আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের কীর্তিকলাপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ পর্ব-২

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

পর্ব-১ মতিউর রহমান নিজামীঃ সমস্ত রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের মূল নায়ক এবং বিভিন্ন মুজাহেদীন এবং জিহাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক আল-বদর বাহিনীর কর্মকান্ডের প্রধান মতিউর রহমান নিজামী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অথবা মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত হাজার হাজার বাঙ্গালী নিধনে দায়ী ছিল। পাবনা জেলার সাথিয়া থানার অধীন মনমথপুর গ্রামের খন্দকার লুতফর রহমানের পুত্র মতিউর এর তার নিজামী উপাধির পেছনে কোন যৌক্তিকতা ছিলনা। অন্যান্য ইসলামী সহকর্মীর মত মতিউরও নিজের নামকে আরো সন্মানিত বানাতে এবং নিম্ন জন্ম উৎস লুকাতে নিজামী উপাধিটি গ্রহণ করেছিল । তার গ্রামের লোকেরা তাকে এতই ঘৃণা করতো যে, নিজের দেশের মানুষের প্রতি নির্লজ্জ বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তারা তাকে এখনও মইত্যা দালাল বলে ডাকে।

১৯৭১-এ নিজামীর যুদ্ধাপরাধঃ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে মতিউর নানারকম কর্মকান্ড পরিচালনা করে। জামায়াতের যুব ফ্রন্ট ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির) এর প্রেসিডেন্ট ছিল মতিউর। স্বাধীনতা আন্দোলনের যোদ্ধা এবং সমর্থকদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য মতিউরের সরাসরি তত্ত্বাবধান এবং পরিচালনায় আল-বদর বাহিনী সংগঠিত হয়। মতিউর ছিল আল-বদর বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থকদের হত্যা করা ছাড়াও আল-বদর বাহিনীর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা।

আল-বদর বাহিনীর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষ বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরী করা ও তাদের নিশ্চিহ্ন করা। স্বাধীনতা যুদ্ধচলাকালীন ও তৎপরবর্তী সময়ে দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন সংবাদপত্রে মতিউরের আল-বদর বাহিনী দ্বারা বুদ্ধিজীবি হত্যার ভয়ংকর কাহিনী প্রকাশিত হয়ঃ ১. যুদ্ধ চলাকালীন মতিউর জামাতের অন্যতম আদর্শিক নেতা হিসেবে তার দলের সমর্থকদের সংবাদপত্রে প্রবন্ধ এবং জনসভায় ভাষণের মাধ্যমে প্ররোচিত করতো মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের হত্যায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সমর্থনে প্ররোচিত করতো। জামাতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামের একটি সংখ্যায় মতি্উর লিখেছিল, “সেইদিন বেশী দূরে নয় আল-বদরের তরুনরা সশ্রস্ত বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে হিন্দু শক্তিকে পরাজিত করবে এবং ভারত ধ্বংসের পর ইসলামের বিজয় পতাকা সারাবিশ্বে উত্তোলন করবে। ” (দৈনিক সংগ্রাম, নভেম্বর ১৪, ১৯৭১) ২. ১৯৭১ সালের ১২ই এপ্রিল পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের জন্য গোলাম আযম এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় সহযোগী, যেমন সবুর খানের সাথে মতিউর ঢাকায় একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেয়। শান্তি কমিটির ব্যানারে এই মিছিল পাকিস্তানের বিজয়ের জন্য বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে শেষ হয়।

(দৈনিক সংগ্রাম, এপ্রিল ১৩, ১৯৭১) ৩. সীমান্ত শহর যশোরে রাজাকার বাহিনীর জেলা সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বাহিনীর একটি সভায় ভাষণ দানকালে মতিউর বলে, “জাতীয় সংকটের এই মুহুর্তে যারা পাকিস্তান এবং ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত, তাদের সকলকে নিশ্চিহ্ন করার জাতীয় দায়িত্ব পালন করা প্রত্যেক রাজাকারের কর্তব্য। ” (দৈনিক সংগ্রাম, সেপ্টেম্বর ১৫, ১৯৭১) ৪. মতিউরের নিজ জেলা পাবনার জনগণ হত্যা, ধর্ষণ, অবৈধভাবে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের সাথে মতিউরের সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ আনে। সেরকম একজন ব্যক্তি হচ্ছেন বেড়া থানাধীন ব্রিশ্লিকা গ্রামের আমিনুল ইসলাম ডাবলু। ডাবলু বলেন, তার বাবাকে মতিউরের আদেশে হত্যা করা হয়। ডাবলু আরও বলেন, ঐ এলাকার আরও লোকদেরকে মতিউরের নির্দেশে হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, প্রফুল্ল প্রামাণিক, ভাদু প্রামাণিক, মানু প্রামাণিক এবং শষ্ঠি প্রামাণিক।

ডাবলু বলেন, ঐসব হত্যাকান্ডের বহু প্রত্যক্ষদর্শী ছিল। ৫. পাবনার মাধবপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস এক অসম যুদ্ধে গ্রেফতারের পর আল-বদরের নির্যাতন কক্ষে দুই সপ্তাহ অতিবাহিত করেন। কুদ্দুস বলেন, মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধের স্থানীয় সমর্থকদের হত্যার ব্যাপারে মতিউরের তত্ত্বাবধানে আল-বদর বাহিনীর পরিকল্পনার কথা তিনি শুনেছেন। ..............................(চলবে) ছবিঃ মতিউর রহমান নিজামী, ১৯৭১ সালে সূত্র

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.