আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইশকুল বেলার পুংটামি!! (স্মৃতির পাতা থেকে জাবর কেটে দিলাম)

টেনে হিঁচড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো ফেলে আসা অতীতের দিনগুলোতে। বাতাসের চলার গতি রুদ্ধ করে বের করে আনবো ধূলো জমা বিবর্ন সময়টাকে। হাতের মুঠোয় ধরে থাকা ধারালো ছুরির ফলা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করবো অসহায় মুহূর্তগুলো। তারপর... অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে মুখোশের অন্ত
যখন স্কুলে ছিলাম তখন মনে হত ইশ্ কবে যে কলেজে যাবো? তার চেয়ে বেশি ইচ্ছা হত ভার্সিটি যেতে। কিন্তু যখন কলেজে গেলাম তখন বুঝলাম হায়রে কি জীবন ফেলে আসলাম।

তখন স্কুল লাইফকে অনেক বেশি মিস করতাম। আর ভার্সিটি লাইফের কথা বাদই দেই। এটা কোন লাইফ হল? বিশেষ করে আমরা যারা প্রাইভেটে পড়ি। নতুন সেমিস্টার মানে নতুন ফ্রেন্ড। এই দুঃখে কারো সাথে মিশতেই ইচ্ছা করে না।

আর মেশার সময়ও পাওয়া যায়না। একটা ক্লাস করতে না করতেই দৌড় দিতে হয়। মাঝে মাঝে যখন স্কুল লাইফের কোন ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয় তখন কত যে ভালো লাগে বলে বুঝাতে পারবো না। সেদিন ভার্সিটিতে স্কুল লাইফের এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হবার পর স্কুল লাইফ নিয়ে কথা বলতে বলতে কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দিল ঐ বন্ধুটি। তাই আমার আজকের পোষ্টটি স্কুল জীবনকে ঘিরে ।

যারা স্কুল জীবনকে এখনও মিস করেন আমার মত আমি তাদের সবাইকে এই পোষ্টটি উৎসর্গ করলাম। প্রথম ঘটনা: এস.এস.সি পরীক্ষার আগে স্কুলে কোচিং ক্লাস হত। কোচিং ক্লাস করা বাধ্যতামূলক ছিল। আমরা কিছু অবাধ্য ছাত্র ছিলাম যারা ক্লাস করতাম না। আজকে আর ঐদিকে যাবো না।

মূল ঘটনাই ফিরে যাই। বাংলা ২য় পত্র প্রথম ক্লাস টেস্টের রেজাল্ট দিল। সবারই রেজাল্ট খুব খারাপ হল। বিশ এ হায়েস্ট উঠেছিল মাত্র বারো। স্যার খুবই জলি মাইন্ডের ছিল।

কিন্তু ঐদিন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। সবাইকে ইচ্ছামত ঝাড়ি। এর মধ্যে আমার প্রচন্ড বেগে টয়লেট চাপলো। টয়লেটে যাবার জন্য অনুমতি চাইলাম। আমাকে পুরা ছিলা ফেলসে টুয়লেটে যাবার কথা শুনে।

পরীক্ষাতে কত পাইছি জিগ্গেস করলো। বললাম এগারো পাইছি। সেকেন্ড হায়েস্ট। স্যার বলে আজকে টয়লেটে যাইতে হবে না। পরীক্ষা খারাপ করার শাস্তি।

কি আর করার বসে রইলাম। হঠাৎ করে মাথায় একটা বান্দরামি বুদ্ধি আসলো। দাড়িয়ে স্যারকে বললাম স্যার একটা কথা বলতে চাই। স্যার বললো পড়াশুনা রিলেটেড হলে বল নাহলে একদম চুপ। আমি স্যারকে আশ্বস্ত করলাম পড়াশুনা রিলেটেড।

স্যার বলার অনুমতি দিল। আমি ৩২ পাটি দাত বের করে বললাম স্যার: "ভোগে প্রকৃত সুখ নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ" স্যারসহ ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে দিল। এরপর স্যারের মুডও ঠিক হল এবং আমাকেও টয়লেটে যাবার অনুমতি দিল। দ্বিতীয় ঘটনা: আমাদের স্কুলে বেতন ডেটে স্যারদের মাথা খারাপ হয়ে যেত অনেক স্টুডেন্ট ছিল বলে। টিফিনের আগের তিনটা ক্লাস বাদ দিয়ে শুধু বেতন নেয়া হত।

কিছু কিছু স্যার ছিল টাকা ভাংতি করে না দিলে বেতন নিবে না নয়তো ভাংতি না দেয়ার কারনে ২/৩ টা বেতের বাড়ি দিত আর সাথে ঝাড়িটা ছিল ফ্রি। যাইহোক আমাদের স্যার বেতের বাড়ি দিত না যেই কাজটা করতো সেটা আরো ডেন্জারাস। কলম দিয়ে কমপক্ষে ১৫/২০ টা গুতা দিত। যাইহোক আমাদের একটা ফ্রেন্ড ওকে ওর আসল নামে কখনও ডাকতাম না। ওকে সবাই রঙ্গার বলে ডাকতাম।

সিন্দাবাদের নিগ্রো রঙ্গারের কথা মনে থাকলে আপনারা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন কেন ওকে সবাই রঙ্গার বলে ডাকা হত। বেচারা ঐদিন ৫০০ টাকার নোট নিয়ে এসেছিল বেতন দেবার জন্য। এখন ভাংতি করতে দিয়েছিল জুল্লু কাবিলা জসিম ভাই কে ( ওর নিক নেম জুয়েল)। ওকে জুল্লু কাবিলা জসিম ভাই ডাকার কারন হল ও আবার ছোটবেলা থেকে বাংলা সিনেমার ফ্যান। প্রতিদিন তার বাংলা সিনেমা দেখতেই হবে এবং তার চুলের সিঁথির স্টাইল ছিল বাংলা সিনেমার নায়ক জসিমের মত তাই জসিম ভাই।

