আগের পর্ব -
Click This Link
ট্রেনের জানালায় মাথা আটক !
ফিরছিলাম উল্কায়। তখন মহিলাসহ ওঠার জন্য আলাদা কোচ ছিলো। জানালাগুলোতে আনুভূমিক করে রড দেওয়া ছিলো। আমার ছোট ভাই সেই রডের ফাঁক দিয়ে মাথা বের করতে গিয়ে মাথা আটকে গেলো। মাথা আটকানোর পর শুরু হলো তার গগণবিদারী চিৎকার।
মাথা বের করা যাচ্ছিলো না। ট্রেনের ঝাঁকুনীর জন্য কাজটা আরো কঠিন হয়ে গেলো। অনেক কষ্ট করে সে মাথা বের করা হলো। দুই কান লাল হয়ে গেলো। সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
চেন টানা
কোচের ভেতর একটু উঁচু জায়গায় একটা চেনের মাথা বের হয়ে ছিলো। সাথে টান দেবার ব্যবস্থা। নীচে লেখা- বিনা প্রয়োজনে চেইন টানিলে ৫০ টাকা দণ্ড দিতে হইবে। এটা দেখতাম সব সময়। চেন টানলে কি হয় সেটা দেখার খুব শখ ছিলো।
সে যাত্রা সুযোগ মিলে গেলো। খুব দ্রুত বেগে চলমান ট্রেন হঠাৎ ঠং ঠং শব্দ করে থেমে যেতে লাগলো। একসময় থেমে গেলো ট্রেন। মাঝ রাস্তায় কেনো থামলো ট্রেন ? জানা গেলো চেন টানা হয়েছে। শেষ অব্দি জানা গেলো একজন তার ছোট বাচ্চাকে জানালার কাছে নিয়ে বসেছিলো হঠাৎ সে ছেলে জানালা দিয়ে ট্রেন থেকে পড়ে গেছে।
সবার ধারনা ছিলো বাচ্চাটি হয় মরে গেছে না হলে গুরুতর আহত হয়েছে । অনুমান করার বিষয়ে লোকজন যে কতোটা সৃজনশীল সেটা বোঝা যায় এ ধরনের ঘটনায়। অবশেষে সবাইকে অবাক করে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেলো সেই শিশুকে। কপালগুনে রেল লাইনের পাশে জমিয়ে রাখা বালির ওপর পড়েছিলো বাচ্চাটি। যারা বাচ্চাটির অবস্থা নিয়ে নানা রকম কল্পনা করেছিলো তারা মুখ হাঁড়ি করে চুপ করে রইলো।
বাচ্চাটি মরে যায়নি দেখে তারা যেন খুব মর্মাহত হলো।
লাকসামে বিপত্তি
উল্কা থেকে নামলাম লাকসাম। ওটা চলে গেলো চিটাগাং। আমরা নোয়াখালীর লোকাল ট্রেনের জন্য বসে আছি। অনেক অপেক্ষার পর ঠেলাঠেলি করে উঠলাম।
এরপর দেখি ট্রেন আর ছাড়ে না। একে ওকে সবাই জিজ্ঞাসা করে কোন হদিশ মিললো না। অনেক পড়ে জানা গেলো দুটো লোকাল ট্রেনের বগি এক সাথে লাগানো হয়েছে বলে ড্রাইভার ট্রেন চালাতে রাজী হচ্ছেন না। আরেকটা ইঞ্জিন চাচ্ছেন বাড়তি। পরে কিভাবে তার মীমাংসা হলো সেটা আর মনে নেই।
প্রায় ৩/৪ ঘন্টা বসেছিলাম সেটা মনে আছে।
জার্নি বাই বাস
ট্রেন থেকে নেমে বর্ষাকালে নৌকায় যেতাম আর শুকনার কালে রিকশায়। সে বার হলো ব্যতিক্রম। রিকশায় উঠলাম ঠিকই। নেমে গেলাস একটু পরে।
উঠলাম বাসে। বিখ্যাত মুড়ির টিনে। ড্রাইভারের পেছনের বিশেষ কেবিনে উঠলাম আমরা। কাঠের সিটের ওপর নারকেলের ছোবড়া ভরা রেকসিনের সিট। গদি আরকি !
