"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
জঞ্জাল
কোন এক প্রাসাদে এক সুন্দরী নারী বসবাস করতো। তার অর্থকড়ির অভাব ছিলনা। বাবা-মা, নিকট আত্মীয়-স্বজন বলতে তেমন কেউ ছিলনা। একজন মাস্টার মশাই তার সমস্ত খোঁজ খবর রাখতেন। তার সেবার জন্য বেশ কয়েকজন সেবাদাসী ছিল।
পৈতৃক সূত্রে সে যা সম্পদ পেয়েছিল তাতে তার থাকা-খাওয়া-পড়ার কোন অভাব ছিলনা। সে কখনও প্রাসাদের বাইরে বের হতোনা। মাস্টার মশাই ব্যতীত সেই প্রাসাদে পুরুষদের প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধই ছিল।
যেহেতু সে সুন্দরী আর উপর প্রচুর সম্পদের মালকিন তাই প্রতিদিন তার কাছে অসংখ্য প্রেমপত্র আর বিয়ের প্রস্তাব আসতো। কেউ কখনো সরাসরি দেখা করতে আসতো না, যা প্রস্তাব আসতো সবই পত্রের মাধ্যম।
বিয়ের প্রস্তাব ছাড়াও নানা ধরণের বিষয় থাকতো সেই সকল পত্রে, প্রমপত্রতো বটেই। মাঝে মাঝে মাস্টার মশাইকে ডেকে দু'একটা পত্র আগ্রহ নিয়ে পড়াতো। পত্রপাঠ শেষে সুন্দরী হাসতো। বুড়ো মাস্টার মশাই নিজেও চিঠির বিষয়বস্তু পড়ে লজ্জা পেতেন। সেসব পত্রের কোন উত্তর দেয়া হতোনা।
কেউ কোনদিন কোন চিঠির উত্তর পায়নি। পত্রগুলো সেই সুন্দরী কী করতো সেটা কেউ জানতোনা। তবে সেবাদাসীদের মুখে শোনা গেছে চিঠিগুলো নাকি সে একটা ঝুড়ির ভেতর ফেলে রাখতো। শীতকালে ঘর গরম করার কাজে চিঠিগুলো ব্যবহার করা হতো। চিঠিগুলো জ্বালানোর পর সে কেমন বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়তো।
একদিন দৈবক্রমে সেই প্রাসাদে একজন সুদর্শন পুরুষের প্রবেশ ঘটলো। সেই পুরুষের হাতে ছিল একটা চিঠি। চিঠিটি লিখেছেন স্বয়ং এই প্রাসাদের ভূতপূর্ব মালিক, এই সুন্দরীর বাবা। এই চিঠির কারণেই সে প্রাসাদে প্রবেশ করতে পেরেছে। এই সুন্দরীর অতিথি হতে পেরেছে।
সেই সুন্দরীর বাবা তাঁর নিজের হাতে লেখা চিঠিতে কোন এক ঘনিষ্ট বন্ধুকে অনুরোধ করে লিখেছেন তাঁর মৃত্যুর পর যেন তাঁর পুত্রের সাথে তাঁর একমাত্র কন্যার বিবাহের ব্যবস্থা করেন। মৃত বন্ধুর কথা রাখতে অনেক পীড়াপিড়ি করে সুদর্শন এই পুরুষের বাবা তাকে সুন্দরীর সাথে দেখা করতে পাঠিয়েছেন।
অবশেষে সুদর্শন পুরুষটির সাথে সুন্দরীর দেখা হলো। দীর্ঘকাল পরে দেখা। কথা হলো দুজনে।
চিঠির বিষয়বস্তু সুন্দরীকে বিনয়ের সাথে জানালো। পুরুষটি নিজেও জানে এই সুন্দরী অন্য কোন পুরুষের সাথে দেখা করেনা, কোন চিঠির জবাব দেয়না, প্রাসাদের বাহিরেও তেমন একটা বের হয়না। বের হলেও সে রাতের অন্ধকারে পর্দাটানা ঘোড়ার গাড়ীতে করে নদীর ধারে বা বনের ধারে বেড়িয়ে আসে। কেউ তা জানতেও পারেননা।
