দশ বছর বয়সী ইমা গ্রীষ্মের ছুটিতে দাদির কাছে বেড়াতে এসেছে। বাড়িতে এসেই সে জানতে পারে তার মৃত চাচার কিছু ইচ্ছা পূরণকারী ঘোড়া মিসিসিপি ষড়যন্ত্রের শিকার। গ্রামের সবার কাছে কুমির হিসেবে পরিচিত ভয়ংকর ও বদমাইশ লোকটি মিসিসিপিকে কসাইয়ের কাছে পাঠাচ্ছে। এক সময় ইমা তার দাদি ও গ্রামের পশু চিকিৎসকের সহায়তায় ভয়ংকর কুমিরের কাছ থেকে মিসিসিপিকে উদ্ধার করে আসে। এই চমৎকার কাহিনী নিয়ে নির্মিত জার্মান চলচ্চিত্র পরিচালক ডেটলেভ বুক নির্মিত হ্যান্ডস অব মিসিসিপি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব।
উৎসবে বাংলাদেশের ৩৫টি চলচ্চিত্রের সঙ্গে ৪০টি দেশের মোট ১৫৬টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতা বিভাগে বাংলাদেশের শিশুদের নির্মিত ১৫টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এ চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ৫টি চলচ্চিত্রকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। আর এ ছবিগুলোর বিচারের জন্য ৫ জন শিশুকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে জুরি বোর্ড।
প্রদর্শনীর প্রথম দিনেই প্রদর্শিত হলো শিশু চলচ্চিত্র নির্মাতা অর্নব চাকমার নির্মিত চলচ্চিত্র আমরাও পারি।
পার্বত্য এলাকার পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠির শিক্ষা ক্ষেত্রে অনগ্রসরতা, ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে ওঠা ও শিক্ষার মর্যাদা বুঝতে পারার দৃশ্য উঠে এসেছে অর্নবের চলচ্চিত্রে। এতে দুর্গম এলাকায় স্বল্প উপকরণ নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ভীষণ কষ্টের ও সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে চমৎকারভাবে।
সময়ের বিবর্তন ও প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কারে আমাদের সবার জীবন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। একে অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তার ও বড় হওয়ার তাড়না পরিবর্তন করে দিচ্ছে মানুষ, প্রকৃতি ও আমাদের চিরচেনা এই পৃথিবী। আমাদের এই পারিবার্শ্বিক বিবর্তন।
সবকিছুর আলাদা হয়ে যাওয়া। সৃষ্টির পরিবর্তে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শিশু মু. আবু সালেহকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। আর এই প্রশ্ন নিয়ে সে তৈরি করেছে চলচ্চিত্র আওয়ার ফিউচার ওয়ার্ল্ড।
আবার আমাদের মহাবিশ্বের সবকিছু আবার নতুনভাবে শুরু করলে অথবা পৃথিবীর সবকিছুকে যদি থামিয়ে দেয়া যেতো তবে কেমন হতো। এমনই প্রশ্নের জবাব খোজার জন্য বিগ ব্যাঙ নিয়ে যে বিজ্ঞানী গবেষণা করছে তাকে হত্যার জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়েছে খুনীকে।
এমনই রহস্যপূর্ণ ও চমৎকার কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে ফাহিম হাসিন শাহান। তার চলচ্চিত্রের নাম দি টুয়েলভথ আওয়ার। শিশু অধিকারের এক অন্যতম অধিকার হলো শিশুদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র জোড় করে তার উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে পারবে না। কেননা অন্যায়ভাবে বা জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের পথকে বাধাগ্রস্ত করে।
শিশুরা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের অধিকার বা মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবে এরকমই ভাবনার চিত্রিক প্রকাশ ঘটেছে শিশু চলচ্চিত্র নির্মাতা ইবতেশাম শামীম চৌধুরীর ইচ্ছে ঘুড়ি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।
উৎসবের প্রথম দিনেই উৎসবের মূল ভেন্যু পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে বসেছিল শিশুদের মিলন মেলা। নানান বয়সের, নানা রঙের রঙিন কাপড় পরে বাবা-মায়ের হাত ধরে চলচ্চিত্র দেখতে আসে শিশুরা। চলচ্চিত্র দেখা ও বিভিন্ন ধরনের আলোচনায় অংশ নেয়া নিয়ে শিশুদের আগ্রহ ছিল অভাবনীয়। বাংলাদেশের মতো দেশের শিশুরা যে অনেক কিছু করার বাসনা নিয়ে প্রতিনিয়ত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে উৎসবে তাদের উপস্থিতি ছিল তার বড় একটি প্রমাণ।
এদিনে উৎসবে এসে যোগ দেয় ঢাকার ছয়টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। উৎসবে অংশ নেয়া সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুলের ছাত্র রিফাত ও ফাহিম উৎসবের ব্যাপারে উচ্ছাস প্রকাশ করে বলে, উৎসবের আয়োজন খুবই সুন্দর হয়েছে। তবে উৎসবে হলিউডি মুভির সংখ্যা অনেক কম বলে তাদের একটা আক্ষেপ রয়ে গেছে। সামনের উৎসবে আরো হলিউডের ছবি দেখানো হবে বলে আশা প্রকাশ করে তারা।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে প্রদর্শিত হয় উৎসব আয়োজক কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ হাসান নির্মিত ও শিশু একাডেমি প্রযোজিত স্বল্প দৈর্ঘ চলচ্চিত্র ‘পুতুল বিয়ে’।
চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র চার বছরের শিশু শিমু। যে পাশের বাড়ির বান্ধবীর সঙ্গে পুতুল খেলতে খেলতে গড়ে তোলে পুতুল পরিবার। এক সময় সে তার বান্ধবীর টুসির ছেলে পুতুলের সঙ্গে তার মেয়ে পুতুলের বিয়ে ঠিক করে। বিশাল আয়োজনে পুতুলের বিয়ে হয়। কিন্তু কনে উঠিয়ে দেয়ার সময় শিমুর মাঝে মাতৃত্বের মমত্ব ও ভালোবাসা বোধ জেগে ওঠে।
ফলে শিমুর মেয়ে পুতুলের বরের বাড়ি যাওয়া আর হয় না। ফলে বিয়েও ভেঙ্গে যায়।
এ সম্পর্কে নির্মাতা হাসানকে জিজ্ঞাসা করলে সে ভবিষ্যতে শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণ, বিকাশ ও দেশব্যাপী শিশুদের চলচ্চিত্র উৎসবে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করে।
চলচ্চিত্র প্রদর্শন ছাড়াও উৎসবে দিনব্যাপী চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা, শিশু চলচ্চিত্রের উপর দিনব্যাপী সেমিনার, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপর অন্তরঙ্গ আড্ডার আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালায় চলচ্চিত্রের ভাষা, টেকনোলজি, ভালো ও খারাপ মুভির বৈশিষ্ট এবং শিক্ষার উপকরণ হিসেবে চলচ্চিত্রের প্রভাবের উপরে শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করেন বক্তারা।
এছাড়াও ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার হলে প্যালেস্টাইনি শিশুদের উপর ইসরাইলের নির্মমতার উপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র লিটল পিস অফ মাইন এর বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।