আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইরাকী বন্দীর আত্মকথা (৫ম পর্ব )

Right is right, even if everyone is against it; and wrong is wrong, even if everyone is for it

সুপ্রিয় পাঠক, মার্কিন সেনা ও তাদের ইসরাইলি সহযোগীরা কীভাবে ইরাকী বন্দীর ওপর নৃশংসভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ফলে কিভাবে তারা অপদস্ত এবং অসহায় হয়ে পড়ে তা আপনারা নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন ৷ এভাবে শেষ পর্যন্ত একদিকে নরকতুল্য কারগার থেকে মুক্তি পাওয়া ও অন্যদিকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবার আশায় তারা কিভাবে মার্কিন সেনাদের নির্দেশে সন্ত্রাসী অভিযানের সহযোগী হতেও আগ্রহ প্রকাশে বাধ্য হয়েছে, তারও বিবরণ হয়তো পড়েছেন ৷ ইরাকী বন্দীদের এ সিদ্ধান্তের আরেকটি কারণ ছিল, স্ত্রী ও সন্তানদেরকে মার্কিনীদের নরকতুল্য কারাগার থেকে উদ্বার করা৷ আজকের পর্বে আমরা ইরাকের ঐসব হতভাগ্য বন্দী মার্কিনীদের চাপে পড়ে কিভাবে সন্ত্রাসী অভিযানে অংশ নেয় এবং মার্কিনীদের হাতে বন্দী ঐ ইরাকী ব্যবসায়ীসহ তার সহযোগী অন্যান্য বন্দীর ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কি ঘটেছিল তার মর্মস্পর্শী বিবরণ আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করবো ৷ ঐ ইরাকী বন্দী জানান, কারাগার থেকে নিজের এবং স্ত্রী ও সন্তানদের মুক্তির ব্যাপারে চরম হতাশ অবস্থায় তিনি এবং সাঈদ নামের অন্য এক ইরাকী বন্দী মার্কিন সেনা আর তাদের সহযোগী ইসরাইলি গুপ্তচরদের প্রস্তাবিত সন্ত্রাসী তত্পররতায় অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন৷ কিন্তু তখনও ,ঐ বন্দী ইরাকী ব্যবসায়ী ভাবতে পারেননি যে, এ ইহজগতে স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে তার আর কখনও দেখা হবে না এবং একাকী ও নিঃসঙ্গ হয়ে তাকে শুধু প্রতিশোধের চিন্তায় মগ্ন হতে হবে ৷ ঐ ইরাকী বন্দী জানান, সাঈদ নামের ইরাকী বন্দী ততদিনে মার্কিন সেনাদের পরিচালিত বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী অভিযানে অংশ নিয়েছেন ৷ কিন্তু সাঈদ ঠিকই মার্কিন সেনা ও কারারক্ষীদের ঘৃণা করতেন ৷ মার্কিন ও ইসরাইলি সেনাদের আচরণ ও পিড়ন সাঈদকে মানসিকভাবে এতোটা বদলে দিয়েছিল যে সে সব মানুষকে ঘৃণা করতে থাকে এবং আত্মঘাতি হামলায় নিরাপরাধ মানুষের রক্ত ঝরানোর মতো নৃশংস কাজেও অংশ নিতে আগ্রহী হয়৷ এসব ব্যাপারে সে যেন মার্কিনীদের হাতের ভাবলেশহীন রোবট বা হুকুমের গোলামে পরিণত হয়৷ ঐ ইরাকী বন্দী বলছিলেন, মার্কিন কারাকর্তৃপক্ষ আমাদের দুজনকে বিশেষ সন্ত্রাসী কাজের জন্যে মনোনীত করে৷ মার্কিন সেনারা আমাদের দুজনকে একটি কক্ষে নিয়ে কাগজে লেখা একটি ঘোষণা পড়ে শোনাতে বলে যা ভিডিওতে রেকর্ড করা হয় ৷ ওদের কথামতো আমি ঘোষণা দিলাম যে আমরা ওমুক নামের একজন মার্কিন সার্জেন্টকে পনবন্দী করেছি এবং মার্কিন সেনারা যদি আমাদের কথিত কিছু সহযোগীকে মুক্তি না দেয় তাহলে এই মার্কিন সেনাকে হত্যা করা হবে ৷ ঘন্টাখানেক পর আমার মাথায় একটি