বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।
পর্ব-১ পর্ব-২
মতিউর রহমান নিজামী (বাকী অংশ):
৬. ২৬শে নভেম্বর রাজাকার কমান্ডার সাত্তার পাকিস্তানী বাহিনীকে ধুলাউপাড়া গ্রামে নিয়ে যায়, যেখানে ৩০জন মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীতে তাদের হত্যা করা হয়। কুদ্দুসের স্বাক্ষ্যমতে, সাত্তার মতিউরের আদেশ পালন করেছিল। কুদ্দুস কমিশনকে বলেন যে তিনি আল-বদর বাহিনীর একটি গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন যেখানে মতিউর সভাপতিত্ব করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করার নির্দেশ দেয়। ঐ সভায় আল-বদরের লোকেরা আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি তালিকাবদ্ধ করে।
মতিউর আওয়মী লীগ সমর্থকদের ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করতে কঠোর নির্দেশ দেয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহারকৃত সম্ভাব্য ঘাঁটি এবং নিরাপদ ঘরবাড়িগুলো চিহ্নিত করা হয়। কুদ্দুস বলেন, মতিউর আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নিশ্চিহ্ন করতে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়। ঐ সভার পরদিন, আল-বদর বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় ব্রিশ্লিকা গ্রাম ঘিরে ফেলে এবং জ্বালিয়ে দেয়।
৭. কুদ্দুস আরো বলেন, মতিউর নিজে সাথিয়া থানার মাধবপুর গ্রামের বাতেশ্বর সাহাকে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করে।
৮. পাবনায় লতিফ নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং তার দলকে হত্যাযজ্ঞে মতিউর নেতৃত্ব দেয়।
লতিফ ছিলেন মাত্র ১৯ বছর বয়সী এবং তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ধুলিউড়িতে একটি অসম যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী লতিফের ছোট দলটিকে আটক করে। তারপর তাদেরকে ফাঁসি দেয়ার জন্য মতিউরের বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হয়। মতিউরের সৈন্যরা লতিফের সহযোদ্ধাদের জনসমক্ষে ছুরি দিয়ে জবাই করে, যেসব ছুরি দিয়ে কোরবানীর সময় মুসলমানরা গরু জবাই করত। মতিউরের দলের ঐসব ঘৃণ্য নরপশুরা মানুষখেকোদের মত উদ্দীপনায় আটককৃত মুক্তিযোদ্ধা হত্যার উৎসব করেছিল।
তারা লতিফের চোখ উপড়ে ফেলে, যৌনাঙ্গ কর্তন করে এবং তার মৃতদেহ একটি গাছের ডালের সাথে বেঁধে রাখে। লতিফের বাবা সুফিয়ান প্রামাণিক তার সন্তানের নির্মম হত্যাকান্ড এবং মাটির সাহসী সন্তানদের হত্যায় রাজাকারদের উন্মত্যতার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন।
৯. লতিফের ভাই শাহজাহান আলী যিনি নিজে মাধবপুর গ্রামের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তিনিও প্রায় একই ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছিলেন। অন্যান্য সহযোদ্ধাদের সাথে শাহজাহানকে জবাই করার পর মতিউরের লোকজন তাঁকে মৃত ভেবে চলে যায়। কিন্তু শাহজাহান সর্বান্তকরণে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
জবাইকারীর ছুরি তাঁর প্রাণ নিতে পারেনি। মারাত্নকভাবে আহত অবস্থায় শাহজাহান মাটিতে কয়েক ঘন্টা পড়ে ছিলেন। শেয়াল তাঁর গন্ধ শুঁকলো, কুকুর তাঁকে কামড়ালো। সৌভাগ্যক্রমে অনেক দেরী হওয়ার আগেই তাঁর জীবন বাঁচাতে চলে আসল। মতিউরের ছুরি শাহজাহানের জীবন নিতে পারেনি, কিন্তু তাঁর কন্ঠস্বর কেড়ে নিয়েছিল।
এখন শাহজাহান অবশ, গলায় বিরাট ক্ষতচিহ্ন-মতিউরের মৃত্যুচুম্বন নিয়ে তিনি আর কথা বলতে পারেননা।
মতিউর এবং তার আল-বদর বাহিনীর হাতে নিহত লোকদের তালিকাঃ
মোঃ সোহরাব আলী,প্রফুল্ল প্রামাণিক,ভাদু প্রামাণিক,মনু প্রামাণিক,শষ্ঠি প্রামাণিক,বাতেশ্বর সাহা,মুক্তিযোদ্ধা লতিফ,লতিফের দলের ৩০জন মুক্তিযোদ্ধা,দারা,চাঁদ,মুসলেম,আখতার,কবির।
