আজকের রাতটা যে অনেক ভয়ঙ্কর হবে, তা আমি আগেই টের পেয়েছিলাম। সেরকম একটা গা হিম করা রক্ত¯্রােত শিড়দাড়া বেয়ে জানিয়ে গেছে আমাকে। এর আগেও বিষয়টা অনেকদিন সহ্য করেছি। ঠিক করেছি আজকে আর সহ্য করবো না। এর একটা ব্যবস্থা আজ রাতে আমাকেই করতে হবে।
হ্যাঁ আমাকেই করতে হবে, এবং সেটা স্বহস্তেই।
আমার এলাকায় এসে আমার সঙ্গে বেয়াদবি! আমি মোটেও বরদাস্ত করবো না আর।
আমি ভুলে যাইনি গত কয়দিনে আমার শরীরে ওদের অত্যাচারের দাগ। এখনো লাল লাল ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে শরীরে। আজ শপৎ নিয়েছি, আজ আর শুধু পড়ে পড়ে অত্যাচার সহ্য করবো না।
আজ এর একটা বিহিত করবোই করবো। তাই আজ প্রতিশোধ নিবো। আজ রাত হবে প্রতিশোধের রাত। প্রচ- ভয়ানক সে প্রতিশোধ। প্রতিশোধ নেয়ার আনন্দে ভাসবো আমি।
প্রতিটি মুহূর্তে চোখের সামনে ভেসে উঠেছে কিলবিলের সেই দৃশ্য। যেখানে একাই খতম করেছে অসংখ্য শত্রুকে, লাশ বানিয়ে ফিরে এসেছে বীরদর্পে। আজ আমার মনেও বেজেছে প্রতিশোধের সেই সুর। মাথায় আজ রক্ত চড়েছে আমারও।
তাইতো কিছুক্ষণ আগে একে একে খুন করেছি শত্রু পক্ষের সবকটাকে।
এখন অপেক্ষা করছি লাশগুলোর একটা গতি করার জন্য।
একটু আগে নিজের এই বীভৎস চেহারা দেখে আমি নিজেও আঁৎকে উঠি। নিজেকে এইরকম এর আগে কখনো দেখিনি।
এখন আমার সামনে পড়ে আছে দশ-বারটা লাশ। লাশের গায়ে শুকিয়ে উঠেছে লাল লাল রক্ত।
বীভৎস সব লাশ। কারো ঘাড় থেকে মাথা আলাদা।
কোনটার শরীর থেঁতলে গেছে দেয়ালে।
কোনটার হাত-পা সব আলাদা, পড়ে আছে শুধু নিথর দেহ। যে দেহ একটু আগেও ছিল সচল।
মাটিতে পড়ে কাঁপতে কাঁপতে চোখের সামনেই স্থির হয়ে গেল কয়েকটা।
প্রতিদিনের মতো আজও ওরা একসাথে ঘিরে ধরেছিল আমাকে।
কিন্তু আজ আমি অন্যদিনগুলোর মতো পালিয়ে যাইনি। ভয়ে লুকিয়ে ফেলিনি নিজেকে।
তখন চারিদিকে শুনশান নিরবতা।
দূর থেকে ভেসে আসে ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা ডাক।
হঠাৎ হঠাৎ ধেয়ে উত্তরের বাতাসে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। কয়েকটা বিল্ডিং-এর পর বটগাছ এর ডালে বসা হুতোম পেঁচা ডেকে উঠলো দুইবার।
সাপে ধরা একটা ব্যাঙ বার কয়েক ডেকে একেবারে চুপ হয়ে গেল। আজ রাতটা ওদের মৃত্যুর বারতা নিয়ে এসেছিল।
জনমানব শুন্য এই নগরীর রাতে আমি একমাত্র জেগে আছি। অপেক্ষা করেছি শত্রুর জন্য। যেভাবে শিকারের অপেক্ষায় থাকে শিকারি। রাত্রি তখন দ্বিপ্রহর।
একদল কুকুর হঠাৎ হঠাৎ রক্ত হিম করা স্বরে ডেকে উঠছে।
চারিদিকেই গা ছম ছম একটা ভাব।
আজ শপৎ নিয়েছিলাম, লড়বো বীরের মতো। শেষ পর্যন্ত বীরের মতোই লড়েছি। নিজ হাতে খতম করেছি সবকটা খুনে বদমাশকে। আজ মাথায় খুন চেপেছিল।
সিনেমার হিরোর মতো হঠাৎ হিতাহিত না ভেবে আক্রমণ করে বসি আমি। আমার অতর্কিত আক্রমণে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় সবকটা। ফলে সুযোগটা চলে আসে আমার হাতে। এরপর একে একে হত্যা করি সবকটাকে।
এখন আমার সামনে শুধু পড়ে আছে দশ-বারোটা ছিন্নভিন্ন নিথর দেহ।
পিঁপড়েরা দলবেধে একটা একটা করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেহগুলো, আলাদা করা মাথা, দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হাত-পাগুলো।
প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে লুকিয়ে আসা ঘুমের ঘোরে রক্তচোষা এই মশাগুলোকে মেরে আজ প্রতিশোধের যে তৃপ্তি পেয়েছি তা কখনো ভোলার নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।