ভালবাসি
যাত্রার শুরুতেই হোঁচট খেলো নয়টি নতুন ব্যাংক। ব্যাপক আশা নিয়ে ব্যাংকগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করলেও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না, মিলছে না গ্রাহকও। কারন অর্থাভাবে ঋণ বিতরণ করতে না পারায় পুরনো ব্যাংগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে ওঠতে পারছে না তারা। ফলে যে স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল তিক্ত যাত্রায় সে স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাচ্ছে নুতন ব্যাংকগুলোর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ না করলে প্রতিয়োগিতায় পিছিয়ে পড়বে।
আর গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা থাকলে তা বাস্তবে পরিনত হবে না। কারণ ব্যাংকগুলোর এখনও পর্যাপ্ত শাখা নেই। আর পর্যাপ্ত শাখা না থাকলে পর্যাপ্ত গ্রাহক সংগ্রহ করাটাও প্রায় দুরুহ হয়ে পড়বে।
রাজনৈতিক বিবচেনায় গত বছর এপ্রিলে ছয়টি বাণিজ্যিক ও তিনটি এনআরবি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় সরকার। নতুন ৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৯টিই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে।
সর্ব সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক যাত্র শুরু করে মধুমতি ব্যাংক। এই ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা ঢাকার সাংসদ ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। এর আগে যাত্রা করে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্মারস ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং মেঘনা ব্যাংক।
নতুন এই ব্যাংকের পরিচালকরা আমানত ও ঋণের সুদের হারের ব্যবধান ৫ শতাংশের নিচে রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে আমানতকারীদেরও কম মুনাফার বিষয়টি মেনে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
জানা গেছে, ২০টির বেশি শর্ত পূরণের মধ্য দিয়ে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যবসায়ীরা তখন প্রত্যাশা করেছিলেন, নতুন ব্যাংক হলে আর্থিক খাতে প্রতিযোগিতা বেড়ে কমে আসবে সুদের হার।
নতুন ব্যাংক কর্তৃপক্ষও ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিক। সে জন্য তারা ৫ শতাংশের নিচে স্প্রেড (আমানত ও ঋণের সুধ হারের ব্যবধান) রেখে ঋণের সুদের হার কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেক্ষেত্রে আমানতকারীদের সুদের হারও কমিয়ে আনার ইঙ্গিত দেন ব্যাংক পরিচালকরা।
পুরনো ৪৭টি ব্যাংকের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকার জন্যই তাদের বাড়তি এই চেষ্টা। এরই অংশ হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুবিধা দিতেও প্রস্তুত নতুন এই ব্যাংকগুলো।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, নতুন ব্যাংকগুলো এখনও আশানুরূপ গ্রাহক পায়নি। গ্রাহক আকৃষ্টেও তাদের কৌশল খুব একটা কাজে আসছে না। তবে পর্যাপ্ত শাখা না থাকা গ্রাহক কম হওয়ার অন্যমত কারণ বলে মনে করছেন ব্যাংক উদ্যোক্তারা।
তাছাড়া গ্রামাঞ্চলের শাখায় এমনিতেই গ্রাহক কম থাকে। আর ওইসব শাখায় লেন-দেনও হয় শহরের ১০ ভাগের একভাগেরও কম।
জানা গেছে, নতুন ব্যাংকের আবেদন আহ্বানের সময় পরিচালনা পর্ষদ সর্বাধিক ১৩ সদস্য বিশিষ্ট করার যে শর্ত দেওয়া হয়েছিলো সেখানে কিছুটা পরিবর্তন এনে পদ সংখ্যা ২০ করা হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত ব্যাংক কোম্পানী আইন পাশ হলে সে সংখ্যা ১৩ তে নামিয়ে আনার অঙ্গীকারও করতে হয়েছে উদ্যোক্তাদের।
এদিকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম. আমানউল্লাহ বলেছেন, নতুন ব্যাংকের ঋণ বিতরণে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
তবে লোভনীয় অফারে লোকবল নিয়োগের সমালোচনা করেন তিনি।
মেঘনা ব্যাংক এর চেয়ারম্যান রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য এইচএন আশিকুর রহমান বলেন, অনেকগুলো পুরনো ব্যাংক রয়েছে। তার মধ্যে নতুন ব্যাংকগুলো যদি গ্রাহকদের বাড়তি সুবিধা না দেয় তাহলে গ্রাহক পাবে কি করে? তাই আমরা শুরু থেকে গ্রাহকদের সেবা এবং সুবিধা বেশি দিতে চাই। সেভাবেই আমারা আমাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছি।
