খোকা বলল: গন্তব্য ঠিক না করেই মানুষ দ্রুতগামী রেলে চাপে। পরে হতাস হয়ে আবার অন্য দিকে ছোটে। এভাবে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। এরকম পন্ডশ্রমের কোন মানে হয়! বলে খোকা থামল।
আমরা যে কুয়োটি খুজে পেলাম, সেটি কোন মরুভূমির কুয়োর মত নয়।
মরূভূমির কুয়োগুলো খুব সাধাসিধে। বালির ভেতর একটি গর্ত। এটি গ্রামের কুয়োর মত। কিন্তু এখানেতো কোন গ্রাম থাকার কথা নয়। স্বপ্ন-টপ্ন দেখছি নাতো!
আশ্চর্য্য! খোকাকে বললাম: সব কিছুই ঠিক আছে।
বাল্তিতে দড়ি বাধা, দড়িটি কপিকলের সঙ্গে লাগানো।
খোকা হাসতে হাসতে দড়িটা ধরে একটু টেনে আবার ছেড়ে দিল। পুরোনো কুয়োটা মর মর শব্দে বেজে উঠল। মনে হল কোয়োটা আড়মোরা দিয়ে দীর্ঘ নিদ্রা ভেঙ্গে যেগে উঠল।
খোকা বলল: শুনছ! আমরা কুয়োটিকে জাগিয়ে তুলেছি।
ও গান গাইছে।
আমি চাচ্ছিলাম না, খোকা কষ্ট করে জল ভর্তি বালতি টেনে তুলুক। তাই বললাম:
আমাকে দাও। তুমি জল ভর্তি বালতি টেনে তুলতে পারবে না।
ধীরে ধীরে জল ভরা বালতি কুয়োর পাশে রাখলাম।
তখনো পুরোনো কপিকলের শব্দটা রাগিনীর মূর্ছনার মত কানে বাঁজছে। কুয়োর জলটা কাঁপছে, তার সাথে কুয়োর জলে সূর্য্যের প্রতিচ্ছবিটিও।
এই জলেই কেবল আমার তৃষ্ণা মিটবে। আমাকে পান করতে দাও। খোকার কথা শুনে বুঝতে পারলাম সে কি খুঁজেছে।
জলের বাল্তিটা খোকার ঠোটে ধরলাম। ও চোখ বন্ধ করে জল পান করল। যেন কোন উৎসব। যে কোন পাণীয়ের চেয়ে এ জলের মর্যাদা অনেক বেশী। যেন মঙ্গল গ্রহ থেকে নেমেছে এর ধারা।
তারার আলোয় উজ্জল, কপিকলের রাগিনীতে মুগ্ধ, আমার বাহুর সঞ্চালনে উত্তোলিত। এ জল কোন উপহারের মত হৃদয় পূর্ণ করে। আমি ছোট বেলায় বড়দিনের উপহার গুলি পেয়ে, এমনই তৃপ্তির বিমূর্ত হাসিতে উজ্জল হয়ে উঠতাম।
তোমাদের পৃথিবীতে মানুষ পাঁচ হাজার গোলাপ ফোটায় একটি মাত্র বাগানে। অথচ যা খোজে সে বাগানে তারা তা পায় না।
তা পায় না। আমি জবাব দিচ্ছিলাম...
অথচ একটি মাত্র ফুলে অথবা এতটুকু জলেই তা পাওয়া সম্ভব।
আমি বললাম: তোমার কথাই ঠিক।
খোকা বলল: কিন্তু চক্ষু অন্ধ। মানুষকে হৃদয় দিয়ে খুঁজতে হয়।
প্রণ ভরে জল পান করে তৃপ্ত চিত্তে বুক ভরে নিস্বাস নিলাম। দিনের আলোয় বালির রংটা মধুর রং-এর মত মনে হয়। দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। দুঃখের কোন কারন খুঁজে পেলাম না।
তোমার প্রতিজ্ঞা তোমাকে রাখতে হবে।
আমার পাশে বসতে বসতে খোকা মিষ্টি সুরে বলল।
কিসের প্রতিজ্ঞা? আমি প্রশ্ন করলাম।
ভেড়াটার মুখে ঠুলি একে দেবে বলে ছিলে না! তুমিতো জান আমার ফুলটার দেখাশুনা আমাকেই করতে হবে।
পকেট থেকে ছবিটা বের করলাম। সেটা দেখে হাসতে হাসতে খোকা বলল:
তোমার বটগাছ গুলি অনেকটা ফুলকপির মত দেখতে।
ওহ্! বট গাছের ছবিটা নিয়ে আমি কত গর্ব করতাম।
তোমার শেয়াল পন্ডিত... তার কান দুটো...? কানতো নয় যেন শিং! কত্তো লম্বা!
খোকা আবার হেসে উঠল।
তুমি মোটেই সুবিচারক নও মশাই। জীবনে আমি এর আগে শুধু অজগরের ভেতর আর বাহিরের ছবি এঁকেছি। আমার ছবি ভাল হবে কি করে?
সেটা কোন ব্যাপার নয়।
ছোটরা খুব ভাল করেই তোমার ছবি বুঝতে পারবে।
একটা ঠুলি এঁকে দুরু দুরু বক্ষে সেটা খোকার হাতে দিয়ে বললাম:
তোমার এমন কোন মতলব আছে, যা আমি জানিনা?
কিন্তু কোন জবাব না দিয়ে খোকা বলল:
তুমি তো জানই এক বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিলাম। কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে বলল:
এই জায়গাটার আসে পাশেই কোথাও প্রথম পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করি। বলতে বলতে সে লাল হয়ে যাচ্ছিল।
আশ্চর্য্য একটা বেদনায় মনটা আবার ভারাক্রান্ত হল।
কেন বুঝলামনা। দিধা এল মনে।
তবে পথ ভূলে তুমি এখানে আসে নাই! আট দিন আগে যখন আমার সাথে তোমার প্রথম দেখা, জনমানবের কোলাহল বিহীন এই মরুর বুকে। যেখানে পৃথিবীর বুকে তুমি প্রথম পা রেখেছে, সেখানেই আবার ফিরে এসেছো?
খোকার মুখটা আরো লাল হল।
আমি ভেবে চিন্তে ধীরে সুস্থে বললাম:
আমাদের প্রথম দেখা যেদিন হল, সেটা পৃথিবীতে তোমার এক বছর পূর্তির দিন ছিল?
খোকার মুখটা আরো রাঙ্গা হল।
ও কখনই কোন প্রশ্নের উত্তর দিত না। কিন্তু মুখ লাল হওয়া মানেইতো উত্তর হল হ্যাঁ, তাই না?
ওহ্! আমার ভয় করছে! ভীত কন্ঠে বললাম আমি।
কিন্তু এবার খোকা উত্তর দিল।
তোমার হাতে অনেক কাজ। তোমার উড়োজাহাজটি মেরামত করতে হবে।
এখন তুমি যাও। এখানে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। কাল সন্ধ্যায় আবার এসো।
মনটা সান্ত হল না। শেয়ালটির কথা মনে পড়ল: কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব হলে, বিরহের বিলাপ অবধারিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।