বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।
পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩ পর্ব-৪ পর্ব-৫ পর্ব-৬ পর্ব-৭ পর্ব-৮ পর্ব-৯ পর্ব-১০ পর্ব-১১ পর্ব-১২
আবদুল কাদের মোল্লাঃ
১৯৭১ সালে মিরপুর এলাকার মানুষদের কাছে আবদুল কাদের মোল্লা একজন কসাই হিসেবে পরিচিত ছিল। সে সময় মিরপুরে ভারত থেকে আগত বিহারী মুসলমানদের আধিক্য ছিল, এই বিহারীরা বাংলাদেশে পাকিস্তানী দখলদারিত্বের অতি উৎসাহী সমর্থক ছিল।
পাকিস্তানী বাহিনী ও তার সহযোগীদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত মানুষদের অন্যতম বৃহৎ গণকবর স্বধীনতার পর মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় আবিষ্কৃত হয়। মিরপুর এলাকার স্থানীয়দের মতে, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মিরপুর এলাকার শিয়ালবাড়ী এবং রূপনগরে হাজার হাজার বাঙ্গালী হত্যায় কাদের মোল্লা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
তাদের অনেকেই নিশ্চিত করেছিল যে, সেনাবাহিনী তাদের কর্মকান্ড শুরু করার আগেই কাদের মোল্লা তার হত্যার আনন্দ শুরু করে।
৬ই মার্চ মিরপুর ৬নং সেক্টরের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি'র গেট এর সামনে বাঙ্গালী মানুষদের দাবী পেশ করার জন্য একটি জনসমাবেশ আয়োজন করা হয়। যখনই মানুষ জাতীয় স্লোগান জয় বাংলা ধ্বনি দেয়া শুরু করল, সভায় উপস্থিত মোঃ শহিদুর রহমান, কাদের মোল্লা এবং তার বাহিনী তলোয়ার এবং অন্যান্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সভায় আক্রমণ করে।
মিরপুর ১নং সেক্টরের বি-ব্লক নিবাসী মোঃ ফিরোজ আলীর মতে, কাদের মোল্লা ফিরোজ আলীর ভাই ১৮ বছরের ছাত্র পল্লব টুনটুনি হত্যার সাথে জড়িত ছিল। কিশোর টুনটুনি জাতীয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সক্রিয় সমর্থক ছিল এবং সে কারণে তার নাম কাদের মোল্লার হত্যা তালিকায় যোগ হয়।
২৯শে মার্চ মোল্লার ঘাতক দল শহরের অন্য প্রান্ত থেকে টুনটুনিকে অপহরণ করে এবং তাক মিরপুরে নিয়ে আসে। এরপর ছেলেটিকে হাত পেছন থেকে বাঁধা অবস্থায় টেনে-হিঁচড়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে আসা হয় এবং আবার ফেরত নেয়া হয়। ধর্মীয় সমাবেশে ব্যবহৃত একটি বড় খেলার মাঠে তাকে গাছের সাথে বেঁধে দুইদিন ফেলে রাখা হয়। পরে মোল্লার লোকেরা ফিরে আসে এবং ছেলেটির আঙ্গুল কেটে ফেলে। ৫ই এপ্রিল অপহরণের এক সপ্তাহ পরে মোল্লা টুনটুনিকে গুলি করে হত্যা করার জন্য তার লোকদেরকে নির্দেশ দেয়।
ফিরোজ আলী বলেন, গণকবরে আরো ৭টি লাশের সাথে নিক্ষেপ করার আগে এলাকার অন্যদের জন্য সতর্কতার নিদর্শন হিসেবে ছেলেটির লাশ সেই গাছের সাথে দুইদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়।
মোঃ শহীদুর রহমান চৌধুরী ছিলেন ১৯৭১ সালে কাদের মোল্লার অপরাধ কার্যক্রমের আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, অক্টোবরে রাজাকারবাহিনী কাদের মোল্লার নির্দেশে মিরপুর ৬নং সেক্টরে মহিলা কবি মেহেরুন্নেসাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি বলেন, সিরাজ নামের এক ব্যক্তি, যিনি কবির ঘরে থাকতেন, তিনি হত্যাকান্ডের এই দৃশ্য দেখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। জনাব চৌধুরী আরো বলেন যে, সিরাজ এখনও মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে।
মিরপুর এলাকার অধিবাসীদের আরো অভিযোগ আছে যে, কাদের মোল্লা মিরপুরের মনিপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়ার অবাঙ্গালী লোকদেরকে তার আদেশাধীন সশ্রস্ত বাহিনীতে সংগঠিত করে। ঐসব বিহারী সশ্রস্ত বাহিনীর সাহায্যে কাদের মোল্লা মিরপুরের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হাজার হাজার বাঙ্গালী হত্যাকান্ড সংঘটিত করত।
সূত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।