প্রতিটি ব্যাংক উদ্যোক্তাকে লাইসেন্স নেওয়ার আগে পরিশোধিত মূলধন হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকা জমা রাখতে হয়েছে।
তবে চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরতে এই ব্যাংক উদ্যোক্তাদের আরো চাপে পড়তে হবে। ওই সময় তাদেরকে আরো ২০০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা দিতে হবে।
জানা গেছে, ৪০০ কোটি টাকা জমা দিতে না পেরে অনেক উদ্যোক্তা তাদের ডিরেক্টরশিপ বিক্রি করে দিয়েছে। আবার অনেকেই গোপন চুক্তির মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেছেন। ফলে আরো ২০০ কোটি টাকার বাড়তি চাপ এসব উদ্যোক্তা বহন করতে পারবে কি না তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ি ঢাকার বাইরে কোনো ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া এনআরবি ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক বাণিজ্যে অবদান রাখতে বিশেষ করে সভরেন বন্ড বিক্রীর শর্ত দেওয়া হয়েছে।
প্রবাসীদের মালিকানায় নতুন তিনটি ব্যাংকের মধ্যে একটির নাম এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড। বাকী দু’টির নাম ছিল এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড। দু’টির একই নাম থাকায় লাইসেন্স দেয়ার আগে একটির নাম পরিবর্তন করা হয়।
নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় শর্ত মানতে গিয়ে কোনো ঋণ বা কর-খেলাপী ব্যক্তি নতুন ব্যাংকের পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হতে পারেন নি, এমনকি গত ৫ বছরেও কেউ খেলাপি বা এ বিষয়ক কোনো মামলা অনিষ্পত্তি থাকলে তার আবেদন বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। শর্তের মধ্যে আরো রয়েছে, এসব ব্যাংকের শাখা ১:১ অনুপাতে হতে হবে। মানে শহরে একটা শাখা খোলা হলে গ্রামেও একটা শাখা খুলতে হবে। নতুন ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের কমপক্ষে ৫ শতাংশ কৃষি খাতে, আগের বছরের নিট আয়ের ১০ শতাংশ সিএসআর খাতে ব্যয় করতে হবে। অথবা এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় যে নির্দেশনা দেবে সে মোতাবেক চলতে হবে।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী ফরাসত আলী। এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড নামে একটি ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী ইউএ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী। অন্যটির উদ্যোক্তা যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সীমার্ক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ। তার ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড রাখা হয়েছে।
দেশীয় উদ্যোক্তাদের মালিকানায় নতুন ৬টি ব্যাংকের মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।
ফার্মারস ব্যাংকের চেয়ারম্যান সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। কিন্তু তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ায় তাঁর পরিবর্তে চেয়ারম্যান হয়েছেন তার স্ত্রী ড. সিতারা আলমগীর। আর তিনি উদ্যোক্তা শেয়ারধারী হিসেবে থাকছেন।
মধুমতি ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা ঢাকার সাংসদ ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নেতা ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী।
মেঘনা ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান ও নসরুল হামিদ বিপু। মিডল্যান্ড ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা প্রধানমন্ত্রীর আয়কর আইনজীবি এম মনিরুজ্জামান খন্দকার।
তবে কোন ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেধে দেওয়া সময় মতো তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অধিকাংশ উদ্যোক্তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করে সময় বাড়িয়ে নেয়। সব থেকে বেশি সময় নিয়েছে মধুমতি ব্যাংক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।