Let the wind blow out the candles
define:blog
হঠাৎ খেয়াল হল ট্যিপিকাল ডায়েরি টাইপ ব্লগ কখনো লেখা হয়নাই আমার দিনলিপি যে চমকে ঠাসা মুখরোচক কিছু হবে সেটাও না, বলার মত ঘটনা কখনো কখনো হয় তবে সেটা হয়তো আমড়া কাঠের ঢেকিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কে কি বলে বসে সেটা ভেবেই কখনো দিনলিপি লেখা হয়নাই। আজকের দিনটা একটু ঘোরাঘোরির ওপরে গেল তাই ভাবলাম লিখে বসি কিছু একটা....
পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ভার্সিটি বন্ধ, তাই ঘরে বন্দী জীবনযাপন কিছুদিন ধরে, ভার্সিটির হলে গিয়ে একটু আধটু আতলামির অপচেষ্টা করার যে শেষ ভরসাটুকুও শেষ করে দিয়েছে আম্মুর দুশ্চিন্তা, অবস্থা এমন যে ভার্সিটিই সবচেয়ে অনিরাপদ এলাকা বলা যায়! রাতে হলে থাকা তাই নিষিদ্ধ একরকম। বন্ধুবান্ধবদের অনেকেই বাড়ি চলে গেছে, হলও ফাকা, আড্ডা বা তাস পিটানোর ব্যবস্থা পুরা বন। বাসায় বসে বসে আলসেমি এমনভাবে পেয়ে বসেছে যে এখন বের হলেও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। রাস্তায় জ্যামের কথা মনে কইরা মেজাজ খারাপ হয় আরো।
চুল দাড়ি অবাধ স্বাধীনতায় নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে, আগে শীত থাকায় চুলের যন্ত্রণা সহ্য করা যেত কিন্তু গরমে এখন কান দিয়ে ধোয়া বাইর হবার জোগাড়।
আজকে তিনটার দিকে বহুদিন পর শেইভ টেইভ কইরা চীন-মৈত্রীর সফ্ট এক্সপোতে (সফ্টওয়ার মেলা) হাজির হলাম, আশা করছিলাম আর যাই হোক মডেল কন্যাদের উপস্থিতিতে ভালো টাইমপাস হবে, মেলায় গিয়া চিক্কুর দিয়া কানতে ইচ্ছা হইলো। পুরা মেলা মরুভূমি! সব মেলাতেই মডেলদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হবার উপক্রম হয়, এবার ব্যতিক্রম দেইখা অবাক হলাম। মেলায় যাবার দুমিনিটের মাথায় সাথের দোস্তগুলা হাউকাউ শুরু করলো এই বোরিং মেলায় আর এক মিনিটও না। তাদের কোনমতে বাইরে ধোয়া টানতে পাঠায়ে আমি আর সাথের আরেকটা টেকি-আতেল বড়ভাইএর স্টলের সামনে ঘোরাঘোরি করতে লাগলাম, আর কোন অযুহাতে পালানোর ব্যবস্থা হবে সেটা ভাবছিলাম।
এর মাঝেই সাড়ে সর্বনাশ, ভার্সিটি থেকে সেমিনারের জন্য হেড সহ স্যার ম্যাডামরা মেলায় এসেছেন, সাথে বড় ভাই আপুরাও আসছে আর আমরা এইদিকে কিছুই জানি না! মুক্ত বয়ান আর "উদ্ভ্রান্ত পথিক" ভাই এর কাছে তাদের "বুফে"র খবর শুনে মন মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল। এখন স্যারদের সামনে পড়লে আর উপায় নাই, পরীক্ষার সময় মেলায় কি করি এই কৈফিয়ত দেবার চেয়ে কেটে পড়া উত্তম।
বইমেলায় যাওয়া হয়নাই, বন্দুদের নিয়া বইমেলায় গেলাম "বৈদ্যুতিক অটোরিক্সায়" চড়ে...... অনেকেই মনে হয় দেখছেন এই আজব যান, রিক্সায় একটা মটর লাগায়া নিলে যেরকম হবে সেরকম আরকি....। চড়তে খারাপ না, রিক্সার মতই বাতাস টাতাস পাওয়া যায়, তবে সমস্যা হইলো চড়লে নিজেরে মফিজ মফিজ লাগে। শাহবাগের সিগন্যালে গাড়ির ভেতরের মেয়েগুলা যখন আমাদের নিয়া হাসাহাসি শুরু করলো তখন মনে হচ্ছিল সিএনজি নিয়ে আসলেই ভালো করতাম।
