আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাউয়াছড়া : ঘুমন্ত পাহাড়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য



লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক প্রকৃতিপ্রেমীদের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অনন্য স্থান। বন-পাহাড় আর জীবজন্তুর অভয়ারণ্য। পাহাড়ি এই জনপদে রয়েছে খাসিয়াসহ বিভিন্ন উপজাতীয়দের বসবাস। কাছ থেকে দেখলে মনে হবে ঘুমন্ত সবুজ পাহাড়ের অতন্দ্র প্রহরী হলো এসব আদিবাসী। পাহাড়ের পাদদেশে এই জনগোষ্ঠীর যুগ যুগ ধরে প্রকৃতির পরিচর্যা করে লাখো বৃক্ষ লালন-পালন করছে।

এর ফলে এসব পাহাড়ে দিন দিন নতুন বৃক্ষ সতেজভাবে বেড়ে উঠছে। পাহাড়ি গাছে লতিয়ে বেড়ে ওঠা পানচাষ করে খাসিয়াদের জীবন চলে। ঐতিহ্যগতভাবে বন, পাহাড়, সবুজ গাছগাছালি ও প্রকৃতির সঙ্গে খাসিয়াদের এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃতির আপনজন হিসেবে অতি কাছে বসবাসকারী খাসিয়ারা তাদের মতোই সভ্যতার অনাদরে প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে ওঠা বৃক্ষরাজিকে সন্তানতুল্য মনে করেন। পাহাড়ি শীতল ছায়ায় বেড়ে ওঠা এসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মননশীলতাও অত্যন্ত কোমল।

লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে এশিয়া মহাদেশের বিরল প্রজাতির একটি গাছ আছে, যার নাম ক্লোরোফর্ম বৃক্ষ। এটি ভূমণ্ডলের একমাত্র আফ্রিকার বন ছাড়া আর কোথাও দেখা যায়নি। এককথায় বলা যায়, দুর্লভ নেশার গাছ। যার পাতার গন্ধে মানুষ নিজের অজান্তে ঘুমিয়ে পড়ে গাছতলায়। অনেকেই এই গাছকে ঘুমপাড়ানি গাছ বলে ডেকে থাকেন।

এই গাছটি লাউয়াছড়া ফরেস্ট রেস্ট হাউসের পার্শ্বে রয়েছে। বর্তমানে গাছটির বয়স দেড়শ’ বছর। বয়সের ভারে পাতাগুলোতেও তেমন সতেজতা নেই। তাই তেজও অনেক কমে গেছে। লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কের অন্যতম আকর্ষণ ক্লোরোফর্ম এই বৃক্ষটি।

মূলত যদিও তার তেজষক্ষমতা কমে আসছে; কিন্তু এখনও এই বৃক্ষটির নিচে দাঁড়ালে গরমের সময় অনেক ঠাণ্ডা অনুভব করা যায়। লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে নিসর্গ নামের একটি প্রকল্প আছে। তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ গাইড রয়েছে। এই প্রকল্পে একটি তথ্যকেন্দ্রও রয়েছে। এখানে লাউয়াছড়া বনের সব তথ্য পাওয়া যায়।

তাছাড়া উপহারসামগ্রী স্যুভেনির ইত্যাদি পাওয়া যায়। ‘ইকো রেস্তোরাঁ’ আছে। ইচ্ছে করলে রেস্তোরাঁয় খাবারও খাওয়া যাবে। একসময় শীত মৌসুমে পর্যটকদের আসা-যাওয়া থাকত সিলেটে বেশি। বর্তমানে বছরের সবসময়ই দেশি- বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে।

বিশেষ করে চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। এসব ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের আগমন ঘটে শ্রীমঙ্গলের পাখি ও মত্স্য অভয়ারণ্য বাইবকা বিল, রেইন ফরেস্ট, লাউয়াছড়া ছাড়াও দিগন্তরেখা বিস্তৃত চা বাগানের অপূর্ব সৌন্দর্য পর্যটকদের অসম্ভব কাছে টানে। তবে পাশাপাশি দেখতে পারবেন ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা সীতেজ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানা। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। রমেশ বাবুর জাদুকরী ৭ কালারের চা।

নীলকণ্ঠ কেবিনের ৭ রংয়ের চা আপনাকে তৃপ্তি দেবে। লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষ ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড। বিশ্বের ৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে যে বিরল প্রজাতির উল্লুক রয়েছে তার দেখাও পাওয়া যায় এই বনে। ২৪৬ প্রজাতির বাহারি রং-বেরংয়ের পাখি। ৪ জাতের উভচর প্রাণী।

৬ প্রজাতির সরীসৃপ। ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ ১৭ প্রজাতির কীটপতঙ্গ রয়েছে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে। ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে এ উদ্যান রয়েছে জীববৈচিত্র্য। তবে উল্লুক, চশমাবানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী এসব হলো বনের আকর্ষণীয় প্রাণী। লাউয়াছড়া বনে হেঁটে হেঁটে আপনি ও আপনার প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

বিশাল এই বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর বিভিন্ন ব্যবস্থাও রয়েছে। আধঘণ্টা এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার তিনটি ওয়াকিং ট্রেইল। এছাড়াও রয়েছে হাতির পিঠে চড়ে সবুজ বনাঞ্চল ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা। তাছাড়াও সুসজ্জিত বেশকিছু ‘ইকো রিকশা’ রয়েছে। তবে এগুলোয় চড়লে অবশ্যই টাকা দিতে হয়।

আরও কয়েক কিলোমিটার দূরে গেলে দেখা যায়, চা বাগানের ভেতরে বিশাল একটি লেক। লেকটির নাম মাধবপুর লেক। মাধবপুর লেকের সন্নিকটে উপজাতীয় কালচার একাডেমি রয়েছে। বিভিন্ন উপজাতীয় সম্প্র্রদায়ের আচার-অনুষ্ঠান আর সাংস্কৃতিক জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কমলগঞ্জ উপজাতীয় সাংস্কৃতিক একাডেমির চার দেয়াল। এখানকার উপজাতীয় সম্প্রদায়কে নিয়ে তাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সময় কাটান এবং সুখ আহরণ করতে পারবেন আপন মনে।

সবুজ প্রকৃতি আর পাহাড়ের মাঝে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা রেলপথও আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। প্রকৃতির লীলায়িত নন্দন কানন, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বর্ণময়, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং তাদের সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যমণ্ডিত সংস্কৃতি নিয়ে গঠিত শ্রীমঙ্গল। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে দূরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে পাহাড়ের ওপরে উঠতে হবে আপনাকে। ‘যতদূর চোখ যায় ওই দূর নীলিমায় চোখ দুটি ভরে যায় সবুজের বন্যায়’। শিল্পীর গাওয়া এ গানের বাস্তবতা খুঁজে পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে।

যাতায়াত : লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে যেতে হলে শ্রীমঙ্গল শহরে প্রথম যেতে হবে। শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের পাশেই পড়বে পার্কটি। ঢাকা থেকে ট্রেন বা সড়কপথে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ভাড়া পড়বে ২০০-২৫০ টাকা। শ্রীমঙ্গল শহরে ভালো হোটেল রয়েছে।

থাকা-খাওয়াসহ সবকিছু সহজলভ্য। শ্রীমঙ্গলের অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.