আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নূরুল ইসলামের জীবনের বর্ণাঢ্য যতো দিক

অজানাকে জানতে ছুটছি অবিরাম...!

পর্যবেক্ষক গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ছিলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। সর্বদা হাস্যজ্জ্বল এ মহান ব্যক্তির অবাধ পদচারণা ছিল রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলা ও সংস্কৃতি অঙ্গনেও। এ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারবিরোধী ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি ছিলেন নেতৃত্বে। আজীবন অসা¤প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী নূরুল ইসলাম একাত্তরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। আমৃত্যু তিনি মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করে গেছেন।

১৯৪১ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার চাটখিলের নোয়াখোলা গ্রামে জন্মেছিলেন এ সংগ্রামী মানুষটি। তার বাবা মরহুম আবদুল হাকিম মাস্টার ও মা মরহুমা ফাতিমা হাকিম। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা ছিলেন। রহস্যজনক অগ্নিকা-ের ঘটনায় একমাত্র ছেলে তমোহর ইসলাম মঙ্গলবার রাতেই মারা যান। নুরুল ইসলামের স্ত্রী রুবি রহমান একাধারে একজন কবি ও শিক্ষাবিদ।

খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, কুলি, মজুর আর শ্রমিকরা ছিলেন তার আপনজন। যেখানেই দেখেছেন অন্যায় আর শ্রমিক শোষণ, সেখানেই ছুটে গেছেন তিনি। যখনই বাঙালি সংস্কৃতির ওপর সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর হিংস্র থাবা এসেছে, তখনই তিনি একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে নেমেছেন রাজপথে। ১৯৫২ সালে স্কুলের ছাত্র হিসেবে তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভকারী নুরুল ইসলাম ছাত্র জীবন থেকেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (সাবেক ইকবাল হল) ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সহÑসভাপতি (ভিপি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সহÑসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাও ছিলেন। ছাত্রদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে তিনি ১৯৬৪ সালে শেখ ফজলুল হক মনি, আবদুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন ও আসমত আলী সিকদারের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কৃত হন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক আইয়ূব আর ইয়াহিয়াবিরোধী আন্দোলনেও একজন পুরোধা ছিলেন। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শ্রমিক নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি।

একাধারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশন এবং হাজারীবাগ ট্যানারি শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। আর পুরো তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের সংগঠিত করে তিনি গড়ে তোলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের শক্তিশালী ঘাঁটি। এছাড়াও তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৯৯২ সালের জাতীয় শ্রমিক আইন কমিশনের সদস্য, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়নের সহ-সভাপতি এবং সার্ক রিজিওনাল ট্রেড ইউনিয়ন কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি এবং ১৪ দলীয় জোটের ঢাকা মহানগর সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি, বিশ্ব সামাজিক ফোরাম- বাংলাদেশের আহ্বায়ক, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ছিলেন। আসন্ন ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-১ আসনের (চাটখিল-সোনাইমুড়ি) ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন।

এর আগে তিনি ১৯৭৩ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এবং ১৯৯১ সালে সিপিবি থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, সুইডেন, সুইটজারল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, সিরিয়া, তুরস্ক, জার্মানি, রোমানিয়া, কিউবা, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মিশর, অস্ট্রেলিয়া, লিবিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া ও পাকিস্তান সফর করেছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.