেঠার দালানে। পাশের ঘরে দাদাদাদী আর সেজ জ্যেঠার পরিবার থাকতেন। এখন যেমন যখন তখন বেড়াতে চলে যাই তখন সেটা এতো সহজ ছিলো না। যাতায়াতের সমস্যার পাশাপাশি বেড়াবার খরচের কারণে খুব কম বেড়ানো হতো।

ফুপুদের বাড়ী গেলে হেঁটে যেতে হতো। মাঝে মধ্যে রিকশায়। আর বর্ষাকালে নৌকায়। সত্যিকারের বেড়ানো বলতে আমার মামাবাড়ী ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় বেড়ানোকেই বুঝতাম। গ্রীষ্মের ছুটিতে এক মাসের জন্য চলে যেতাম সেখানে।

ফলে মামাবাড়ীতে বেড়াতে যাওয়াটা ছিলো ভীষণ আনন্দের। কারণ শাসন বা ধমকের কোন বিষয় ছিলো না মামাবাড়ীতে। মামাবাড়ীতে বেড়ানোর ঠিক বিপরীত ছিলো ইশকুলে যাওয়া। নিমপাতার তিতাও ফেল ইশকুলের কাছে। দুই ঘোর বিপরীতের হাতেই কেটেছে শৈশবের এই অংশ।

হাতে খড়ি আমার লেখা পড়ার হাতে খড়ি হয়েছে আমার ভীষণ রাগী মায়ের হাতে। এখনকার মতো রঙিন বইয়ের বালাই ছিলো না তখন। আনা হলো আদর্শ লিপি। কালোর বদলে লাল হরফ। এই ছিলো রঙের বাহার।

বড়ো লাল হরফে লেখা স্বরে অ স্বরে আ করতাম। গরমের জন্য হাতে যে পাখা ছিলো সেটাই উল্টে গিয়ে বেত হয়ে পিঠের ওপর হামলে পড়তো। সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর আমাকে নিয়ে পড়তে বসলে আম্মার মেজাজ যেন আরো চড়ে যেতো। পাখার ডাঁটও পড়তে থাকতো। একা হাতে সংসার সামলানো।

আমি ছাড়াও ছোট আরো একভাই আর এক বোন ছিলো। বাজার করা ধান চালসহ অনেক কিছু ঘরে থাকলেও বাজার করতে হতো। বাজারে যেতাম আমি। বাড়ীর কাছেই বাজার। একত্রে মনে রাখতে পারতাম না বলে একটা একটা করে আনতে যেতাম।

১৯৬৮ সালের শেষ দিকের কথা মনে আছে। চাউল ছিলো দশ আনা (বাষট্টি পয়সা) সের। ফলন খারাপ হলে কিছু কিনতে হতো। সরিষার তেল আধা পোয়া (একশ পঁচিশ গ্রাম প্রায়) আট আনা (পঞ্চাশ পয়সা)। তার মানে চার টাকা সের।

সব চেয়ে লম্বা আখ কিনতাম দশ পয়সায়। বেগুন চার আনা সের। তরিতরকারী এখনকার মতো একই তরকারী সারা বছর সব মিলতো না। শীতকাল ছিলো তরকারীর জন্য ভালো। তখন দেশী জাতের আলু হতো।

শীতের কিছু দিন পর সেটা ফুরিয়ে যেতো। এখন যে রকমের বড়ো আলু পাওয়া যায় সেটা তখন মাত্র চাষ শুরু হয়েছে। মুরুব্বীরা সেটা খেতে চাইতেন না। বলতেন পানসে আলু। লাল রঙের মূলা হতো।

খুব ঝাঁঝালো। বেগুন হতো। লালশাক। আর মসুর, কলাই,মুগ, খেসারী,মটর প্রভৃতি ডাল। নোয়াখালী এলাকায় স্পেশাল ডাল ছিলো ফেলন(হেলন) ডাল।

এখনো চরাঞ্চলে এর চাষ হয়। বরবটি গাছের মতো ছোট ছোট গাছ, বরবটির মতো ছোট ছোট সীমের ভেতর বিচি। খুবই সুস্বাদু। তখনই পালং শাক, ফুল কপি, বাঁধা কপি, সালগম চাষ শুরু হয়। আইউব খানের আমলের শেষ দিকে আলুসহ এইসব চাষাবাদ এদেশে শুরু হয়।

জমিতে দমকল দিয়ে সেচের শুরুও তখন। আমার দাদাও একটা দমকল কিনলেন। ফলে দোন দিয়ে জমিতে পানি দেবার পালা ফুরিয়ে গেলো। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।