আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের কীর্তিকলাপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ পর্ব - ১৬

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩ পর্ব-৪ পর্ব-৫ পর্ব-৬ পর্ব-৭ পর্ব-৮ পর্ব-৯ পর্ব-১০ পর্ব-১১ পর্ব-১২ পর্ব-১৩ পর্ব-১৪ পর্ব-১৫ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বিগত জোট সরকারের আমলে টেকনোক্র্যাট কোটায় সমাজকল্যাল মন্ত্রী মুজহিদ ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ও ঢাকায় আল-বদর বাহিনীর প্রধান ছিল। দলের প্রতি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন নির্বিচারে হত্যাকান্ড, লুটপাট, মহিলাদের নিগৃহিত ও ধর্ষণে মুজাহিদ সহায়তা করেছিল। বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবি হত্যায় সে নেতৃত্ব দিয়েছিল। সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিবৃতি থেকে তার স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকান্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়।

১৯৭১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে ইসলামী ছাত্রসংঘের একটি সমাবেশে বক্তৃতাকালে সে ঘোষণা করে যে, ভারতের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগে তাদের আসাম(সিলেট সীমান্তে একটি ভারতীয় রাজ্য) দখল করে ফেলা উচিৎ ছিল। সে তার সশ্রস্ত সন্ত্রাসীদের এই কাজে প্রস্তুত হওয়ার জন্য আহবান জানায়। ১৫ই অক্টোবর প্রকাশিত একটি রিপোর্টে মুজাহিদকে উদৃত করে বলা হয়, রাজাকার ও আল-বদর সম্বন্ধে প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্য করার জন্য সে ভূট্টো, কাওসার নিয়াজী ও মুফতি মাহমুদের সমালোচনা করেছিল। “রাজাকার ও আল-বদরের যুবকেরা এবং অন্যান্য সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাতীয় স্বার্থে ভারতের দালাল ও তার সহযোগিদের হাত থেকে জাতিকে রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি এটি দেখা গেছে যে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা যেমন জুলফিকার আলী ভূট্টো, কাওসার নিয়াজী, মুফতি মাহমুদ ও আসগর খান এইসব দেশপ্রেমীদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্য করে আসছে।

” মুজাহিদ এই শ্রেণীর নেতাদের কর্মকান্ড বন্ধ করতে সরকারকে আহবান জানায়। এবং একই সাথে সে ছাত্রদেরকে তাদের পড়াশুনায় ফিরে যেতে এবং স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার আহবান জানায়। ২৫শে অক্টোবর আরেকটি বিবৃতিতে মুজাহিদ ১৭ই রমজানকে বদর দিবস হিসেবে পালনের আহবান জানায় এবং বলে, “এখন আমরা ইসলাম বিরোধী শক্তির মোকাবেলা করছি। আমরা আজ জাতির স্বার্থে দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার শপথ নেবো। ” যুদ্ধের দিনগুলোতে মুজাহিদ ঢাকার ফকিরারপুল ও নয়াপল্টনের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করতো।

তবে সে বিশেষ করে ১৮১, ফকিরারপুলের জনৈক ফিরোজ মিয়ার বাসায় বসবাস করতো। জাতীয় পার্টি নেতা আবদুস সালাম, সাংবাদিক জিএম গাউস, মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট মাহবুব কামালের সাক্ষ্যমতে এই ফিরোজ রাজাকার বাহিনীর একজন কমান্ডার ছিল। ফিরোজের বাড়ীটি স্থানীয় রাজাকারদের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হতো, এখানে তারা গোপন বৈঠকে বসে তাদের কর্মপন্থা ঠিক করতো। এই বাড়ীতে বিভিন্নরকম কাজের সুবিধা ছিলঃ স্থানীয় সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হতো, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও নির্যাতন কক্ষ। স্থানীয় লোকদের মতে, বহু লোকদের ঐ বাড়ীতে চোখ বাঁধা অবস্থায় ধরে নিয়ে যাওয়া হতো এবং ঐ বাড়ী থেকে নির্যাতনের আর্তনাদ শোনা যেত।

মুজাহিদ ছিল পালের গোদা। সাংবাদিক জিএম গাউস বলেছেন, তিনি মুজাহিদকে একটি ইসলামিক সংগঠনের নেতা হিসেবে জানতেন। সে ফকিরাপুল এলাকার একজন ভাড়াটে ছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের বহু আগে থেকে তার সংগঠনে স্থানীয় ছাত্রদের সংগ্রহে জড়িত ছিল। যুদ্ধ ঘোষণার সাথে সাথে সে রাজাকার বাহিনীর একটি বিশাল দল গঠন করে, যারা শুধুমাত্র তার কাছে জবাবদিহি করতো। তারপর মুজাহিদ ফিরোজ মিয়াকে তার নবগঠিত বাহিনীর কমান্ডার নিয়োগ করে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করতো।

সংগঠনটির অস্ত্রভান্ডার ও তহবিলের জন্য মুজাহিদ ছিল একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সেপ্টেম্বরের পর থেকে, যখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পরাজয় শুরু হল, মুজাহিদ সাধারণ স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালী হত্যা কৌশল পরিবর্তন করে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবি ও পেশাজীবি হত্যা কৌশল অবলম্বন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে চিহ্নিত শিক্ষাবিদদের হত্যার পেছনে মুজাহিদ ছিল অন্যতম নেতা। ...........................(চলবে) সূত্র ছবিঃ ১৯৭১ সালে বিভিন্ন সমাবেশে মুজাহিদ ও তার দোসরদের দেয়া বক্তব্য সংবলিত পত্রিকার রিপোর্টের অংশবিশেষ

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.