আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের কীর্তিকলাপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ পর্ব - ৬

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩ পর্ব-৪ পর্ব-৫ মাওলানা আবদুল মান্নানঃ মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জামায়াত-ই-মুদাররেসিন এর সভাপতি এবং দৈনিক ইনকিলাব এর মালিক আবদুল মান্নান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অন্যতম সহযোগী ছিল। জামায়াতে যোগ দেয়ার পূর্বে সে স্থানীয় বাজারে এবং আবাসিক এলাকায় মুরগী বিক্রি করতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় আবদুল মান্নান পাকিস্তানী সেনাক্যাম্পে মুরগী এবং মাংস সরবরাহ করতো। মুরগী সরবরাহ করা ছাড়াও আবদুল মান্নান আল-বদর বাহিনী দ্বারা অপহৃত মেয়েদেরও পাকিস্তানী ক্যাম্পে সরবরাহ করতো।

১৯৭৬ সালের পর জেনারেল জিয়ার অধীনে একজন মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে রাস্ট্রপতি এরশাদের মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়া মান্নান ধর্ম-নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবিদের হত্যার পেছনেও জড়িত ছিল। মান্নানের স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকান্ডের ব্যাপ্তি ছিল ফরিদগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত। ১৯৭১ সালে মান্নান পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য গঠিত তথাকথিত শান্তি ও কল্যাণ কমিটির একজন অন্যতম নেতা ছিল। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মান্নান পাকিস্তানী বাহিনী দ্বারা সংগঠিত ব্যাপক হত্যার পক্ষে অনেক বিবৃতি দিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৭শে এপ্রিল সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে মান্না বলেছিল, “পূর্ব-পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক জনগণ এখন সশ্রস্ত দেশদ্রোহীদের উপড়ে ফেলতে ধর্মীয় চেতনা নিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছে।

জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা নিয়ে আমাদের সাহসী সেনাবাহিনী সমস্ত এলাকার কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছে। ” (সূত্রঃ Killers and Collaborators of 1971: An Account of Their Whereabouts, page 77) ১৯৭১ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের বি জোনের আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক এবং পূর্ব কমান্ডের অধিনায়ক জেনারেল একে খান নিয়াজীর সাথে তৎকালীন মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠনের সভাপতি মাওলানা মান্নানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল একটি বৈঠক করে। মান্নান জেনারেল নিয়াজীকে কোরআনের একটি কপি উপহার দেয় এবং তাকে বলে, “আমরা পাকিস্তানের নিরাপত্তা এবং ইসলামের গৌরব বৃদ্ধির জন্য সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। ” জেনারেল নিয়াজী জবাব দেয়, “ওলামা(ইসলামিক পন্ডিত),মাদ্রাসা শিক্ষক এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক নাগরিকেরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে রক্ষা এবং দেশবিরোধী কর্মকান্ডকে উপড়ে ফেলতে পারে। ” জেনারেল নিয়াজী ভারতীয় সেনাদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য গ্রাম প্রতীরক্ষা বাহিনীর মত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠনে তাদেরকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

সভাটির পর মাদ্রাসা শিক্ষক এবং ছাত্ররা রাজাকার, আল-বদর এবং আল-শামস্ –এ অভিষিক্ত হয় ও তারা সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়। প্রসিদ্ধ চিকিৎসক আলিম চৌধুরী হত্যার পেছনে মাওলানা মান্নানের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। মৃত চিকিৎসকের স্ত্রী মিসেস শ্যামলী চৌধুরী এবং ছোট ভাই আবদুল হাফিজ চৌধুরীর মতে, আল-বদর বাহিনীর কিছু সদস্য ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর তাদের বাসায় গিয়েছিল। এর আগে, আল-বদরের লোকেরা মাওলানা মান্নানের বাসায় ৪৫ মিনিট অবস্থান করে এবং পরে সিঁড়ির নীচে অবস্থান নেয়। তারা আলিম চৌধুরীকে ধরে নিয়ে যায়, যিনি পরে আর ফিরে আসেননি।

ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আবদুল হাফিজ চৌধুরী ঢাকার রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ শহরের আজিমপুর এলাকায় আত্মগোপন করে থাকা মাওলানা মান্নানকে আটক করে। মান্নান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় যে, আল-বদর বাহিনীর তিন সদস্য এবং তার ছাত্রেরা ডাঃ আলিম চৌধুরীকে ধরে নিয়ে যায়। বুদ্ধিজীবি হত্যার সাথে জড়িত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দু’জন সদস্য ব্রিগেডিয়ার কাশেম এবং ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের সাথে মান্নানের গভীর সম্পর্ক ছিল। এই দুই কর্মকর্তা মাত্র একমাস আগে মান্নানের একতলা বাড়ীতে রাত ২.৩০টায় একটি ইসলামী উৎসবের অনুষ্ঠানে এসেছিল।

১৯৭১ সালে মান্নানের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী স্থানীয় গ্রাম্য পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ফরিদগঞ্জে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা ফরিদগঞ্জের নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করে, মহিলাদের ধর্ষণ করে, তাদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয় এবং তাদের সম্পত্তি লুট করে। সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাপার হচ্ছে, মান্নানের লোকেরা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার এই সুযোগ গ্রহণ করে তাদেরকে নির্যাতন করার পর হত্যার মাধ্যমে। ১৯৭১ সালে থানা কার্যপরিষদের সভাপতি এবং পরবর্তীতে ফরিদগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক মাস্টার, কার্যপরিষদের সদস্য আবদুল জব্বার পাটওয়ারী এবং আবদুল আউয়াল বলেন, “ মান্নানের রাজাকার বাহিনী, তার অধীনে কাজ করার সময় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদ পাটওয়ারী, হায়দার বক্স পাটওয়ারী, আহমেদ উল্লাহ্ খান, ইসহাক খান, সুলতান খান, আমিরুল্লাহ্ খান, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিবারণ চন্দ্র দাস, হরেণ চন্দ্র দাস, আনসারি আবদুর রব, আবদুল মতিন সৌধ, সেকান্দার ভুঁইয়া, আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া, উপেন্দ্র চন্দ্র কর্মকার, যোগেশ্বর ভৌমিক, মাইনুদ্দীন খান, আবদুল ওয়াদুদ খান, হাবিবুল্লাহ্, ইসহাক মীর, আক্কাস মিয়া, আবু তাহের, আয়াতুল্লাহ্, হাশিম খান, হরে কৃষ্ণ দাস, জগবন্ধু দাস, মদন কৃষ্ণ দাস, নগেন্দ্র চন্দ্র কবিরাজ এবং গোবিন্দ্র চন্দ্র দাস সহ ফরি্দগঞ্জের অগণিত বাঙ্গালীকে হত্যা করে। প্রত্যাশী গ্রামের হাসমতী বেগম ও আরাফা বেগম উভয়কেই ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।

” ................................(চলবে) ছবিঃ মাওলানা আবদুল মান্নান

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.