"হারিয়ে গিয়েছি, এই তো জরুরী খবর ... "
"আপা, কি লাগবে? এদিকে আসেন ... দেখেন ..."
দু’ পা এগোতে না এগোতেই আবারো ডাক।
শহরের কেন্দ্রে নির্মিত বিলাসবহুল শপিং মলের উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত আইল ধরে এগিয়ে যেতে যেতে শুনি আশে-পাশের দোকানগুলো থেকে দোকানীদের ডাকাডাকি। ডাক উপেক্ষা করে এগিয়ে যাই। এই মূহুর্তে একটি নির্দিষ্ট দোকানে পৌঁছানোটা খুব বেশি দরকার। দোকানটি অবশ্য একটু দূরে।
একদম শেষ মাথায়। অবাঞ্ছিত আলোয় আলোকিত নয় বলে খুব একটা চোখে পড়ে না। দোকানীদের হাঁক-ডাক উপেক্ষা করে হেঁটে যেতে থাকি।
"আপা, একবার শুধু আমাদের এ দোকানটায় আসেন। বিশেষ একটা জিনিস আছে।
বিশেষ বিশেষ মানুষদের জন্যই শুধু তা এনে থাকি। একবার দেখে যান। "
কিছুটা পথ আটকানোর মত করেই সামনে এসে দাঁড়ায় একজন।
"আমাকে ডাকছেন কেন? বিশেষ মানুষদের খুঁজে দেখুন না। "
"সেরকম কেউ নাহলে কি আপনাকে ডাক দিতাম? প্লীজ, একবার শুধু দেখে যান ..."
কিঞ্চিত কৌতুহলের পাল্লায় পড়ে ঢুকলাম দোকানটায়।
দোকানী সতর্ক দৃষ্টিতে এদিক ওদিক দেখে খুব সাবধানে শেলফের এক কোনায় লুকিয়ে রাখা একটা প্যাকেট বের করে এনে রাখে আমার সামনে। প্যাকেট খুলতেই বেরিয়ে আসে চোখ ধাঁধানো স্ফটিকের একটা মূর্তি। বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় মূর্তির স্ফটিক শরীর থেকে বেরোতে লাগলো নানা রঙের আলো। মূর্তিটি হাতে নিয়ে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতেই হঠাৎ চোখে পড়লো বুকের কাছে একটা ছোট্ট আয়না বসানো। তবে তা পুরোপুরি অস্বচ্ছ নয়।
আয়নাটায় তাকালে ওপাশের কিছুটাও দৃশ্যমান হয়।
"এ জিনিস তো সবার জন্য না। আর আপনার জন্যও দামটা নামমাত্রই রাখা হবে। নিয়ে যান। "
মুগ্ধ চোখে জিনিসটা দেখতে দেখতে হঠাৎ দোকানীর গলার আওয়াজে মুগ্ধতার ধ্যান ভাঙলো।
নিবো কি নিবো না- এ দ্বিধায় দুলতে দুলতেই কোন ফাঁকে যে দামটা মিটিয়ে দিয়েছি টের পাইনি। প্যাকেটটা সযত্নে ব্যাগে ভরে বেরিয়ে এলাম। নাহ, আজকে আর ঐ দোকানটায় যাওয়া হবে না। তার চেয়ে বাড়ী ফিরে যাই বরং।
ঘরে ফিরেই বের করে আনলাম মূর্তিটা।
সাজিয়ে রাখলাম জানালার কাছের ঐ শেলফটায়; যেখানটায় সূর্যের আলো পড়ে বাধাহীনভাবে। দিন-রাত মুগ্ধ চোখে দেখতেই থাকি , শুধু দেখতেই থাকি। আর দেখি সেই অস্বচ্ছ আয়নাটা। কখনো কখনো সেখানে নিজের মুখটাও দেখতে পাই। কিন্তু খুবই আবছা সে ছবি।
হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম স্ফটিকের ঔজ্জ্বল্য যেন দিন দিন কমছে। রঙিন আলোর বদলে মাঝে মাঝেই বিচ্ছুরিত হয় অন্ধকার। তার বুকের কাছে ধরে রাখা আয়নাটাতেও আবছা প্রতিবিম্ব অনুপস্থিত। খুবই অদ্ভুত একটা ব্যাপার! না দেখলে বোঝার উপায় নেই।
বিরক্তি আর ঘৃনা ভরে মনে মনেই কাকে যেন গালি দেই, "ধুর! অপ্রয়োজনীয় জিনিসটা কিনে ঠকেই গেলাম!"
ছুঁড়ে ফেলে দেই মূর্তিটা জানালা দিয়ে।
যদি একবার সে তার দ্যুতি ফিরে পায় -এই আশায় শেষবারের মত তাকিয়ে দেখি জানালা দিয়ে। কিন্তু নাহ! আঁধার ছড়াতেই ছড়াতেই এক সময় দৃষ্টির সীমারেখা পেরিয়ে যায় মূর্তিটা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।