বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এই দিন ঠিক করে দেয়।
শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন হৃষিকেশ সাহা। আর ইউসুফের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়,ইউসুফের অপরাধ ও রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় নিলে জামিন দেওয়া যায় না।
আগামী ৬ জুন অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আসামি পক্ষকে সাক্ষীর তালিকা জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারক।
সোমবার জামিন আবেদনের শুনানিতে ইউসুফের আইনজীবীরা বলেছিলেন, একেএম ইউসুফের বয়স ৮৭ বছর। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। শারীরিক অবস্থার কারণে তাকে জামিন দেয়া উচিৎ।
আবেদনে অভিযোগ করা হয়, গ্রেপ্তারের লিখিত আদেশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর আগেই বেআইনিভাবে ইউসুফকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে, তাও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জানানো হয়নি।
অন্যদিকে প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা এর বিরোধিতা করে বলেন, ১৯৭১ সালে একেএম ইউসুফ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা ছিলেন এবং তিনি রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। এখনো তিনি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের একজন।
“শারীরিকভাবে অসুস্থতার কথা বললেও তিনি এখনো রাজনীতিতে সক্রিয় এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির পদে রয়েছেন। তাই শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তার জামিন মঞ্জুর করা উচিৎ হবে না। ”
রোববার প্রসিকিউশনের অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউসুফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সদস্যরা।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৫টি অভিযোগে গত ২২ এপ্রিল ইউসুফের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। এসব অভিযোগের মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা এ কে এম ইউসুফ প্রায় ৭০০ জনকে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ৩০০ বাড়ি ও ৪০০ দোকান লুটের পর অগ্নিসংযোগ এবং ২০০ হিন্দুকে ধর্মান্তর করার অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশে পাকিস্তানিদের গঠিত কথিত মালেক সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ইউসুফ এক সময় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমানে দলের নায়েবে আমির তিনি।
একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হত্যা-লুণ্ঠনে সহায়তা দেয়ার জন্য গঠিত সশস্ত্র বাহিনীর ‘রাজাকার’ নামটি তিনিই চালু করেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান।
সেই সময় কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নির্দেশে এ কে এম ইউসুফ নিজে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমে বৃহত্তর খুলনা জেলায় (খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট) শান্তি কমিটি গঠন করেন। পরে মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জামায়াত ও মুসলিম লীগের সদস্যরাসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করেন তিনি।
বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯৬ জনকে নিয়ে তিনি খুলনার আনসার ও ভিডিপি ক্যাম্পে সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। ওই অঞ্চলের শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতৃত্ব দেন।
জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের নেতা, বৃহত্তর খুলনার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও মন্ত্রী হিসেবে ইউসুফ পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউসুফ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, পরামর্শ ও প্ররোচনায় খুলনার বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ সংঘটিত হয় বলে তদন্ত কর্মকতারা জানিয়েছেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আইনটি বাতিল হলে পরে তিনি মুক্তি পেয়ে যান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।