আগের পর্ব -
Click This Link
পাকা জামের মধুর রসে...
আমার মায়ের চাচাতো ভাই মনির আমাদের প্রায় সমবয়সী। গ্রামীন ভাষায় হয়ে গেলো মইন্যা। এ মইন্যা মামার সাথে একদিন চললাম দূরের পাহাড়ে। মামার হাতে লম্বা ধারালো দা আর আমার হাতে বাঁশের ছোট লাঠি। তখনো সব পাহাড়ে মানুষের কারিগরী ফলানো সম্ভব হয়নি।
চা আর আনারস বাগান ছাড়া অনেক পাহাড় ছিলো খাঁটি জঙ্গলে ছাওয়া। ফলে বন্য প্রাণীদের আনাগোনা ছিলো। সাথে সাপের ভয়। এখনো চা বাগান এলাকায় বিষাক্ত সাপের প্রাচুর্য রয়েছে। তবে অন্য প্রাণীরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে বললেই চলে।
সেই বুনো পাহাড়ের প্রাকৃতিক খাবারের ওপর ভরসা করে সচ্ছ্বল লোকেরা প্রচুর গরু পালতেন।
বুনো জগৎ বলে নিরাপত্তা ও কাজ হাসিলের জন্য ধারালো লম্বা দা সবার অপরিহার্য সঙ্গী ছিলো। মামার সাথে চলে গেলাম বুনো পাহাড়ে। আম্মা একটু আপত্তি করলেও নানীর জন্য সেটা টেকেনি। নানীর কথা, মইন্যা আছে, ভয় নেই।
বনের ভেতর হাঁটতে গিয়ে সমস্যায় পড়লাম। ঘাস, লতা গুল্ম আর কাঁটাযুক্ত গাছের জন্য হতে পা ছড়ে একাকার। মামা সাথে সাথে পাহাড়ী গাছের পাতার রস ঘষে নিরাময় করে দিচ্ছিলেন। বেশ দুর্গম একটা পথ পেরিয়ে পৌঁছুলাম মোটা এক গাছের পাশে। এত মোটা গাছ আমি এর আগে দেখিনি।
এখনতো বাংলাদেশে সেরকম গাছ পাওয়াই অসম্ভব। অন্তত তিনজন মানুষ হাত ধরাধরি করেও পুরো গাছটি বেড় পাবেন না। মামা বললেন, এটা জাম গাছ। এত মোটা গাছে চড়বো কিভাবে ? মামা বনের ভেতর থেকে একটা বাঁশ টেনে বের করলেন। বুঝলাম এখানে প্রায়ই তার পা পড়ে।
বাঁশের দুপাশের কঞ্চি একটু বাড়তি রেখে বাকীটা কাটা। মামা সে বাঁশটি গাছের উঁচু ডালের সাথে ঠেকিয়ে ধরে বললেন, আমি বাঁশ ধরে আছি। তুই উঠে যা। যেহেতু গাছে চড়ার অভ্যাস ছিলো তাই উঠতে শুরু করলাম বাঁশ বেয়ে। মামা অবশ্য কৌশলটা বলে দিয়েছিলেন।
তারপরও কাঁপতে কাঁপতে উঠে গেলাম। তরতর করে উঠে এলেন মামা।
আমাকে মোটা একটা ডালের ওপর বসিয়ে রেখে উঠে গেলেন ওপরের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখলাম কোঁচা ভরা বিশাল বিশাল কুচকুচে কালো জাম নিয়ে নামলেন। ওখানে বসেই খাওয়া শুরু হলো।
দারুন মিষ্টি ! তারপর মামা কোঁচা থেকে মরিচগুঁড়া মেশানো লবন বের করলেন। তাতে স্বাদের মাত্রা বেড়ে গেলো দারুন। জাম খাওয়া শেষ হবার পর মামা আবার মগডালের দিকে গেলেন। আবার আনলেন কোঁচা ভরা জাম। বাড়ী নেবেন বলে।
বাঁশ বেয়ে নামাও আরেক হাঙ্গামার কাজ !
এরপরও মামার সাথে আরো কয়েকবার সেই গাছে চড়েছি। বনে বনে ঘুরেছি অনেক। মামা বন মোরগও ধরেছেন বেশ কয়েক বার। স্বাদটা প্রায় একই রকম। কিঞ্চিৎ বেশীই।
চা অভিযান
মইন্যা মামার সাথে বের হলাম চা অভিযানে। বাগানে ঢুকে চা পাতা তুললাম। বাড়ী এনে পিষে রোদে শুকানো হলো চা। তারপর পাতিলে দিয়ে ভাজা হলো চা পাতা। বিচ্ছিরি চেহারা ধরলো।
চা বানাবার পর দেখলাম মুখে তোলা যাচ্ছে না। চা অভিযান পুরোটাই মাঠে মারা গেলো !
ছড়ার পারে দুই ঘন্টা
পথ চলার সময় মাঝে মাঝেই ছড়া পার হতে হতো। ঝির ঝির করে বয়ে চলে পানি। অবিশ্বাস্য রকমের স্বচ্ছ্ব। নানা মোড় ঘুরে ঘুরে চলে।
মাঝে মাঝে দেখা যায় সেরকম কিছু মোড়ে এক পাশে গভীর পুকুরের মতো পানি জমে আছে। সেখানেই আমরা মাঝে মাঝে গোছল করতে যেতাম। এছাড়া অল্প পানির জায়গায় মগ দিয়ে পানি ঢেলে গোসল করতাম। অন্য সময় কুয়ার পানি তুলে।
একদিন মইন্যা মামার সাথে গেলাম পাহাড়ে।
শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বড়ো একটা গাছের পাতা দিয়ে শরীর বাঁচালাম পানি থেকে। বড়ো একটা গাছের নীচে দাঁড়াবার পর ঝামেলা একটু কমলো। বুষ্টি হলো প্রায় ৪৫ মিনিট। বৃষ্টি থামার পর বাড়ীর পথে চললাম।
ছড়ার পারে এসে চক্ষু চরকগাছ ! তীর বেগে ছুটে চলেছে ঘোলা পানির স্রোত। পানির উচ্চতা ছাড়িয়ে গেলো হাঁটু। অগত্যা বসে থাকতে হলো ছড়ার পারে। দুই পারেই জমে গেলো অনেক লোক। দু'ঘন্টার বেশী পরে পানি কমে যখন দৃষ্টিগ্রাহ্য হলো তল দেশ তারপর সবাই পার হলাম ছড়া।
মামার কাছে জানলাম প্রবল স্রোতের তোড়ে পানির নীচ দিয়ে গাছের গুঁড়ি পাথর এসব চলে আসে। স্রোতের সময় পার হতে গেলে সেগুলোর আঘাতে স্রোতে ভেসে যাবার ভয় আছে। তাই তলদেশ দেখা দেবার আগে কেউ পার হয় না।
এখণ অবশ্য রাস্তার মাঝ দিয়ে যাওয়া ছড়াগুলোর ওপর সেতু আছে। তারপরও সবগুলোর ওপর সেতু নেই।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।