জসিম ভাই টাকাটা আমাকে দিল ভাংতির জন্য। দেবার সময় আমাকে বলে নাই যে এটা রঙ্গারের টাকা। আমিতো টাকা পেয়ে পাইছি আর পামু খুশিতে গোপনে ফ্রেন্ড হাসিবকে টাকা দিয়ে বললাম যাতো সবার জন্য সিঙ্গারা, চিপস্,কোক নিয়া আয়। আনার পর সবাই মনের আনন্দে সাবাড় করার কিছুক্ষন পর রঙ্গার জসিম ভাইয়ের কাছে ভাংতি টাকা চাইলো এবং যথারীতি জসিম ভাই আমার কাছে ভাংতি টাকা চাইলো। ৫০০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মত খরচ হয়ে বাকি ৩০০ টাকার মত ছিল আমি ওগুলা জসিম ভাইয়ের হাতে দিয়ে বললাম এই নে।

জসিম ভাই বলে যে তোরে দিলাম ৫০০ আর তুই দিতাছস ৩০০ মানে কি? মজা লস? আমি উল্টা রেগে গিয়ে এতক্ষন যে ভুড়িভোজ দিলি খাওয়ার শেষে থ্যান্কস্ও তো দিলি না। আমি বললাম এখন থ্যান্কস্ দিয়া লাভ নাই তোরে থ্যান্কস্ কারন তোর টাকা দিয়া সবাই ভুরিভোজ করছে। সবাইরে বললাম সবাই ওরে থ্যান্কস্ জানাও এবং তালিয়া বাজাও। রঙ্গার এগুলা শুনে তার তো চোখ আসমানে উঠে গেছে। লাগিয়ে দিসে ঝগড়া জসিম ভাইয়ের সাথে।

আমাকে বলতে আসছে আমি বললাম আমারে টাকা দেস নাই সো যা বুঝার জসিমের লগে বুঝ। জসিম আমারে কিছু বলতে আসলে আমি বলি যে টাকা দেয়ার আগে কসনাই এইটা রঙ্গারের টাকা সব দোষ তোর। এখন তুই টাকা দিবি। ঝগড়া করার সময় স্যার দেখে ফেলায় এসে কাহিনী শুনে রঙ্গার ও জসিম ভাইকে কয়েকটা ঘুসি এবং চপেটাঘাত করে আমার মসকো চিকনা বডিতে এসে একটা ঘুসি দিল। ঘুসিটা হাড্ডিতে লাগায় স্যার হাত ডলতে ডলতে চলে গেল এবং যাবার সময় বলে গেল তোদের প্রবলেম তোরাই সলভ্ কর।

মাঝখান দিয়ে আমি ব্যাথা পাইলাম। পরে অবশ্য সবাই মিলে টাকা উঠিয়ে রঙ্গারের বেতন দিয়েছিলাম। তৃতীয় ঘটনা: স্কুলে টিফিন টাইমে আমাদের বাসায় খেতে যাবার অনুমতি ছিল। যাদের বাসা স্কুলের কাছে ছিল আমরা সবাই বাসায় খেতে যেতাম। একদিন বাসা থেকে খেয়ে স্কুলে ঢুকার সময় গেটে সুজন নামের এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা।

ওর সাথে গল্প করতে করতে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছি হঠাৎ করে সদ্য মুক্তি পাওয়া আশিক বানায়া আপনে মুভির আশিক বানায়া আপনে গানটা গাইতে শুরু করলো। পেছন থেকে কে জানি তার কাধে হাত রাখলো। ও ভাবলো কোন ফ্রেন্ড তাই বিরক্তিভরে ধুর বলে হাতটি সরিয়ে দিয়ে সুখে গান গাইতে থাকলো। এভাবে করে তিনবার যখন হাত রাখলো বেচারা ধৈর্য রাখতে না পেরে গান গাওয়া বন্ধ করে বিড় বিড় করে একটা গালি দিয়ে পেছনে ঘুরে কোন কিছু চিন্তা না করেই দিলো এক ঘুসি কারন ও একটু পাগলা কিসিমের ছিল। সাথে সাথে পেছনে তাকিয়ে দেখি আমাদের স্কুলের সবচেয়ে পপুলার এবং ডেন্জারাস স্যারটিকে সুজন না বুঝে ঘুসি মেরেছে।

স্যার অবাক হবার পালা কাটিয়ে বেত উঠিয়ে যেই মারতে যাবে তখনই আমি চিৎকার করে বললাম দোস্ত ভাগ। স্যার মারার আগেই আমরা এক দৌড়ে ক্লাসে চলে গেলাম। দুঃখের বিষয় টিফিনের পরবর্তী ক্লাসটি স্যারের ছিল। স্যার ক্লাসে এসে ঘুসির ব্যাপারটা চেপে গিয়ে গান গাওয়ার অপরাধে সুজনকে ৩/৪ টা বাড়ি মারলো এবং পুরো ক্লাস আওয়ার নীল-ডাউন করিয়ে রাখলেন আর চিৎকার করার জন্য আমাকে একটা বাড়ি মারলেন এবং ১০ মিনিট হাই বেঞ্চে দাড় করিয়ে রাখলেন। ক্লাস শেষে আমরা দুজনই অবশ্য স্যারের কাছে মাফ চাইছিলাম ব্যাপারটার জন্য।

কারন আমরা তো ভেবেছিলাম টিসি খেতে হবে!! আজ এই পর্যন্তই!!!!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।