আগের পর্ব -
Click This Link
ময়না পাখির খোঁজে...
মইন্যা মামার এক জোড়া ময়না পাখি। খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারে। একই খাঁচায় থাকে ওরা। এদের দেখে মামার কাছে ময়না পাখির জন্য বায়না ধরলাম। মামাও রাজী হলেন বন থেকে ধরে এনে দেবেন।
তবে কাজটা নাকি খুব কঠিন। ময়না বাসা করে গাছের অনেক ওপরের দিকে। ওই ডাল পর্যন্ত নাকি ওঠা কঠিন। সরু ডাল ভেঙে পড়ার ভয় থাকে। তারওপর থাকে বিষাক্ত সাপের ভয়।
মামা অনেক খোঁজাখুঁজির পর বললেন, তিনি একটা ময়নার বাসার সন্ধান পেয়েছেন। শুনে আমিতো খুশীতে আটখানা। কখন ময়নার খোঁজে যাবেন সে জন্য তাঁকে অস্থির করে তুললাম। অবশেষে এক দুপুরে মামা ভাগ্নে চললাম ময়নার ছানার সন্ধানে। অনেক কষ্টে গহীন জঙ্গলে পৌঁছালাম।
ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হবার যোগাড়। খুব সাবধানে নি:শব্দে গেলাম। মামা আমাকে নীচে রেখে সন্তর্পনে গাছে চড়লেন। বেশ সময় নিলেন নি:শব্দে ওঠার জন্য।
উত্তেজনা নিয়ে নীচে অপেক্ষা করছি।
এমন সময় হুড়মুড় শব্দের সাথে সাথেই ধুপ করে পড়লেন মামা। পড়েই বললেন, মামা দৌড় মারো। মামার পেছন পেছন দৌড় দিলাম। ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ী পথ। দৌড় মারা কি কথার কথা ? বেশ কিছুদূর আশার পর মামা বললেন, গোখরা সাপ ! চার টা !
প্রাণপনে ছুটে বের হলাম সেখান থেকে।
ময়না পাখির শখ ওখানেই শেষ !
খাঁচায় পোরা বনের হরিণ
একদিন মইন্যা মামা জানতে চাইলেন হরিণ দেখেছি কিনা ? উত্তর যথারীতি ''না''। বললেন, চল হরিণ দেখে আসি। গ্রামের একজনের বাড়ীতে নাকি হরিণ আছে। মামার সাথে চললাম হরিণ দর্শনে। জীবনে প্রথম হরিণ দেখার উত্তেজনায় তখন অস্থির।
আমার ধারণা ছিলো হরিণ হয়তো খোলামেলা জায়গায় স্বাধীনভাবে আছে। পৌঁছে দেখি আসলে তা না। একটা বড়ো জায়গা খাঁচার মতো ঘেরা। একটা বড়ো হরিণ আর একটা বাচ্চা। বড়োটার মাথায় শিং আছে।
ছোটটপর নেই। ছোটটাকে দেখতে ছাগলের বাচ্চার মতো লাগছিলো। আমি অবাক হয়ে গেলাম হরিণের ঘাস খাওয়া দেখে। এটা তো গরু ছাগলের খাবার ! আমি ভেবেছিলাম হরিণ নিশ্চয়ই স্পেশাল কিছু খায়।
হরিণের শিং, বাঘের ছাল
আমার নানা ছিলেন নাম করা শিকারী।
বিভিন্ন সাইজের বিশের অধিক বাঘ শিকার করেছেন। হরিণ শিকার করেছেন বেশুমার। শিকারী হিসাবে চিহ্ণ রেখেছেন সারা বাড়ী জুড়ে। বিভিন্ন জায়গায় হরিণের শিং লাগানো ছিলো। এর কিছু ব্যবহার হতো জামা কাপড় ঝুলিয়ে রাখার জন্য।
আমাদের গ্রামের বাড়ীতে তার একটা এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে সে কাজে। অনেক দিন হয়ে যাওয়ার রংটা চটে গেছে তার।
নানার ঘরের দেয়ালে বেশ কয়েকটি বাঘের ছাল পেরেক দিয়ে আটকে রাখা ছিলো। দু'একটা ছালের সাইজ আসলেই চোখ কপালে ওঠার মতো।
রাতের বেলার চিৎকার !
এক রাতে বিকট চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।
ভয়ে আমিও চিৎকার শুরু করলাম। থামলাম আম্মার ধমক খেয়ে। পরে জানলাম ঘুমের মধ্যে নানাভাই মাঝে মাঝে ভয়ে চিৎকার করে ওঠেন। কারণটা শুনেছি নানীর কাছে। নানাভাই একবার বিশাল এক বাঘকে গুলি করেছেন।
সেই কালে রাইফেল তো ছিলো না। ছিলো গাদা বন্দুক। কার্তুজ ভরে একবার গুলী করার পর আবার কার্তুজ ভরে গুলী করতে হতো। পর পর গুলী করার সুযোগ ছিলো না। ফলে শিকার করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো।
গুলী না লাগলে শিকারীর খবর ছিলো। নানাভাই গুলী করার সাথে সাথে বাঘটা তার দিকে লাফ দেয়। নানাভাই ভেবেছিলেন গুলী বোধ হয় লাগেনি। ভয়ে চিৎকার করে গাছ জড়িয়ে ধরেন। বন্দুক ফেলে দেন তার আগেই।
ওভাভেই নাকি অজ্ঞান হয়ে নীচে পড়ে যান। ঘটনাক্রমে গুলীটা বাঘের হৃৎপিণ্ডে লেগেছিলো বলে বাঘ মরেছে, নানাভাই বেঁচে যান। কিন্তু সেটাই নানাভাইয়ের শেষ শিকার হয়ে যায়। নানী তাকে আর কখনো বন্দুক ছুঁতে দেননি। কিন্তু নানাভাই সেই যে ভয় পেয়েছেন মৃত্যু পর্যন্ত সেই ভয় বয়ে বেড়িয়েছেন।
প্রায়ই ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠতেন।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।