জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
কৈফিয়ত : এই কথামালা এক সাদামাটা গল্পকারের। নেশাতুর কথামালা। সুতরাং নেশার ঘোরে বলা কথার মতো এই কথামালাকে তুচ্ছ বলে অবহেলা করা যায়। একমাত্র আরেক নেশাতুরই এই সব ঘোরলাগা কথাকে গুরুত্ব দেবে।
কথা-সাহিত্যের দায়িত্ব :
বাংলাদেশের মানুষ সব কিছু থেকে কেবল শিক্ষা পেতে চায়।
সব কিছু থেকে শিক্ষা চায় বলেই হয়তো মূর্খ থেকে যায়। সাহিত্য থেকেও এই দেশের মানুষ শিক্ষা পেতে চায়। বিশেষত কথা-সাহিত্য থেকে শিক্ষা না পেলে অনেকের জুইত লাগে না। অথচ দিকপাল সাহিত্যিকরা নিজেরাই সার্টিফিকেটবিহীন। যারা নিজেরাই সার্টিফিকেটবিহীন তারা কিভাবে মানুষকে শিক্ষা দেবে ? এটাই তো সাহিত্যের যাদু।
শূন্য থেকে সৃষ্টি হয় অমর কাব্যখানি। সেই অমর কাব্যখানির দিকে বিপুল প্রত্যাশায় বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে পাঠক।
পৃথিবীতে শিক্ষার্থী হিসেবে থাকাটা খারাপ না। কিন্তু বাসর রাতে যৌন শিক্ষা বিষয়ক বই পড়াটা গুরুতর অপরাধ বটে। একটা সময়ে শিক্ষা জীবন সমাপ্তি টেনে কর্মজীবনে প্রবেশ করতেই হয়।
নইলে সারা জীবন বেকার থাকাটা কপালের লিখন হয়ে যেতে পারে। বোঝাই যাচ্ছে, সারা জীবন শিক্ষার্থী থাকাটা যতটা তাত্ত্বিক, ততটা ব্যবহারিক নয়।
চাকুরির বাজারে অভিজ্ঞতার মূল্য শিক্ষার চেয়ে বেশি - এটা যে কোন অভিজ্ঞ চাকুরিজীবি স্বীকার করবেন। কেবল ব্যবসা করতে কোন অভিজ্ঞতা লাগে না বলে ব্যবসায় ক্ষতি বলে একটা বিশেষ উপাদেয় বস্তু আছে। এবং একবার ক্ষতির সম্মুখীন হলে যেই অভিজ্ঞতা হয়, সেটা সারা জীবনের শিক্ষার চেয়ে মূল্যবান।
এই জন্যই পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত শেখার সবচেয়ে ভালো এবং নিশ্চিত পদ্ধতি হচ্ছে - ট্রায়াল এন্ড এরর। চেষ্টা কর, ভুল কর এবং শেখ। কেবল মনে রেখ প্রথমবার যেই ভুলটি করেছিলে, সেটা দ্বিতীয়বার করো না। যদি একই ভুল বার বার করো, তবে আদুভাই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অন্য দিকে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেই কিছু সাহিত্য পড়ানো হয়।
সেখানে সাহিত্যের যেই শিক্ষামূলক রচনা শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত করা হয়, সেগুলোর অনেকগুলোই ততটা সুখ্যাত নয় কিংবা জনপ্রিয়ও নয়। উপাদেয় তো নয়ই। অনেকটা প্রয়োজনীয় ঔষধের মতো অনিচ্ছা নিয়েও অনেক শিক্ষার্থীকে সেগুলো গিলতে হয়। সেই গেলানো বস্তুগুলো কোনভাবে পরীক্ষার খাতায় উগলে দিতে পারলেই পরম শিক্ষা প্রাপ্তি।
আমাদের মহল্লার স্কুলে এক বোকা শিক্ষক ছিলেন।
তিনি ছাত্রদের বই দেখে পরীক্ষার খাতায় লিখতে দিতেন । নিঃসন্দেহে শিক্ষক হিসেবে তিনি গুরুতর অপরাধী। কিন্তু তার আহবানটা শুনলে তাকে আর অপরাধী মনে হয় না। তিনি পরীক্ষার্থীকে বলতেন, এখন দেখে দেখে পাস করে ফেল। পরে পড়ে নিস।
জ্ঞান অর্জন করাই আসল কথা- পরীক্ষা পাসটা বা ফেলটা নয়।
বলাবহুল্য, বোকা শিক্ষকের এই আহবানে কোন কাজ হয় নি। কারণ পরীক্ষা পাস করার পর পাঠ্য বই নিয়ে জ্ঞান চর্চা আর রোগ সেরে যাওয়ার পর ঔষধ খাওযটা সমার্থক । দুটোর একটিও বাস্তবে ঘটে না। বাস্তবে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পাঠ্যবই সের দরে বিক্রি করা হয়।
আর পাঠ্য বিষয়বস্তু ভুলে যাওয়াটাই রীতি।
তাহলে কেন মানুষ কথা-সাহিত্য থেকে শিক্ষা পেতে চায় ? এই সাদামাটা গল্পকারের মত হল, পাঠ্যবই পড়তে গিয়ে যেই ফাঁকিবাজিটা হয়েছে সেটার জন্য ভেতরে ভেতরে একটা অনুশোচনাবোধ রয়ে গেছে। সেই অনুশোচনাবোধ থেকে কথা-সাহিত্য থেকে শিক্ষা পাওয়ার অদম্য ইচ্ছা তৈরি হয়। শিক্ষা না-পেলে সেই পুরোনো অনুশোচনাবোধটা ভেতরে খচখচ করতে থাকে।
তাহলে কি কথা-সাহিত্য শিক্ষা দিতে পারে না ? পারে, কখনও কখনও দেয়ও।
কিন্তু শিক্ষা দিতেই হবে - এমন কঠিন আইন করে দিলে কথা-সাহিত্যও পাঠ্যবই হয়ে যাবে। আর কে না জানে পাঠ্যবইয়ের চেয়ে নিরস বই পৃথিবীতে বিরল।
কথা-সাহিত্য কি পাঠ্যবইয়ের মতো বেত মেরে পড়ানোর বিষয় ? পড়ানোর পর কঠিন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ার বিষয় ? মোটেও তা নয়। কথা-সাহিত্য হচ্ছে স্বাধীনভাবে পড়ার বিষয়। কোন বাধ্যবাধকতা ছাড়া আনন্দের জন্য পড়ার বিষয়।
আসলে কথা-সাহিত্য বিনোদন মাধ্যম, শিক্ষার মাধ্যম নয়। যদি বিনোদনের মধ্য দিয়ে শিক্ষা কিছু পাওয়া যায়, সেটা বাড়তি পাওনা, কিন্তু পাঠককে শিক্ষা দিতে গিয়ে বিনোদন হারিয়ে গেলে পাঠক সেটা থেকে মজা পাবে না। আর মজা বা বিনোদন না পেলে কথা-সাহিত্যের ভুবনে কেন পাঠক ডুব দেবে ?
চলবে ........
পরের পর্ব : সাহিত্যে বাস্তবতা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।