বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। আজ আর কিছুক্ষণ পর ঘোষিত হতে যাচ্ছে '৭১ সালের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের রায়। ২০০৯ সালের জানুয়ারীর শুরুর দিকে শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের '৭১ সালের কুকীর্তি নিয়ে একটি সিরিজ পোষ্ট লিখেছিলাম ইংরেজী থেকে অনুবাদ করে। আজ কামারুজ্জামানের রায় ঘোষণার দিনে তার কুকীর্তির অংশটুকু নিচে রি-পোষ্ট করলাম। মূল লেখাটি দুইটি পর্বে ছিল, এখানে দুটি পর্বই একসাথে দিলাম পাঠকদের পড়ার সুবিধার্থে, লেখার শেষে মূল পর্ব দুটির লিংকও সংযুক্ত করা হয়েছে।
মোহাম্মদ কামারুজ্জামানঃ
মোঃ কামারুজ্জামান ছিল জামায়াতী মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক এবং বর্তমানে সে সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক। ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামান ময়মনসিংহে ইসলামী ছাত্র সংঘ (মুসলমান ছাত্রদের সংগঠন)-এর নেতা ছিল। সে আল-বদর বাহিনীরও প্রধান উদ্দ্যেক্তা ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ই আগষ্ট দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়, “পাকিস্তানের ২৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য আল-বদর বাহিনী দ্বারা ময়মনসিংহে একটি রেলী ও আলোচনাসভা আয়োজিত হয়। আল-বদর এর প্রধান উদ্দ্যেক্তা মোঃ কামারুজ্জামান স্থানীয় মুসলিম ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করে।
”
কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধসমূহঃ
১. শেরপুর এলাকার একজন শহীদের পিতা ফজলুল হকের মতে, কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে ১১সদস্যের আল-বদর বাহিনী ১৯৭১ সালের জুন বা জুলাই এর দিকে তার সন্তান বদিউজ্জামানকে ধরে নিয়ে যায়। ফজলুল হক বলেন তার ছেলেকে নিকটবর্তী আহমেদনগর এর পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর শহীদ বদিউজ্জামানের ভাই হাসানুজ্জামান নলিতাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, মামলায় বদিউজ্জামানকে হত্যার দায়ে ১৮জন অভিযুক্ত ব্যক্তির মধ্যে কামারুজ্জামানকে প্রধান আসামী করা হয়।
২. একই শেরপুর এলাকায়, জনৈক শাহজাহান তালুকদার বলেন, আল-বদর বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ১৯৭১ সালের ২৪শে আগষ্ট প্রকাশ্য দিবালোকে তার চাচাত ভাই গোলাম মোস্তফাকে অপহরণ করে। মোস্তফাকে এরপর স্থানীয় আল-বদর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়, ক্যাম্পটি শেরপুর শহরের সুরেন্দ্র মোহন রোডের একটি বাড়ীতে স্থাপন করা হয়েছিল।
ক্যাম্পে মোস্তফাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করার পর আল-বদর বাহিনী তাকে নিকটবর্তী শেরী সেতুতে নিয়ে যায় এবং গুলি করে হত্যা করে। কামারুজ্জামান এই হত্যাকান্ডের নির্দেশ দিয়েছিল বলে জানা যায়। শেরপুরের আরো অনেকেই নিশ্চিত করে যে কামারুজ্জামানের সরাসরি নির্দেশে গোলাম মোস্তফা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল।
৩. স্থানীয় প্রাক্তন ছাত্রনেতা তাপস সাহা শেরপুরে আল-বদর ক্যাম্পে নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন। তিনি বলেন, এলাকার নারী, পুরুষ এবং যুবকদের ক্যাম্পে জোর করে ধরে নেয়া হতো যেখানে কামারুজ্জামানের সরাসরি তত্বাবধানে আল-বদরের সন্ত্রাসীরা বিভীষিকাময় নির্যাতন চালাতো।
যেমন, তৎকালীন শহর পরিষদের একজন নির্বাচিত কার্যালয়-বাহক মজিদকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সারাদিন একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন গর্তের ভেতরে ফেলে রাখা হয়।
৪. তাপস সাহা কমিশনকে জানায় যে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে, শেরপুর কলেজের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ আবদুল হান্নানকে সম্পূর্ণ দিগম্বর অবস্থায় এবং মুন্ডিত মস্তক ও গলায় জুতার মালা পরিহিত অবস্থায় শহরের সড়কজুড়ে প্রদক্ষিণ করানো হয়। কামারুজ্জামান এবং তার দল অধ্যাপককে দুপুরবেলা সমগ্র শহরজুড়ে টেনে নিয়ে যায় এবং তাকে টেনেহিঁচড়ে নেয়ার সময় চামড়ার বেল্ট দিয়ে প্রহার করা হয়।
৫. আওয়ামী লীগ এর প্রাক্তন নেতা জিয়াউল হক বলেন, ২২শে আগষ্ট বিকেল ৫টার দিকে আল-বদরের তিনজন লোক তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে একটি ক্যাম্পের অন্ধকারাচ্ছন্ন গর্তের ভেতর দু্ইদিন ফেলে রাখা হয়।
তিনি বলেন, কামারুজ্জামান নির্যাতন কেন্দ্রটি চালাতো। এলাকাটি ছেড়ে চলে যেতে বলার পর তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়, সাথে সাথে তাঁকে এটিও বলা হয় যে, এলাকা ছেড়ে না গেলে তাঁকে হত্যা করা হবে।
৬. প্রাক্তন ছাত্রনেতা ও বর্তমানে জাতীয় পার্টির নেতা এমদাদুল হক হীরা বলেন, কামারুজ্জামানের নির্দেশে পাকিস্তানী সৈন্যরা তার ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তিনি কমিশনে উল্লেখ করেন যে, সৈন্যরা তাঁর ঘরের আঙ্গিনার সামনে পাঁচটি বাঙ্কার স্থাপন করেছিল এবং বন্দীদের হত্যা করার পূর্বে তার আঙ্গিনার সামনে তাদেরকে একটি বড় গাছের সাধে বেঁধে ফেলতো।
৭. শেরপুরের জয় মামুদ কলেজের একজন বর্তমান শিক্ষক এবং প্রত্যক্ষদর্শী মুশফিকুজ্জামান বলেন, মধ্য আগষ্টে কামারুজ্জামানের উপস্থিতি ও নেতৃত্বে তিন আনি বাজার এলাকার ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালানো হয়।
৮. বন্দীদের এবং মৃতদেহ বহনকারী ট্রাকের চালক হিসেবে কাজ করা একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, কামারুজ্জামান একজন মুক্তিযোদ্ধার ঘর জ্বালিয়ে দিতে পাকিস্তানী সেনাদলকে নির্দেশনা দিয়েছিল।
কামারুজ্জামান ঐ এলাকায় ডাকাতদলের নেতৃত্ব দিয়েছিল বলেও অভিযোগ আছে।
১ম পর্ব-মূল পোষ্ট
২য় পর্ব-মূল পোষ্ট ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।