বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।
পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩ পর্ব-৪ পর্ব-৫ পর্ব-৬ পর্ব-৭ পর্ব-৮
সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী (সাকাচৌ) (পরবর্তী অংশঃ)
বইটিতে আরেকটি ঘটনার বর্ণনা আছে, “১৩ই এপ্রিল অধ্যক্ষ নতুন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করা হয়। গহিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাদে স্থাপিত মেশিনগান থেকে পাকিস্তানী সেনারা চতুর্দিকে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। প্রচুর গুলি কুন্ডেশ্বরী ভবনে আঘাত করে। এর আগে শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ উদ্ভূত পরিস্থিতি রোধ করার জন্য ভবনটির বাসিন্দাদের সরিয়ে দেন।
কিন্তু তিনি নিজে কুন্ডেশ্বরী ভবনের মন্দির আঁকড়ে ধরে সেখানে থেকে যান। সৈন্যদের তাঁর সাথে দেখা করতে আসার প্রত্যাশা করে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য তিনি চত্বরে টেবিল-চেয়ার বিছিয়ে রাখেন। দুইটি জীপে করে সৈন্যরা এসেছিল। তার একটি জীপে ফজলুল কাদের চৌধুরীর সন্তান সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী আরোহণ করছিল। তাদের পেছনে চারটি ট্যাংক কুন্ডেশ্বরী রোডে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।
অধ্যক্ষ সেনাসদস্যদের অভ্যর্থনা জানালেন এবং তাদের আপ্যায়ন করলেন। তিনি তাদেরকে তাঁর কল্যাণমূলক কাজের বর্ননা দিলেন এবং সেগুলো চালিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তাঁর ইচ্ছার কথা জানালেন। এতে সন্তুষ্ট হয়ে সৈন্যরা চলে গেল। কিন্তু সালাউদ্দীন তাদেরকে পুনরায় ফেরত আনলো, কারণ তার বাবা তাকে এই নাস্তিককে জীবিত ছেড়ে দিতে নিষেধ করেছিল। ক্ষমতাবান একদল বীর সৈন্যের জন্য এই দিনটি স্মরণীয় নয়, বরং ৭০ বছর বয়স্ক একজন নিরস্ত্র বৃদ্ধ যিনি তার লোকদের শান্তি ও ভালোবাসার পক্ষে সংগ্রাম করেছিলেন, তার জন্য স্মরণীয়।
তিনি মন্দিরের সামনে মৃত্যুকে বরণ করার জন্য দাড়িয়ে পড়লেন। তারা তিনবার তাঁর দিকে গুলিবর্ষণ করল। একটি গুলি ঠিক তার একটি চোখের নিচে বিদ্ধ হয়। আরেকটি গুলি তাঁর হাতে লাগে এবং তৃতীয় গুলিটি তাঁর বুকে বিদ্ধ হয়। মায়ের জন্য ক্রন্দনরত অবস্থায় তিনি মাটিতে পড়ে যান।
তাঁর জন্য হিন্দু, মুসলমান সকলেই শোকার্ত হয়ে গিয়েছিল। শোকার্ত মুসলমানদেরকে সালাউদ্দীন বিদ্রুপাত্নক সুরে বলল, “ কেন তোমরা কষ্ট পাচ্ছ? এটা তো শুধুমাত্র একজন মালাউন মারা গেছে!” ”
১৩ই এপ্রিল দিনটি আরেকটি করুণ মৃত্যুর জন্য স্মরণীয় থাকবে। সালাউদ্দীনের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত গহিরার একজন বিশিষ্ট অধিবাসী চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের ঘরে সকাল সাড়ে দশটায় প্রবেশ করে, বিশ্বাসের পুত্র ছাত্রনেতা দয়াল হরি বিশ্বাসকে তুলে আনে এবং তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
১৯৯১ সালের ২৫শে এপ্রিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ্ আল হারুন সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী এবং তার দুষ্কর্মের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে একটি নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেন। সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ছিল মামলাটির সাতজন বিবাদীর মধ্যে সর্বপ্রথম।
সালাউদ্দীনের দুষ্কর্ম উল্লেখ করে আবদুল্লাহ্ আল হারুন বলেন, সর্বপ্রথম বিবাদী বলপ্রয়োগ করা, নির্মমতা এবং সন্ত্রাসে বিশ্বাসী। সে কখনো আইনের তোয়াক্কা করেনা। নির্বাচনের আইন-কানুনের প্রতি তার কখনো শ্রদ্ধা ছিলনা। জনগণের অধিকারেও সে বিশ্বাস করতোনা। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানী শক্তিকে সমর্থনের সময় প্রথম বিবাদী স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সবচেয়ে অমার্জনীয় এবং জঘন্য ভূমিকা পালন করেছিল।
বহু লুটপাট ও হত্যাকান্ডের সাথে সে জড়িত ছিল। ১৯৭২ সালের ১৩ই এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা করা হয়,মামলার ক্রমিক নাম্বার ছিল ১৭। সমাজসেবক নুতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার অভিযোগে রাউজান থানায় বিবাদীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, মামলাটির ক্রমিক নম্বর ছিল ৪১(১)৭২ এবং ৪৩(১)৭২। তার পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছিল যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এক নাম্বার বিবাদী জীবন রক্ষা করার জন্য দেশ থেকে পালিয়ে যায়। তার স্বভাবগত কৌশল এবং সমর্থনে এই বিবাদী সামরিক শাসক এরশাদের মন্ত্রীসভার সদস্য পর্যন্ত হয়েছিল।
......................(চলবে)
সূত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।