আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাদামাটা দিনলিপি

বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না...

সারাটা সপ্তাহ ধরে অপেক্ষায় থাকি, ছুটির দুটো দিনের...মনে মনে কত কিছু ভেবে রাখি এটা করবো, সেটা করবো...এইখানে যাবো সেইখানে যাবো...কিন্তু সেই সব আশায় গুড়েবালি দিয়ে বেশিরভাগ উইকেন্ডেই থাকবে বৃষ্টি...আমি হিসেব করে দেখেছি, এই সূর্যোদয়ের দেশে আসার পর থেকে ছুটিগুলো রোদের চেয়ে বৃষ্টির দিনেই বেশি পূর্ন থাকে... তারই ধারাবাহিকতায় আজও সকাল থেকে আকাশের মন ভালো নেই...যেকোন সময় ঝুপঝুপ করে কান্না শুরু হবে...চারিদিকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন... প্রকৃতির এই বিষন্নতা আমাকেও ক্রমে গ্রাস করার মতলব আটছে....শীতও প্রায় চলে এলো জেঁকে বসার জন্য... খড়িরচুলার পাশে বসে মায়ের হাতে ভাপা পিঠা খেতে মন চইছে...চাইলেই কি আর সব পাওয়া যায়!! প্রতিদিন ব্রেড খেতে খেতে এত বিরক্ত, খাওয়াতো দূরে থাক দেখলেই গায়ে জ্বর আসে...আজকে সিদ্ধআটার হাতে রুটি বানালাম সাথে ডিমভাজা...মাঝে মাঝে আলুভাজিও করা হয়...আমার খুব পছন্দের নাস্তা, রুটি আর আলুভাজি..তারপর কিছুক্ষন ব্লগের জানালায় এর বাড়ী, ওর বাড়ী উঁকি দিয়ে কাটলো কিছুটা সময়...কিন্তু ফড়িংটা কিছুতেই বাসায় থাকতে চাচ্ছে না, বাইরে যাবে...বেশিরভাগ সময় ওর বাবার সাথেই যায়, সেই সময়টা আমি নিজের মত করে অবসর কাটাই...গান শুনি, সাথে পুরো সপ্তাহে জঙ্গল হয়ে উঠা ঘরগুলোকে বাসযোগ্য করার প্রচষ্টাও চলে...এই সপ্তাহটা সিম্পোজিয়ামে তার বাবা অন্যদেশে যাওয়াতে আমাকেই যেতে হলো ওকে নিয়ে..বাসার একেবারে কাছেই একটা পার্ক আছে, সেখানেই গেলাম...কিছুক্ষন স্লাইডিং, দোলনা খেলে বালুর পুকুরে নামলো...অন্য বাচ্চারা খেলে বানিয়ে রেখে গেছে, বালুর পাহাড় পাশে নদী সেখানে পানিও ঢালা হয়েছে...কিন্তু বালুর জন্য শুকিয়ে গেছে...সে সেই শুকনা নদীতে পানি দিয়ে তাকে জীবিত করার প্রচেস্টা চালালো...পানি আনতে আনতেই আবার শুকিয়ে যায়..খানিক পরে বিরক্ত হয়ে বাদ দিলো...নতুন শিখেছে ট্রেইজর খেলা, একটা পাতা নিয়ে এসে বালিতে লুকিয়ে রেখে আমাকে বললো গুপ্তধন খুঁজে বের করতে...ইচ্ছে করেই পারলাম না বের করতে...সে মহাখুশি হয়ে বের করে দেখালো... ঝুল খেলার জন্য কিছু জিগজাগ রড আছে, বিভিন্ন উচ্চতায়...সেইখানে একরড থেকে আরেক রডে ঝুলে ঝুলে যাচ্ছে আর আমাকে বলছে, আ মান্কি-আ মান্কি বললাম থাক আর বানর ঝুলতে হবে না, চল ফিরে যাই...দুইজন পাল্লা দিয়ে দৌড় লাগালাম...আমাকে সবসময়ই লাড্ডুগুড্ডু হতে হবে...কিছুতেই প্রথম হওয়া যাবে না!!!! বাসায় ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে বসলাম একটু টিভি দেখতে...ডিসের লাইন নেই, এমনিতেই যে'কটা চ্যানেল আসে সেটাই দেখি...এদের বেশিরভাগ অনুষ্ঠানই কি রান্না আর খাবার খাওয়া নিয়ে নাকি!!!!!!! আমি যখনই টিভি ছাড়ি, কোন একটা না একটা চ্যানেলে রান্না করে দেখাচ্ছে নয়তো কোনো রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ কেমন সেটা খেয়ে বোঝাচ্ছে...খাবারেরও যে আইটেম আছে, শ'খানেকতো হবেই.. শুক্রবার আর রবিবার রাতে একটা চ্যানেলে হলিউডের সিনেমা দেখায়...বেশিরভাগ সময়ই জেমসবন্ড নয়তো জ্যাকি চানের...কখনো দেখা হয়, কখনো দেখা হয় না...গতকাল রাতে চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে হঠাৎ দেখি একটা ছবি শুরু হয়েছে...নাম দেখিনি, কিছুটা দেখে মনে হলো হরর হতে পারে অথবা সাইকো মুভিও হতে পারে...এটাইপের ছবি দেখতে পারি না, খারাপ লাগে..কিছুটা ভয়ও লাগে...ভাবলাম থাক দেখবো না, আবার দেখতেও ইচ্ছে করছে...দেখলাম কিছুক্ষন, কাহিনীটা এমন...একটা জাহাজের সব মানুষ মারা গেছে, জাহাজটা সমুদ্রে আটকা পরে আছে..সেটা উদ্ধার করতে যায় কয়েকজন মিলে...সেই জাহাজের ভিতরেই সব ভৌতিক ঘটনা ঘটতে থাকে...একটা গ্রুপ আছে যাদের সবার হাতের তালুতে সাপের উল্কির ছাপ থাকে...অশুভ আত্মা একজনকে মেরে আরেকজনের ভিতরে পুনর্জন্ম লাভ করে... কাজটা জাহাজকেন্দ্রিক...মেরে ফেলা আর রক্ত...শেষ পর্যন্ত দেখতে পারিনি... বিকেল চারটার দিকেই আকাশ অন্ধকার করে মেঘ জমেছে...বৃস্টিও শুরু হয়ে গেল, তবে ঝুম বৃস্টি না...টিপটিপ করে। দরজা খুলে বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে না, প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাসে জমে যাবার মতো অবস্থা...বাসার ছাদটা টালির, বৃষ্টির শব্দ বেশ টুংটাং করে শোনা যাচ্ছে...চা খেতে খেতে বই পড়তে ইচ্ছে করছে...দেশে থাকতে হাতের কাছে কত বই ছিলো, ইচ্ছে হলেই যেটা খুশি পড়া যেতো...কিন্তু এই ভিনদেশে প্রিয় বই গুলোকে ফেলে যাবার কষ্টে, বেশি নিয়ে আসা হয়নি...জাফর ইকবালের বৃষ্টির ঠিকানা নিয়ে এসেছি...পৃস্ঠা সংখ্যা বেশি না, একবসাতেই শেষ হয়ে যায়...ভালোই লেগেছে বইটা.. এর আগে কখনো দিনলিপি লেখা হয়নি, আজ ইচ্ছে হলো তাই সন্ধ্যায় বসে বসে লিখলাম আমার সাদামাটা দিনলিপি...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।