আর ভাল দাম না পাওয়ায় অন্য ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন পাটচাষীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মনিটরিং উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেন, এবার দেশে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে সাত লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে, যা লক্ষমাত্রার তুলনায় বিশ হাজার হেক্টর কম।
এই লক্ষমাত্রা অর্জিত না হলেও এবার ফলন ভাল হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “ফলনের কারণে গত বছরের তুলনায় মোট উৎপাদন বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। ”
লক্ষমাত্রা নির্ধারণের সময় সাত লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর জমি থেকে সাড়ে ৭৭ লাখ বেল পাট পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
গত অর্থবছর ছয় লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে ৭৬ দশমিক ১১ লাখ বেল (পাঁচ মণে এক বেল) পাট উৎপাদন হয়েছিল, যা ২০১১-১২ অর্থ বছরের তুলনায় কম।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৬০ লাখ হেক্টর জমিতে ৮০ দশমিক ৩ লাখ বেল এবং ৭ দশমিক ৮০ লাখ হেক্টরে ৮৩ দশমিক ৯৫ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাট বাজরজাতকরণ বিষয়ক উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বাজারে দেশি পটের দাম ৯ শ’ থেকে ১২ শ’ টাকা এবং তোষা পাটের দাম ১২ শ’ থেকে ১৫ শ’ টাকা। গত বছর এই সময়ে দাম আরো বেশি ছিল।
রাজশাহীর বাঘা এলাকার কৃষক মহব্বত আলী বিডিনিউজ টোয়ন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এক বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৭ মণ পাট হয়, খরচ হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।
“আর আমরা বিক্রি করতেছি ৯ থেকে ১১ শ’ টাকা মণ দরে। লাভ একেবারেই থাকে না। ”
আর লাভ না হওয়ার পাটের আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন এই কৃষক।
মহব্বতের মতো অনেকেই যে পাটচাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন, তা স্পষ্ট হলো রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শফিকুর রহমানের কথায়।
“ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকরা বিকল্প ফসল আবাদে ঝুঁকছেন।
পাট চাষের লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পেছনে এটাও একটা বড় কারণ। ”
রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে এবার এক লাখ ২২ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ৩৮৯ হেক্টর জমিতে।
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের পাট গবেষণায় কয়েকটি বড় সাফল্য আসায় এবং সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ভবিষ্যতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করেছেন পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কামাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, “সরকার পণ্য প্যাকেজিং আইন পাশ করেছে। এ আইন চালু হলে বাধ্যতামূলকভাবে পণ্য বাজারজাতকরণে পাটের ব্যবহার বাড়বে।
”
ওই আইন যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে প্রতিবছর ১৫ লাখ বেল অতিরিক্ত পাট ব্যবহৃত হবে বলে জানান তিনি।
“পাটের সুদিন ফিরে আসবে শিগগিরই। কৃষকও ন্যায্যমূল্য পাবেন । ”
গত ১৮ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি পাটের জিনবিন্যাস উন্মোচনের খবর জানান।
বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ও তার সহকর্মীরা সম্প্রতি এই সাফল্য পান।
এর আগে তারাই প্রথমবারের মতো তোষা পাটের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করে বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।
এছাড়া ম্যাক্রোফমিনা ফাসিওলিনা নামের এক ধরনের ছত্রাকের জিনবিন্যাসও তারা জানতে পেরেছেন, যে ছত্রাকের কারণে পাটের কাণ্ড পচা রোগ হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পটের জিনবিন্যাস জানার ফলে এখন অধিক উৎপাদনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।