ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের একটি আবেদনের শুনানি করে ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মুজিবুর রহমান মিয়া ও শাহীনুর ইসলাম রোববার এই এদশ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশে পাকিস্তানিদের গঠন করা কথিত মালেক সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ইউসুফ এক সময় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বও পালন করেছেন।
তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
তিনি হৃদরোগ ও বার্ধ্যক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন বলে তার আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক আবদুল মজিদ ভূঁইয়া জানান, ‘হার্ট অ্যাটাকের’ পর ইউসুফকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
ইউসুফের মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
এই আবেদনের ওপর শুনানি করেন গাজী এইচ এম তামিম।
প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর হায়দার আলী।
শুনানিতে তামিম আদালতকে বলেন, “যেহেতু এটা ন্যাচারাল ডেথ, সেহেতু ময়নাতদন্ত ছাড়া তার মরদেহ গ্রহণ করতে পরিবারের আপত্তি নেই। ”
শুনানি শেষে বিচারক আদেশে বলেন, একেএম ইউসুফ গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষের হেফাজতে ছিলেন। কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় কী কারণে তার মৃত্যু হলো তা ট্রাইব্যুনালেরও জানা প্রয়োজন। ”
কারাবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সারার পর পরিবারের কাছে ইউসুফের লাশ হস্তান্তরের আদেশ দিয়ে এই নির্দেশনা অবিলম্বে কারা কর্তৃপক্ষকে পৌঁছে দিতে বলেন বিচারক।
আদালতের এই নির্দেশে বিকাল পৌনে ৫টায় ইউসুফের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তার নাতি একে এম তাহসিন জানান।
উপ কারা মহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতের আদেশ অনুযায়ীই সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। ”
ইউসুফের মৃত্যুর পর তার জামাতা আব্দুল ওহাব হাসপাতালে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন হাসপাতালে তার শ্বশুর যথাযথ চিকিৎসা পাননি।
অবশ্য এ অভিযোগ নাকচ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক আবদুল মজিদ ভূঁইয়া বলেন, “একজন হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে হাসপাতালে আনার পর যা যা করা দরকার তার সবকিছুই করা হয়েছিল। ”
একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ১৩টি অভিযোগে গত বছর ১ অগাস্ট এ কে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
এ মামলার কার্যক্রম ইতোমধ্যে অনেকটা এগিয়েছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন রেখেছিলেন বিচারক।
গতবছর ১২ মে প্রসিকিউশনের অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউসুফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই তাকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হত্যা-লুণ্ঠনে সহায়তা দেয়ার জন্য গঠিত সশস্ত্র বাহিনীর ‘রাজাকার’ নামটি ইউসুফই চালু করেন এবং খুলনা অঞ্চলের শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতৃত্ব দেন।
ইউসুফের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউসুফের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, পরামর্শ ও প্ররোচনায় একাত্তরে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ সংঘটিত হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আইনটি বাতিল হলে তিনি ছাড়া পান।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।