১৯৭১ সালে মতিউর ব্যক্তিগতভাবে শত শত হিন্দুদের হত্যা এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করায় যুক্ত ছিল। অবস্থাপন্ন হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে অর্থ, অলংকার এবং অন্যান্য সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে যুদ্ধের নয় মাসের মধ্যে মতিউর কোটিপতি হয়ে যায়। শেখ মুজিবের সরকারের আমলে (১৯৭১-১৯৭৫) মতিউর যুদ্ধাপরাধের অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য লুকিয়ে যায়।
১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়ার রাজাকার পূনর্বাসন কর্মসূচীর আওতায় মতিউর পুনরায় ফিরে আসে এবং জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব গ্রহণ করে। মতিউর বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর আমির।
হত্যা,সম্পদ লুন্ঠন এবং বাজেয়াপ্তকরণে সম্পৃক্ত থাকা ছাড়াও নিজামী বাংলাদেশে ইসলামী মতাদর্শ প্রতিষ্টায় সচেষ্ট হয়। ১৯৭৬ সাল থেকে তথাকথিত জেনারেল জিয়ার রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সৌদী আরব, ইরান, লিবিয়ার মত ইসলামিক দেশের আর্থিক সাহায্যে মতিউর এবং তার স্যাঙ্গাতরা কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করে দেশব্যাপী ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচী এবং পাঠ্যক্রম জামাতে ইসলামীর আধ্যাত্নিক নেতা মওদুদীর মতবাদ অনুসারে পরিচালিত হয়।
এইসব স্কুলগুলোর নেটওয়ার্ক জামায়াতে ইসলামিকে তাদের বিশাল ক্যাডারদের এইসব স্কুলে চাকুরে হিসেবে ধরে রাখতে সক্ষম হয়। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে ঐসব স্কুল জামায়াতে ইসলামীর জন্য ব্যাপক সাফল্য এনে দিয়েছিল, এটি তাদেরকে একটি নিশ্চিত আয় এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের ক্যাডারদের চাকরীর নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু এসব স্কুল ছাত্রদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয় কারণ তাদের শিক্ষাপদ্ধতি ছাত্রদেরকে সনাতন আরবী সাহিত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়া করার জামাতের এই চক্রান্ত শুধু স্কুল পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিলনা, মতিউর এর উদ্দেশ্য উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও চালু রেখেছিল। মতিউরের স্ত্রী ঢাকা শহরের সবচেয়ে অভিজাত এলাকায় একটি ইংরেজী মাধ্যমের কলেজ স্থাপন করে।
কলেজটি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল কলেজ নাম নিয়ে তাদের আন্তর্জানিত মান আছে বলে দম্ভোক্তি করে। বাংলাদেশের ধনাঢ্য মুসলমানদের সন্তানের দল সেই তথাকথিত কলেজে পড়ে। মানারাত একটি ইংরেজী মাধ্যমের কলেজ সেই যুক্তিতে যে তারা জ্ঞানদান করে ইংরেজী ভাষায়। কিন্তু এর পাঠ্যসূচীতে কি আছে? কোরআন এবং মধ্যযুগীয় সকল আরবী ধ্যানধারনা। মানারাত কলেজ থেকে পাশ করা ছাত্ররা বাহ্যিক দৃষ্টিতে স্মার্ট হলেও বুদ্ধিবৃত্তিক ও আচরণের দিক দিয়ে মধ্যযুগীয়।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গোলাম আযম এবং মইনুদ্দীনরা ভয়ংকর পিশাচ হলেও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মতিউর এবং সাঈদীরা আরো বেশী উগ্র এবং সমাজে তাদের প্রভাব ব্যাপক।
নিজামীর আরো কিছু অপরাধঃ
১. ২০০১ সালের নির্বাচনের পর নিজামীর সশ্রস্ত বাহিনী নিজামীর সংসদীয় এলাকার একটি অংশ হালদার পারার ২০টি হিন্দু পরিবারকে জোরপূর্বক গরুর মাংস খেতে বাধ্য করে।
২. ২০০৩ সালের ১১ই নভেম্বর ঢাকার সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেল সোনারগাওয়ে নিজামী একটি জমকালো ইফতার পার্টি আয়োজন করে, যে সময় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো মঙ্গায় তছনছ হয়ে গিয়েছিল। সেই ইফতার পার্টিতে নিজামী ৫৫০ জন অভিজাত ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানায়, যেখানে সর্বমোট খরচ হয়েছিল ৩ লক্ষ টাকা।
সূত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।