নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
আজ আমার প্রতিশোধের দিন।
আলমিরা থেকে বের করে আনলাম নতুন শাড়ীটা। সাদা সুতী শাড়ি। না, ও বদলে রঙিন একটা শাড়ী পরেছি। একটা ব্লাউজ বেছে নিলাম যেটা সাদা।
লাল ফিতের বন্ধনী পরা যে মানা জানি। কিন্তু প্রতিশোধের মহড়ায় উল্টোটাই পরি। ন্যাপথলিনের মৌ মৌ গন্ধ আমার ভাললাগে। একটা টিয়া পাখির মত শাড়ি পরি। এটা পরা হয় না।
প্রতিশোধ নিতে হলে নিয়ম ভাঙতে হয় কখনো সখনো। চিনুকে ডেকে ইস্ত্রি করালাম। ও ভাবছে আমি কোথায় যাবো?
কোথাওই না। সড়ক চক্কর দেবো। বাড়ি থেকে বের হওয়া হয় না।
আর গাড়ি নেই। ড্রাইভার হয়তো সিমুকে শপিং এ রেখে ঘুমুচ্ছে। গাড়ি না থাকলেই প্রতিশোধটা নেয়া সুবিধার হয়।
পুরুষ জাতির লোভী দৃষ্টি, আমার কেমন যেন লাগে। আমি এত বুঝি পুরুষজাতি শব্দটা যে সাম্প্রদায়িক তা কেন বুঝি না?
কেমন লাগছে নিজেকে..নিজেকে নিজে বললাম।
দারোয়ানকে পাশ কাটিয়ে গেটে এলাম।
এই খালি সোবহানবাগ যাবে?
কই? বইয়ের দোকানে।
আমি রিকশায় উঠে হুড তুলে দেই।
এই পথটা ব্যস্ত থাকে। আমি অপেক্ষায় কখন কেউ আমাকে দেখবে।
অবশ্যই দেখবে। পিছন থেকে বাস আসছে।
এখুনি অন্তত কুড়ি জোড়া লোভাতুর চোখ বাস থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখবে। আমি জানি ওরা শাড়ি দেখবে, ঠোট, নাক চোখ, আমার হাত, বুক সব হা করে দেখবে। আমি শুধু না সব মেয়েকেই দেখবে।
কখনো দূরবীনের মত দূর থেকে নিশানা করে দেখবে। খাঁটি বাংলায় যাকে বলে গিলে খাওয়া। চোখ কে জিভের মত লাগে। কেন এত দৃষ্টিকটু ভাবে সেই জিভ লেহন করবে নারীত্বকে।
বাসের প্রতিশোধ শেষ হলে রিকশাদের দেখি।
আমি যেহেতু মাথা নত করে কুঁকড়ে আছি হুডের ভিতর। শুধুই বুঝতে পারি পিছন থেকে আমার ব্লাউজ দেখে ফেললো কেউ। কি ভাবছে? ভাবছে মেয়েটির ঠোঁট কেমন? আমার টানা চোখ, আমার লাল টিপ। চোখে লাইনার দেই না আমি। আইম ভাবছি এক্ষুনি পুরুষটি কিছু বলে ফেলবে।
আমার জানতে ইচ্ছে লোকটি কি বিবাহিত? প্রেম করে?
আমার আমার চুল ঢেকে রাখি। একটু অন্ধকার ছেয়ে আছে বলে স্পষ্ট করে আমাকে দেখতে আরোহী মধ্যবয়সী লোকটির ঘাড় বাঁকিয়ে আমাকে দেখতে হচ্ছে। দেখেই চমকে উঠেছে।
হুডের অন্ধকারের ভিতর রঙিন তারুণ্যের শাড়িতে বসে আছে এক পঞ্চান্নোর্ধ কালো কদাকার মহিলা, গালে মেসতার দাগ, ছানি পরা চোখ বসে আছে কোটরে, আর গলায় ভাঁজ। হতাশ হয়ে বিজলী চমকানোর মত ঘাড় সরিয়ে নিলো।
সেই লোকটিও কদাকার। কিন্তু তার আশার মধুর উপর পানি ঢেলে দিলো কেউ। আমি মনে মনে অট্টহাসি হাসি। মনে হলো লোভী মানুষটিকে চমকে দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছি।
রিক্সা চলছে।
একজন গেল। অন্য একজন। আরেক পুরুষ আমাকে তাকিয়ে দেখবে। এভাবে যেতে যেতে অনেক দুর।
নিজেকে একটু ছোট লাগছে।
তবুও এটা আমি করি।
যেন কোন ভয়ানক অপমান আমাকে এই প্রতিশোধ নিতে বলে।
-
ড্রাফট ১.০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।