বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।
পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩ পর্ব-৪ পর্ব-৫ পর্ব-৬
মাওলানা আবদুল মান্নান (বাকী অংশ):
ফরিদগঞ্জ বাজারের নিতটবর্তী কেরোয়া গ্রামের শহীদ হায়দার বক্স পাটওয়ারীর সন্তান আবদুল কাদের পাটওয়ারী বলেন, ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি শামরিক শাসক আইয়ুব খান আয়োজিত স্থানীয় নির্বাচনের সময় থেকেই তাঁর মৃত বাবা এবং মাওলানা মান্নানের মধ্যকার রাজনৈতিক শত্রুতা চলে আসছিল। ১৯৭১ সালে মান্নানের লোকেরা আবদুল কাদেরের সন্ধানে আসে। সন্তান যেহেতু উপস্থিত ছিলনা, রাজাকারেরা তাঁর বাবা, মা, ভাই ও বোনদের ধরে নিয়ে যায়। হায়দার বক্স ছাড়া বাকী সবাই বাড়ী ফিরে এসেছিল।
তিনদিন নির্যাতনের পর হায়দারকে হত্যা করা হয়। আবদুল কাদের বলেন, “আমার বাবাকে মাওলানা মান্নানের নির্দেশক্রমে হত্যা করা হয়েছিল। ”
শহীদ আবদুল মজিদ পাটওয়ারীর সন্তান মোঃ আবদুল কাদের পাটওয়ারী বলেন, “১৯৭১ সালের ৩রা জুলাই রাতে রাজাকারেরা আমাদের বাসায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা আমার বাবা আবদুল মজিদ পাটওয়ারীকে দড়ি দিয়ে পা বেঁধে ফরিদগঞ্জ থানা সদরদপ্তরে নিয়ে যায়। ৪ঠা জুলাই রাত ১০টা থেকে তারা আমার বাবার উপর নির্যাতন শুরু করে।
রাজাকারেরা মুঠো মুঠো করে তাঁর দাড়ি উপড়ে ফেলে। পরবর্তীতে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওজিউল্লাহ্ আমাকে বলেন যে, আমার বাবাকে ঢাকায় নেয়ার পরে একজন পাকিস্তানী মেজর মাওলানা মান্নানের সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করে। প্রথম সাক্ষাতের দিন ঐ মেজর মাওলানা মান্নানকে বলে, “তুমি যাকে চেয়েছিলে সে এখন আমাদের কাছে আছে। ” শেষবার মাওলানা মান্নান তাঁকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। সেদিন রাত ১টার সময় তাঁকে হত্যা করা হয়।
”
চাঁদপুরের একজন ব্যবসায়ী মোঃ ওয়াজিউল্লাহ্ও আবদুল মজিদ পাটওয়ারীর হত্যার কাহিনী পুনরুল্লেখ করেন। ওয়াজিউল্লাহ্কেও রাজাকারেরা সেখানে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
১৯৭১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর মাওলানা মান্নানকে রমনা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সে আত্নগোপন করে।
১৯৭২ সালের ৭ই মে দৈনিক আজাদ-এ প্রকাশিত এই মানুষখেকোকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করুন শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়, “শারসিনা(একজন ধর্মীয় নেতা, যে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর একজন ঘৃণ্য দোসর হিসেবে পরিচিত)-র একান্ত সহচর, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর উদ্দ্যেক্তা, বিশেষভাবে ফরিদগঞ্জ এলাকার বহু হত্যাকান্ডের মূল হোতা মুসলিম লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তথাকথিত মাওলানা আবদুল মান্নান এখনও মুক্ত। এই সেই ব্যক্তি যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ফরিদগঞ্জে রাজাকারদের সংগঠিত করেছে। ফরিদগঞ্জের প্রসিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদ এবং ২৯/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা’র ডাঃ আলিম চৌধুরী হত্যায় তার হাত ছিল। ”
জিয়ার রাজনৈতিক এবং এরশাদের অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানে ইসলামী মৌলবাদের সংবাদ মাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবের মালিক। বিএনপি এবং এরশাদ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ইনকিলাব একটি প্রধান সংবাদপত্রে পরিণত হয়েছে।
এরশাদের শাসনামলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পেছনে ইনকিলাব দায়ী ছিল। এটি প্রগতিশীল শিল্পী, চিন্তাবিদ, সাংবাদিক এবং শিক্ষাবিদদের বিরুদ্ধে ইসলামী মৌলবাদকে উস্কে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ আহমেদ শরীফকে তারা খৃষ্টান মতাদর্শী বলে আখ্যায়িত করে এবং তাঁর মাথার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে, যেমন করে ইরানে সালমান রুশদীর মাথার জন্য খামেনী’র লোকেরা করেছিল।
মান্নান এবং তার দোসরদের হাতে নিহত লোকদের প্রমাণিত তালিকাঃ
আবদুল মজিদ পাটওয়ারী, হায়দার বক্স পাটওয়ারী, আহমেদ উল্লাহ্ খান, ইসহাক খান, সুলতান খান, আমিরুল্লাহ্ খান, নিবারণ চন্দ্র দাস, হরেণ চন্দ্র দাস, আনসারী আবদুর রব, আবদুল মতিন সৌত, আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া, সেকান্দর ভুঁইয়া, উপেন্দ্র কর্মকার, যোগেশ্বর ভৌমিক, মাইনুদ্দীন খান, আবদুল ওয়াদুদ খান, হাবিবুল্লাহ্, ইসহাক মীর, আক্কাস মিয়া, আবু তাহের, আয়াতুল্লাহ্, হাশিম খান, হরে কৃষ্ণ দাস, জগবন্ধু দাস, মদন কৃষ্ণ দাস, নগেন্দ্র চন্দ্র কবিরাজ, গোবিন্দ্র চন্দ্র দাস।
*হাসমতী বেগম, *আরাফা বেগম।
*এই দু’জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
সূত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।