মুখোশ পরানো হয় এবং আরো ৫ জন মুখোশধারী আমার সাথে একটি বড় কক্ষে প্রবেশ করে৷ এরপর সেখানে বাদামী চুলের এক আহত মার্কিন সেনাকে আনা হয়৷ মার্কিন সেনারাই তাদের এক সময়ের সহযোগী এই মার্কিন সেনাকে পাথরের আঘাতে আহত করে৷ এরপর ওরা আবার আমাকে আরেকটি ঘোষণা দিতে বলে ৷ এ ঘোষণায় আমি বলি যে আমাদের দাবী পূরণ হয়নি বলে আমরা এ মার্কিন সেনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷ নাটকের রিহার্সেলের মতো বার বার এ দৃশ্যে আমাদেরকে অভিনয় করতে হয়েছে যাতে মার্কিন ক্যামেরাম্যান আমাদের অভিনয়কে নিঁখুত ক'রে তা রেকর্ড করতে পারেন ৷ মুখোশধারীদের মধ্যে যে সাঈদও ছিল প্রথমে তা টের পাইনি ৷ হঠাত্‍ আমাদের মধ্য থেকে অন্য এক মুখোশধারী একটি ছুরি বের ক'রে ঐ হতভাগ্য মার্কিন সার্জেন্টের মাথা কেটে ফেলে ৷ সে বেচারা কোনো প্রতিরোধ করার, এমনকি কিছু বলারও চেষ্টা করেনি ৷ পরে সাঈদ আমাকে জানায় যে, হতভাগ্য এই মার্কিন সেনার অপরাধ হলো সে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল ৷ পালানোর সময় অন্য এক মার্কিন সেনা তাকে ধরে ফেলার চেষ্টা করলে এ মার্কিন সার্জেন্ট তাকে হত্যা করে ৷ কিন্তু অন্যান্য মার্কিন সেনারা তাকে গ্রেফতার করে এবং মার্কিন সেনা আদালত তাকে মৃত্যুদন্ড দেয় ৷ কিন্তু মার্কিনীরা একটি নাটক সাজিয়ে এভাবে তাকে হত্যা ক'রে একদিকে বিশ্ববাসীকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, মুসলমানরা বা আরবরা কতো বর্বর এবং একইসাথে বাস্তবে তারা একজন বিদ্রোহী মার্কিন সেনাকে হত্যা করলো! বন্দী ইরাকী ব্যবসায়ী বলছিলেন,সাঈদ আমাকে জানায় যে, যে লোকটি ঐ বিদ্রোহী মার্কিন সেনাকে হত্যা করেছে, সে একজন ইসরাইলি৷ কারণ, নিহত মার্কিন সেনাটির রক্ত যখন তার দস্তানায় স্পর্শ করে, তখন সে এমন একটি বিশেষ শব্দ উচ্চারণ করেছিল, যা বলা ইসরাইলিদের একটি স্বভাব৷ সাঈদ ছিল আল জারকাভির ভক্ত৷ এই আল জারকাভি কি একজন মুসলমান, না মুশরিক না নাস্তিক তা আমি বুঝতে পারছি না৷ এর কিছু দিন পর সাঈদ একটি আত্মঘাতি হামলা চালানোর সময় নিহত হয়৷ সাঈদ হয়তো জানতো যে সে শিগগিরই মারা যাবে, তাই সে আমাকে অনেক গোপন তথ্য জানিয়ে দেয়৷ সে জানিয়েছিল কিভাবে গাড়ী ও ভ্যান চুরি ক'রে সেগুলোর রং বদলে ফেলতো এবং সেসব গাড়ীতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখতো ও অন্যান্য ইরাকী কারাবন্দীদের সাথে আত্মঘাতি সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নিতো৷ সাঈদ আরো বলেছিল বাগদাদে জাতিসংঘের ভবনে বোমা হামলার সম্ভাব্য নায়ককে, সে চিনতো৷ ঐ লোকটা সেই আত্মঘাতি হামলায় নিহত হয়েছিল৷ সাঈদ বিশ্বাস করতো যে, বাগদাদে জাতিসংঘের ভবনে ধ্বংসাত্মক হামলার বিস্ফোরকগুলো আমেরিকানরাই যুগিয়ে দিয়েছিল৷ ইরাকী বন্দী সাঈদ মৃত্যুর আগে আরো জানায় যে, ইরাকে শিয়া মুসলমানদের ধর্মীয় শোক সমাবেশগুলোতে ভয়াবহ বোমা হামলাগুলো ঘটিয়েছিল আমাদেরই মতো কিছু ইরাকী বন্দী৷ এসব ইরাকী বন্দীর মগজ মার্কিন সেনাদের মাধ্যমে ধোলাই করা হয়েছিল৷ মুসলমানদের বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসব সন্ত্রাসী হামলার ঘটকদের নাম প্রচারের নীতি গ্রহণ করে৷ কারণ, শিয়া মুসলমানদের মাতম অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাবেশ, মার্কিন সেনাদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল এবং এ বিষয়টি মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যাপারে মার্কিন সেনাদেরকে হতাশ করবে বলে মার্কিনীরা শংকিত ছিল৷ সাঈদ মাঝে মধ্যে বলতো, ইরাকে যত বেশী সহিংসতা ও নৈরাজ্য থাকবে, ততই দখলদাররা লাভবান হবে৷ একবার সাঈদ তার মার্কিন গার্ডকে হত্যা করতে চেয়েছিল এবং নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে পতিত হয়ে সে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে৷ কিন্তু মার্কিনীরা চিকিত্সা র মাধ্যমে তাকে সারিয়ে তোলে এবং এরপর তার শরীরে এমন কিছু ইঞ্জেকশান প্রয়োগ করে যে এরপরই সাঈদের চরিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়৷ সাঈদ পাকিস্তানে সন্ত্রাসী অভিযান সংক্রান্ত কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিয়েছিল এবং এ জন্যে তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা ছিল না৷ সাঈদ এবং আমি শেষের দিকে এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে ইরাকে মার্কিন সেনাদের মনোবল দিন দিন কমছে৷ আর এটা তাদের হতাশ, উদাসীন ও ক্ষিপ্ত আচরণে ফুটে উঠতো৷ ইরাকের ঐ ব্যবসায়ী বন্দী আরো জানান, ইরাকের আসালাহিয়ে, এলরুসফা, আলতাসফিরাত, বাউঘা, আবুগারিব, উম্মে কাসর তালিল, কন্দুর ও আমারা কারাগারসহ ইরাকের অন্যান্য কারাগারে মার্কিন ও ইসরাইলি গোয়েন্দাদের পরিচালিত 'সন্ত্রাসী গড়ার প্রশিক্ষণ কোর্স' চালু করা হয়৷ ইরাক ছাড়াও আফগানিস্তানে এবং খুব সম্ভবতঃ গুয়ান্তানামোসহ অন্য অনেক কারাগারেও মার্কিনীদের পরিচালনায় সন্ত্রাস শেখার প্রশিক্ষণ ক্লাস চালু করা হয়েছে বলে আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি ৷ " আজ হোক কাল হোক, গোটা আমেরিকাই একটি বড় মানসিক হাসপাতালে পরিণত হবে৷ কারণ, মার্কিন সেনারা ইরাক ছাড়া বিশ্বের অন্য যে কোনো স্থানে থাকতে আগ্রহী৷ এমনকি তারা আফগানিস্তানকেও ইরাকের চেয়ে বেশী পছন্দ করে৷ শোয়েবিয়া হাসপাতাল থেকে আসা একজন মার্কিন সেনা জানায়, এই হাসপাতালটির অবস্থা কারাগারের চেয়েও শোচনীয়৷ কারণ, হাসপাতালটির সমস্ত ডাক্তার ও নার্স মানসিকভাবে অসুস্থ৷" ঐ ইরাকী বন্দী ব্যবসায়ী জানান, একজন ইরাকী বন্দী মার্কিন সেনার এ সংলাপটি শুনে আমাদের কাছে তা উদ্ধৃত করেছিল৷ রেডক্রসের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা, আমেরিকার যোগসাজশে এ শোচনীয় অবস্থার খবর চেপে রেখেছে ব'লে একদল বিস্মিত মার্কিন সেনা অভিমত প্রকাশ করে৷ এরপর ঐ ইরাকী বন্দী ব্যবসায়ী জানান, সন্ত্রাসী কাজের ব্যাপারে মার্কিন সেনা ও তাদের কোনো কোনো ইসরাইলি সহযোগীর কাছ থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তাকে আফ্রিকায় একটি সন্ত্রাসী মিশনে পাঠানো হয়৷ এ মিশনের সহযোগী হিসেবে তাকে ইয়েমেন ও লোহিত সাগর হয়ে