বাসে উঠে মজাই লাগলো।
মজাটা কমতে শুরু করলো। বাস দেখি ছাড়ে না। বেশ পরে বাস ছাড়লো। সামনে পেছনে ছাদে মানুষ আর মালে ঠাসা। সাথে হাঁস মুরগী মায় ছাগল পর্যন্ত উঠলো প্যাসেঞ্জার হিসাবে।
নরক গুলজার অবস্থা। শহরের রাস্তাটা হেলে দুলে পার হবার পর নামলো কাঁচা রাস্তায়। ক্যাঁচকুঁচ শব্দ তুলে হেলে দুলে চললো। কিছুক্ষণ পরপর ভঁৎ ভঁৎ করে হর্ন বাজে। লোকজন, রিকশা, সাইকেল কেউ বাসকে সাইড দিতে চায় না।
খুব অনিচ্ছায় একপাশে সরে বাসের দিকে বিরক্তি নিয়ে চেয়ে থাকে। বাকীরা সরলেও সমস্যা হয় গরু নিয়ে। কোন কোন গরু ভয় পেয়ে দিকবিদিক ছুটতে শুরু করে। কোনটা বাসের সামনে সামনে ছোটে। কোন কোনটা রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
কেউ কেউ এমন ভাবে গরু বাঁধে সেটা চাইলেও রাস্তা থেকে সরতে পারে না। অনেক সময় উল্টৈাদিকে ছুটতে গিয়ে দড়িতে প্যাঁচ লেগে দাঁড়িয়ে পড়ে আকাশ ফাটিয়ে হাম্বা হাম্বা করতে থাকে। তখন বাস থামিয়ে হেলপার বা ঝুলে চলা যাত্রীরা নেমে গরু সরিয়ে বেঁধে দিয়ে বাসে ওঠার পর বাস ছাড়ে।
যাত্রী ওঠা নামার সময় সব চলে গদাই লস্করী চালে। এখন লোকজন নিজের গাড়ী থেকেও এরচেয়ে দ্রুত নেমে আসে।
সামনের যাত্রীরা নামার পর পথ খালি হলে ওনারা ধীরে সুস্থে নামেন। মালামাল নামে। সেটা আবার খোঁজাখুঁজি চলে। সীটের নীচে গড়িয়ে কোথায় গেলো সেটা তার তালাশ করতেও সময় লাগে।
যাত্রী ওঠারও কায়দা ঢিমে তেতালা।
একজন মাঠের ভিতর দিয়ে হাত তুলে চিৎকার দিতে দিতে আসেন। সেটা দেখে বাস থামে কিঞ্চিৎ সাইড করে। রাস্তা তো এমনিতেই চিকন। কতো আর সরতে পারে। তারপর প্যাসেঞ্জার উদয় হন হেলে দুলে হেঁটে।
মালপত্র আসে আরো পরে কুলির মাথায় অথবা বাঁকে চেপে। বিদায় দিতে আসা আপনজনদের কাছে বিদায় নিতে লাগে আরো কিছু সময়। তারপর তিনারা বাসে ''আরোহন'' করেন। সাথে যদি মহিলা থাকে তাহলে বাড়তি সময়ের সাথে থাকে গলা ধরে ধরে কান্না। এর গলা ধরে কাঁদা শেষ হলে ওর গলা ধরে শুরু করেন বিদায়ী কান্না।
সব যাত্রী হা করে সে দৃশ্য দেখেন।
তবে এ সব দেরীর জন্য কখনো কাউকে বিরক্ত হতে দেখিনি। সবাই বেশ বিবেচকের মতো আচরণ করতেন। সবাই মনে রাখতেন বাস এসে তাঁদের যাতায়াতের খরচ আর সময় অনেক বাঁচিয়ে দিয়েছে। এটুকু সময় নষ্টকে বাসযাত্রার স্বাভাবিক অংশই মনে করতেন।
মানুষের মধ্যে দৌড়ে চলার মানসিকতাও ছিলো না। জীবন ছিলো সুস্থিরতাময়।
(চলবে)
পুনশ্চ: নানা কারণে অনেক বিরতিতে শুরু করলাম আবার। যারা এই বিলম্বে স্বাভাবিক কারনেই বিরক্ত হয়েছেন তাঁদের কাছে দু:খ প্রকাশ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।