বইমেলায় গিয়া চক্ষু চড়কগাছ, মেলায় ঢুকার লাইন টিএসসির সামনে আইসা পড়ছে। ঢোকার যা ইচ্ছা ছিল সব পানি হয়ে গেল কিন্তু সমস্যা হোল সাথে আসা দোস্তের, যে গার্লফ্রেন্ডরে বই গিফ্ট করবে। মেলায় ঢুকে পড়লাম। যে দোস্তের কথা বলতেছি সে আমার "জিগরি" দোস্ত। আমরা সবসময়ই পাগলামী করি কিন্তু দোস্ত যখন গার্লফ্রেন্ডের জন্য উন্মাদের স্টল থেকে দুইটা পোস্টার কিনল তখন আমি প্রশ্ন না কইরা পারলাম না তাদের ব্রেকাপ আসন্ন কিনা।
অবশ্য দোস্তের মুখে যখন শুনলাম তার বান্ধবীই ঐ পোস্টার কিনতে কইছে, তখন অবশ্য আর কিছু বলার নাই।
তথ্যকেন্দ্র থেকে জাগৃতি প্রকাশনীর খবর নিয়ে হাজির হলাম, সামনে মোটামোটি ভিড় কিন্তু "অফলাইন" এর কোন কপি দেখতে পারলাম না। ভয়ে ভয়ে সামনের একজন রে জিজ্ঞাস করলাম ব্লগারদের গল্প সংকলন অফলাইন আছে কিনা, সে সোজা সাপ্টা জানায়া দিলো নাই। এখন তো ফ্রেন্ডদের সামনে পুরা ইজ্জতের ফালুদা, কি করবো ভাবতেছিলাম, পাশের আপুরে জিগাইলাম অফলাইন আছে নাকি। সে আছে বলাতে জান ফিরা পাইলাম মনে হোল, একটা কপি নিয়া নিজের নাম খুজা শুরু করলাম, দেখলাম আছে।
দাম জিগাইতে আপু কইলো একশো বিশ টাকা। নিজের বই নিজেই টাকা দিয়া কিনুম নাকি ভাবতেছিলাম মনে পড়লো পকেটে পঞ্চাশ টাকা আছে। ভাবলাম বইতে আমার একটা গল্প আছে বললে খাতির টাতির করতে পারে, লজ্জ্বার মাথা খেয়ে বলেই ফেললাম ইয়ে আমার একটা গল্প আছে, এইটা। স্টলের আপুর মুখে হাসি দেখা গেল।
আপু হাসিমুখে বললো, এবারই বইটা বের হয়েছে, নতুন বই, যারা ব্লগ লেখেন তাদের গল্প নিয়ে।
ইয়ে, নিজেকে একটা গল্পের "লেখক" পরিচয় দেবার পর উনার এইকথার মানে অবশ্য বের করতে পারলাম না, এরমাঝেই আপু বই এগিয়ে বলছেন নেবেন? অসহায় হয়ে আরেক ফ্রেন্ডের দিকে তাকালাম, ব্যাটা বুঝল আমার পকেট খালি। একশো টাকার নোট একটা দিল, আমি দিলাম বিশ টাকা। নিজের লেখা বই ফ্রেন্ডের কাছ থেকে গিফ্ট পাবার অভিজ্ঞতাই বা আপনাদের কয়জনের হইছে?
স্টলের সামনে দাড়ায়ে বন্ধুদের পচানি খাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এর মাঝে আরেক দোস্ত মিলু (এই ব্যাটাও ব্লগ লেখে) আসলো, আমার হাতে বই দেখতে চাইলো। আর যেই ফ্রেন্ড আমারে আমার বই-ই গিফ্ট করলো, সেও চান্স পাইয়া বললো শান্ত বই লিখছে, তুই কিনবি না? বেচারার একশো টাকা গচ্চা গেছে দেইখা সে অন্যদেরও পকেট থেকে পয়সা বাইর কইরা ছাড়বে। মিলু বেচারা ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে বই একটা কিনে ফেললো, আর আমি ভাবতেছিলাম ফ্রেন্ডরাই জীবনের সবচেয়ে নির্মম বাশ গুলা হাসতে হাসতে দেয়।
দিনলিপি এখানেই শেষ। বই এর বিজ্ঞাপনও হয়ে গেল, এইটা নিয়া অবশ্য চিন্তিত। আজ সকালেই ফিউশন ফাইভ "বইমেলায় বই বাণিজ্য : বড়ো-মাঝারি-ছোট লেখকদের হাস্যকর কাণ্ডকারখানা" পোস্ট দিছেন, সেটা যে মারাত্মক সত্য সেটা এখন বুঝতেছি। ফিউশন ফাইভ তার পোস্টে "কনুই দিয়ে" সায়েন্স ফিকশন পয়দা করা রাইটারদের পুরা ব্রাশ ফায়ার কইরা ছাড়ছেন, আর দু:খজনক ব্যাপার হল পুরা গল্প সংকলনে একমাত্র সাই ফাই টা আমারই।
পুনশ্চ: শেষ পোস্ট ছিল ১২ই জানুয়ারী, আজ একমাস হল।
অস্তিত্বের জানান দিতে এই আবজাব দিনলিপি!
ছবিসূত্র: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।