আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের ইশকুল-১

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া! এমন কী কোন স্কুল হতে পারে, ছোটদের জন্য, যেখানে সৃজনশীলতা ও নান্দনিকতা অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। সেখানে কোন কিছু শেখানো হয় না। এর শিক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেরা শেখে। শিক্ষকরা সেখানে ঠিক শিক্ষক নন, বরং ফ্যাসিলিটেটর!!! তাঁরা কেবল পথ বাতলে দেন, দেখিয়ে দেন।

শেখান না। এটি আসলে অলিক কল্পনা নয়। ঠিক এমন স্কুলের স্বপ্ন দেখতেন মন্টেসরি। তার শেখানো পথেই মন্টেসরি স্কুলগুলো চালু হয় বিশ্বে। আমাদের দেশেও, শুনেছি, মন্টেসরিকে মাথায় রেখে নাকি কেজি স্কুলের সূচনা হয়েছিল!!! তবে, এখন এরকম স্কুল হয়তো সারাদেশে হাতে গোনা যাবে।

মন্টেসরির পর এখন অনেক দিন গেছে। আরো অনকে নতুন নতুন পদ্ধতি এসেছে। খেলা আর আনন্দের মাধ্যমে শেখার ব্যাপারটা নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। প্রচন্ড চাপে থেকেও আনন্দের সঙ্গে যে পড়ালেখা করা যায় সেটি কদিন আগে আমাদের প্রথম লীলাবতী গণিত ক্যাম্পের মেয়েরা আমাদের বলে গেছে!!! কাজে এগুলো খুবই সম্ভব! মোটেই অসম্ভব নয়। এরকম স্কুলগুলোতে কীরকম ভাবে দিন যায়? ধরা যাক ক্লাশ টুর কথা।

আমি যে শাখার কথা বলছি সে শাখার মাস্কট হচ্ছে ছোট ভালুক ছানা। ওদের ক্লাশে একটি ছোট ভালুক ছানা আছে। প্রতি বৃহস্পতিবার সপ্তাহান্তে সেটি নিয়ে যায় ক্লাশের কেহ। এ সপ্তাহে সেটি বাসায় নিয়ে এসেছে টুম্পা। আমি বললাম,” বাহ! ওর নাম কি?” টুম্পা- ”এর নাম শুভ্র” শুভ্র কেন? কারণ এর গায়ের রং।

তারপর দুইদিন দেখলাম শুভ্রকে নিয়ে টুম্পার খুবই ব্যস্ততা। ওর মার সঙ্গে বসে ঠিক করা হল ও কী খাবে, কোথায় থাকবে। টগর আবার এসে যাতে ওরে কোন ডিস্টার্ব করতে না পারে তার জন্যো ব্যবস্থা করা হল। টুম্পা একটা খাতার মধ্যে লিখে রাখছে শুভ্র‌-র সব কীর্তির কথা। যেমন --- শুভ্র আজকে আমাদের বাসায় এসেছে।

গাড়িতে আসতে আসতে আমি ওকে বাসার সব কথা বলেছি। বলেছি তহুরা আপু আর গোলাপী আপু তাকে ডিস্টার্ব করতে পারে। সে যেন কিছু মনে না করে। কারণ আপুরা ভাল, খালি নতুন কাউকে পেলে ডিস্টার্ব করে। বাবা অফিস থেকে আসলে আমি তাকে জড়িয়ে ধরি।

আজকে ধরবো। তখন কিন্ত আমি শুভ্রকে কোলে রাখতে পারবো না। শুভ্র আলুভর্তা খেতে চাইলো না। আমার খুব মন খারাপ হয়েছে। আলুভর্তা আমার খুব প্রিয়।

কিন্তু ও কেন খেলো না। রাতে শুভ্র আমার সঙ্গে থাকবে। আমার মনে হচ্ছে ভাইয়া রাতের বেলায় ওকে হ্যাইজ্যাক করার চেষ্টা করতে পারে। খুব সতর্ক থাকতে হবে। ............................আরো অনেক কিছু ওর খাতার মধ্যে পাওয়া যাবে।

টুম্পা খুব সতর্ক থাকছে যাতে শুভ্রর সব কথা সে রোববার স্কুলে গিয়ে ঠিকঠাক মতো বলতে পারে। ------- স্কুলের এটি হলো শিশুর ক্রিয়েটিভিটি বিকাশের একটি পদ্ধতি সঙ্গে দায়িত্ববোধও! শুভ্র আসলে একটি টেডি বিয়ার!!!! একইভাবে গণিতের ক্লাশে ওদের ক্লাশ করতে হয় মার্বেল দিয়ে। ক্লাশে ওরা সংখ্যা রেখার ওপর লাফালাফি করে। ওদের স্কুলে একটি থিয়েটার আছে। সেখানে ওরা নিয়মিত সিনেমা দেখে, ভিডিও দেখে।

নিজেরাই আবার নাটকও করে। খেলার মাঠ একটা সমস্যা। তাই ওরা নিয়মিত দূরের একটা মাঠে খেলতে যায়। স্কুলেই ওদের জন্য টিফিন তৈরি হয়। সবাই মজা করে সেটি খায়।

টিফিন খাওয়ার পর ক্লাশ টুএর বড়োদের থালা বাসন ধুয়ে রাখতে হয়। কোন একদিন যদি ঐ স্কুলে যান তাহলে দেখবেন একজন হঠাৎ করে দৌড়ে এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিং‌এ চলে যাচ্ছে, থিয়েটার রুম থেকে হই হই শব্দ। কোন রকমে কোন ক্লাশের সামনে গেলে হয়তো দেখা যাবে ‌ক্লাশের মধ্যে টিচারের চোখে রুমাল বেধে কারামাছি ভো ভো খেলা হচ্ছে!!! আপনি ততক্ষনে হয়তো নিশ্চিত হবেন যে, এই স্কুলে কোর পড়ালেখা হয় না। তারপরও আসছেন যখন ভদ্রতা করে প্রিণ্সিপালের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। হয়তো তিনি রুমে নেই।

তখন আপনি সেখানে টাঙ্গানো স্কৃলের রেজাল্ট দেখবেন। এবং চমকে গিয়ে জানবেন স্কুলটি হলো এই এলাকার সেরা বিদ্যাপীঠ!!!! এমন একটা ইশকুল কী কেহ কখনো বানাবে না, এই দেশে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।