ইরিত্রিয়ায় যেতে হয়েছিল৷ কখনো সামরিক বিমানে চড়ে, কখনো নৌকায় ক'রে জলপথে, কখনো ট্রাকের সহযোগী ড্রাইভার হিসেবে বিভিন্ন দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এ মিশনের মাধ্যমে সম্ভবতঃ কোনো সন্ত্রাসী দলের কাছে মার্কিন অস্ত্র সাহায্য পৌঁছে দেয়া হয়েছিল ৷ ট্রাকটির মূল ড্রাইভার ছিল তারই মতো এক হতভাগ্য ইরাকী বন্দী, ঐ বন্দীর স্ত্রী ও মা মার্কিন সেনাদের হাতেই বন্দী হয়েছিল৷ ইয়েমেনে ফিরে এসে তারা আবার সানা শহর হয়ে বাগদাদে ফিরে আসে৷ এরপর ঐ ইরাকী বন্দী ব্যবসায়ী জানান, মার্কিনীরা তাকে পরবর্তি সন্ত্রাসী মিশনে পাঠানোর জন্যে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়৷ মরুভূমি এলাকায়, মার্কিন,সেনাদের কড়া প্রহরায় এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়৷ ক্যামেরাযু্ক্ত রাইফেল, সাব মেশিনগান চালানোর প্রশিক্ষণও এর অন্তর্ভূক্ত ছিল৷ এর আগে একই স্থানে বিস্ফোরণ ঘটানোর পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়৷ এই শিক্ষকদের অধিকাংশই ছিলেন ইসরাইলি৷ তারা খুব ভালো আরবী বলতে পারতো৷ তাদের মধ্যে একজন মার্কিন মহিলা লেফটেন্যান্ট, নিজেকে প্রকাশ্যেই ইসরাইলি ব'লে ঘোষণা করতে ভালোবাসতেন৷ ঐ ইরাকী বন্দী ব্যবসায়ী জানান, এরপর আমাদেরকে দ্বিতীয় সন্ত্রাসী মিশনে পাঠানো হয়৷ তিনটি গাড়ী নিয়ে আমরা দুপুর পৌনে একটায় রওনা হই৷ আমাদের তিনটি গাড়ীর মধ্যে সব সময় ত্রিশ মিটার ব্যবধান ছিল৷ আধা ঘন্টা চলার পর একটি প্রবল বিস্ফোরণ ঘটে৷ ৩০ মিটার এগিয়ে থাকা আমাদের সামনের কারটি শুণ্যের ওপর ৫-৬ মিটার উঁচুতে উঠে পড়ে এবং এরপর আরো একটি বিস্ফোরণ ঘটে ঐ কারটির ভেতর থেকেই৷ ফলে কারটি আগুনে পুড়ে দলা পাকানো আবর্জনায় পরিণত হয়৷ আমাদের গাড়ীটি ধীরে চলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া কারটি থেকে বিশ মিটার দূরে থাকতেই আমরা থামতে সক্ষম হই৷ আমাদের গাড়ীর সহযোগী ড্রাইভার তার অয়ারলেসের মাধ্যমে হেড কোয়ার্টারে সব খবর পাঠাচ্ছিলেন৷ সেখান থেকে নির্দেশ এলো, দ্রুত ঐ এলাকা ত্যাগ কর৷ ধোঁয়া ও আগুনের কুন্ডলী পাশ কাটিয়ে গাড়ীসহ দ্রুত পালাতে গিয়ে আমাদের জীপ গাড়ীর একটি চাকা বিস্ফোরক বসানো একটি গর্তে পড়ে যায়৷ আমি গাড়ী থেকে কয়েক মিটার দূরে ছিটকে পড়ি৷ ঐ ইরাকী বন্দী বলছিলেন, আমাদের গাড়ীটি ২-৩ বার ডিগবাজী খেল৷ তৃতীয় গাড়ীটি আমাদের এ গাড়ীর সাথে ধাক্কা খেয়ে উল্টে গেলো৷ আমি যে গর্তে ছিটকে পড়ি তা ছিল কাদা ও পানিতে ভরা৷ কাঁধে মারাত্মক ব্যথা পেলেও আমি বেঁচে যাই৷ কাদার মধ্যে গলা পর্যন্ত ডুবে থাকায় আমি উঠে পালাতে পারছিলাম না৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানটি জনাকীর্ণ হয়ে গেলো৷ অনেক কষ্টে কাদা থেকে বের হয়ে আমি জনতার মধ্যে মিশে গেলাম৷ আমি ছাড়া আমাদের অভিযানের অন্য সব সহযোগী মারা যায়৷ আমার স্বদেশবাসীদের বলতে শুনলাম, এম্বুলেন্স ডাকো,...এরা ইরাকী নয়,এরা ইসরাইলি... ১১০ মিলিমিটার কামান... হাঁসপাতাল... কেউ বেঁচে নেই.., টেলিফোন...