আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আর্তনাদ

আমি চট্টগ্রামের ছেলে, কর্ণফূলীর তীর ঘেষে শাহমীর পুর গ্রামে আমার জন্ম। আমি কোন কালে নজরুল বা সুকান্ত হতে চাইনি। তবে তাদের আবেদন আমাকে আবিষ্ট করে। জীবনানন্দের বনলতা সেন, নজরুলের বিদ্রোহী আর সুকান্তের পূর্বাভাস আমাকে হতাশার বেলাভুমির আলুথালু পথে নব পথের আর্তনাদ নবারুণ স্বপ্ন লালিত নবরত্নের দীর্ঘ পথ পরিক্রমা, অন্তর্যামীর অঙ্গুলি হেলনে তার বিস্তার, কস্মিনকালের কপথে তার বিচরণ, পরজীবীতার দর্শনে তার পূর্ণতাপ্রাপ্তি আর বিধাতার নির্দেশে তার আগমনী বার্তা, কুহেলির উত্তরণ ঘটিয়েছে। দীর্ঘ প্রতীার পথ পেরিয়ে, জড়তার বন্ধনকে ছিন্ন করে, বিশাল অর্ণবের অজস্র লহরীর সন্ধানে ব্যাপৃত আত্মার নিবিড় আবেষ্টনের মোহ দর্শনে আবির্ভাব ঘটেছিল নব অতিথির।

সে এক ইতিহাস। নবরত্নের সন্ধান আর আগমনী বার্তার প্রতীার পালা পার্বণের ইতি ঘটেছে। রূপের আবর্তে, অম্রমুকুলের মিষ্টি মধুর সৌরভে, মন মাতানো হিল্লোলের আবহ নিয়ে আগমন ঘটেছিল তার। সে ছিল গোলাপ সদৃশ শিশির বিন্দুর ন্যায় চির সুন্দর, চির কোমল, চির অম্লআন। সে এক নিষ্পাপ হৃদয়, বেদনার সাগর, প্রকৃতির মতই শান্ত ও নির্বাক।

পরনেই নব অতিথির মৌনতা নির্বাসিত করেছে হিল্লোল, জমাট করেছে রিক্ততা, ভারাক্রান্ত করেছে মাতৃ হৃদয়। তারই মাঝে জননীর চাহনিতে নেমে এলো দিগন্তের বিলীনতা, হৃদয়ের নীরব আহাজারি আর গভীর বেদনা। বিদায়ের তরে তার সমগ্র হৃদয় জুড়ে বেজে চলেছে বেদনা-মলিন বিষণ্ণতার অমিয় বাণী। স্বপ্ন সাধের নবরত্নের অন্তর্ধান আর বঞ্চিত হৃদয়ের অজস্র রক্তরণ মাতৃহৃদয়ের আবেদনকে মর্মস্পর্শী করেছে। আমার বিশ্বাস, নব তনয়ার প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা আর মাতৃহৃদয়ের করুণ আর্ত-চিৎকার আপনার হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে।

গোলকপিণ্ড (তাদের ভাষায়) পতনে মুখটা তাদের শুরুতেই ভার ছিল। পতিত বস্তু (তাদের ভাষায়) প্রাণহীন জেনে তাদের কুসংস্কারের পারদের গতি ঊর্ধ্বমুখী হল। অজস্র তির্যক বাক্য আর বিকৃত মুখভঙ্গি তাদের বিতৃষ্ণা প্রকাশে যথেষ্ট ছিল। হীনতার কাদা মাখানো কদর্য কথা তার জানা ছিলনা। যোগ্যতার উপহাস আর বাঁকা বাক্যের বিষবাষ্পের বীনবাণী আর অফুরন্ত খেদোক্তি ধৈর্যহীনতার খোরাক যুগিয়েছিল।

তবুও মাতৃত্বের অমোঘ আসক্তিতে অশ্র“সিক্ত টলমল বারি আঁখির পাতায় শুকিয়ে রেখেছে। নব অতিথির নিষ্পাপ প্রাণের আত্মাহুতি আর নিরুপমার বেদনার্ত আর্তনাদ বধির বিবরে প্রবিষ্ট না হলেও বিধাতার কর্ণকুহরে ঝংকৃত হয়েছে নিদারুনভাবে। জটিল আবর্তের কুটিল চিন্তার মেলায় তাকে শুনতে হয়েছে কুসংস্কার আর তির্য বাক্যের অজস্র শব্দমালা। শত কঠোরতা ও জীবন সায়াহ্নের অন্তিম মুহূর্তে সে বাকরুদ্ধ হলেও প্রতিবাদের অজস্র সত্যের লৌহকপাট তার আঁখি জুড়ে ঠিকরে পড়েছিল। কুৎসা আর কপট বাগ্নীতার প্রতিযোগিতার সমাজে সত্যের অসহায়ত্ব মর্যাদা না পেলেও বিধাতার দরবারে ঠিকই মর্যাদা পাবে বলে বিশ্বাস করি।

সেতো কারো কল্পনার বিলাস নয়, নাম পরিচয়হীন কোন সমালোচকের অযোগ্যতার করুণার পাত্র নয়, নয় কোন কুসংস্কারের কাব্য কাসিদার উল্টো প্রলাপ। নিকৃষ্টতম অপবাদ, নিয়তির পরাকাষ্টে হস্তপে আর সৃষ্টি কর্তার সৃজন কর্মে নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবনে তারা ছিল সদা ব্যস্ত। শৃঙ্খলিত লৌহকপাটে আবদ্ধের কর্কশ আবৃত্তি উজ্জ্বল গগনকে তমাসক্ত করেছে। কথার প্রতিটি বুলিতে প্রকাশিত হয় অভিযোগের রসাত্মক নাট্যাংশ। সেই সাথে শৃঙ্খলিত কব্যের বিকৃত বিবৃতি স্বাভাবিক সমতা ও সম্পর্ককে সীমিত করেছে।

দায়িত্ব ও কাণ্ড জ্ঞানহীন একটি উদ্ধৃতি হুতাশনের লেলিহান শিখার প্রজ্বলনকে তরান্বিত করেছে। সৃষ্টির পূর্ণগ্রাসে একবিংশ শতাব্দী যেন অসমব্যাধির ভারে নুহ্য। শতাব্দীর অকৃপণ সৃষ্টি আজ বারুদহীন যুদ্ধে বিধ্বস্ত। চারদিকে দেখা যাচ্ছে মানবতার বিপন্ন স্বাদ। মানবতা আজ অসহায়, শৃঙ্খলিত।

মেকি মানবতার লেবাস পরে অবয়ের অট্টহাস্যে তারা উল্লসিত। মানবতার দোহাই দিয়ে স্বার্থসিদ্ধির সবকটি কপাট খুলে দিয়ে সমাজের বিষময় রস পান করাতে তারা বদ্ধপরিকর। তারা কান থাকতেও বধির, চোখ থাকতেও অন্ধ, যাদের হৃদয় আছে অনুভূতি নেই। সত্যকে যারা অস্বীকার করতে চায়, মিথ্যাই তাদের চাতুরীর ট্র্যাজিক কাব্য। আর যারা সত্যকে জেনেই অস্বীকার করে মিথ্যাই তাদের ভ্রষ্ট বীরত্বের সাধহীন মহাকাব্য।

বিদ্র: সমাজের পরিবর্তন চাই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।