একেতো বাবার বন্ধুর ছেলে তার উপর পূর্ব পরিচিত, ছেলেবেলায় অল্পদিনের খেলার সাথী তাই তাকে যথেষ্ট খাতির যত্ন করা হলো।
একটু একটু লজ্জাও করছিল তার সাথে কথা বলতে। কারণ এই পুরুষই হয়তো একদিন তার বর হয়ে আসবে। দুজনের মধ্যে অনেক কথা হলো। আপনি থেকে তুমি হলো। ছোটবেলার কথা মনে পড়লো।
সুন্দরী মেয়েটির কখনোই পড়ায় মন ছিলনা। কখনো সে বই হাতে নিতে চাইতোনা। এই নিয়ে বাবার কাছে অনেক বকা খেয়েছে। বাবা অভিমান করেছে। আজ সে অনেক বড় হয়েছে।
বহু বছর পর দেখা হলো তাদের। একরকম ভুলেই গেছিল তার কথা। সুন্দরী কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলো ছেলেটি আজ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। যথেষ্ট মার্জিত। মনে মনে নিজেকে নিয়ে একটা কষ্ট অনুভব করলো।
এক পর্যায়ে সেই সুদর্শন পুরুষটি সুন্দরীকে জিজ্ঞেস করলো-
তোমার কাছে ভালবাসা কী?
সুন্দরী উত্তরে বললো-
“ভালবাসা” আমার কাছে নেহায়েত জঞ্জাল। আমি সবসময় তা ঝুড়িতে ফেলে দেই।
পুরুষটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে-
তা হবে কেন? এটা কেমন কথা!
সুন্দরী অকপটে বলে-
প্রতিদিন কোন না কোন পুরুষ আমাকে ভালবেসে প্রেম পত্র দেয়, আমি সেগুলো জঞ্জাল ভেবে না পড়েই ঝুড়িতে ফেলে দেই। আসলে পুরুষগুলোর কী দোষ! ওরাতো জানেনা, আমি মোটেও লেখাপড়া জানিনা। ওরা কত ভালবেসে আমাকে প্রেমপত্র দেয়, অথচ আমার কাছে সেসব শুধুই জঞ্জাল মনে হয়।
ওরা ভালবেসে আমাকে যা দেয় আমি তা জঞ্জাল ভেবেই ঝুড়িতে ফেলে দেই। সবাই আমার রূপের কাঙ্গাল, সম্পদের লোভী।
পুরুষটা তখন বলে ওঠে-
তাহলে তোমার কাছেতো ভালবাসার কোন মূল্য নেই। তুমিতো জানইনা ভালবাসা কী? আমারতো মনে হয় তোমার কোন প্রেমিক দরকার নেই, তোমার কোন সঙ্গী দরকার নেই। তোমারতো একজন ভাল স্যুইপার হলেই চলবে।
যে তোমার প্রতিনিয়ত পাওয়া জঞ্জালগুলো ঝুড়ি থেকে নিয়মিত পরিষ্কার করবে। তবে মনের জঞ্জাল পরিস্কার করার মতো কোন স্যুইপার পাবে কী? এখন দেখছি তোমার জীবনে আমার কোন প্রয়োজন নেই। একদিন আমাকেও জঞ্জাল মনে হতে পারে। আজ তাহলে আমি আসি।
একথা বলেই সেই সুদর্শন পুরুষটি হন হন করে হেঁটে সেই প্রাসাদ থেকে বের হয়ে এলো।
সুনদরী পেছন থেকে ডাকবে কী ডাকবেনা ভেবে চুপ করে রইলো। সুন্দরী মুখ ঘুরিয়ে তাকালো সেই জঞ্জালের ঝুড়ির দিকে। যেখানে হাজারো ভালবাসা অবহেলায় পড়ে আছে।
সুন্দরী তার এক সেবাদাসীকে নির্দেশ দিল, “মাষ্টার মশাইকে বলবি কাল থেকে তিনি যেন আমাকে পড়াতে আসেন”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।