প্রভৃতি শব্দ৷ ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় আমি বৃষ্টির মধ্যে মূল সড়ক ছেড়ে একটা সংকীর্ণ পথ ধ'রে পালিয়ে যেতে থাকি৷ একটা বাগানে সন্ধ্যা না হওয়া পর্যন্ত লুকিয়ে থাকার পর, হাঁটতে হাঁটতে দজলা নদীর কাছে পৌঁছি৷ নদীর পানিতে নিজেকে ধুয়ে মুছে বিশ্রাম নেই৷ এরপর বাগদাদে ফিরতে চাইলাম৷ কিন্ত সেখানে তো আমার পরিবার আর বেঁচে নেই৷ তাই রওনা দিলাম আল কুতের দিকে৷ কিন্তু তার আগে ক্ষুধা ও ক্লান্তি মোচনের জন্যে আর একটা খেজুর বাগানে বিশ্রাম নিলাম৷ ঐ ইরাকী বন্দী বলছিলেন, বাগানের খেজুর খেয়ে ভাবলাম, কারাগারের নরক যন্ত্রণা থেকে তো মুক্তি পেলাম৷ কিন্তু এ আমি কি করলাম! আমার সহযোগী কারাবন্দীরা এখনওকি এভাবেই স্বদেশের অনেক মানুষকে হত্যা করছে? আবার ভাবতে লাগলাম আমার স্ত্রী ও সন্তানরা কি জীবীত? হে আল্লাহ! তুমি কতো নমরুদ, ফেরাউন, আলেঙ্ান্ডার, নীরো, নেপোলিয়ন ও হিটলারের মত আগ্রাসীকে ধ্বংস করেছ৷ ধ্বংস করেছো সেভিয়েত আগ্রাসীদেরকে যারা এক সময় পৃথিবীর অর্ধেক মানুষকে সাম্যের নামে শোষন করেছে৷ তারা মুখে বলতো সাম্যের কথা৷ কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের সম্পদ লুণ্ঠন৷ তাহলে হে আল্লাহ! তুমি কখন মার্কিন অপরাধী আগ্রাসীগুলোকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করবে? এই মার্কিন আগ্রাসীরা পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে এবং এখন মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদেরকে টার্গেট করেছে৷ জার্মান নাত্সীাদের সাথে মার্কিন সেনাদের কি কোনো পার্থক্য আছে? আমি এখন যখন এ কথাগুলো লিখছি আপনারা হয়তো বলবেন আমার নাম- ধাম বা পরিচয় কি? আমি শুধু এটাই বলবো যে, আমি মধ্যবয়সী একজন ইরাকী, অর্থনীতিতে এম.এ পাশ করেছি৷ সাদ্দাম সরকারের আমলে সরকারী চাকরী পাইনি ব'লে ব্যবসা শুরু করেছিলাম৷ আমার ছিল সুগৃহীনি ও সুন্দর তিন সন্তানের সাজানো সুখের সংসার৷ তারা সবাই নিহত হয়েছে৷ তাদের সাথে সাথে বলতে গেলে আমিও ধ্বংস হয়ে গেছি৷ মার্কিন সেনারা আমার নখ উপড়ে নিয়েছে, এবং আমাকে অন্ধ করে ফেলেছে৷ ওদের চাবুক আমার শরীরে যন্ত্রণাদায়ক ঘা সৃষ্টি করেছে এবং ওদের অত্যাচারের কারণে আমি খোঁড়া হয়ে গেছি৷ ঐ ইরাকী বন্দী আরো বলছিলেন, কিছু দিন আগেও আমি বাগদাদে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের কবরও খুঁজে পাইনি৷ যখন নিশ্চিত হলাম যে তারা মারা গেছে, তখন কুয়েতে এসে এক জাহাজের ক্রু হিসেবে চাকরী নিলাম৷ পৃথিবীতে আমার কেউ নেই৷ নেই স্ত্রী ৷ নেই সন্তান৷ আমার আত্মীয়রাও নিহত হয়েছে৷ দুঃখ আর বেদনা ছাড়া আমার এখন কি-ই বা আছে? এক সময় আমি একটা পাখীকেও খাঁচায় বন্দী রাখার বেদনা সহ্য করতে পারতাম না৷ এখন আমি খুব সহজেই মার্কিন আগ্রাসীদের হত্যা করতে পারবো অথবা তাদের ডুবিয়ে দিতে মোটেই বিচলিত হবো না৷ মার্কিন আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে যে সীমাহীন ঘৃণা ও জিঘাংসা আমার মনে জন্ম নিয়েছে তা আমাকে এরপর কোন কাজ করতে বাধ্য করবে তা আমি জানি না৷ #

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.